সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৪৭

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : কাগজ পত্র সব গুছিয়ে নিয়ে উঠে পরলাম। বিছানায় শুতে যেতে কেন জানি ইচ্ছে করে না। রাত হলে আমার যেন গায় জ্বর আসে। তবু রাত আসে, রাত হয়, যুগ যুগ ধরে এমনিভাবে পৃথিবীর অমোঘ নিয়ম চলবে। তবু শুয়ে থাকার জন্য গেলাম। ছোট্ট গ্লাসে সযতেœ জল ঢাকা আছে। কখন কোন সময় উমা রেখে যায়—-ধন্যি মেয়ে কি পায় আমার কাছে ? তবু সে আমার জন্য যতটুকু করে বা সুশান্ত আমার সুখে-দুঃখে আমার পাশে দাঁড়িয়ে যতটুকু করে গেছে, সে ঋণ আমি জীবনেও শোধ করতে পারব না। উমা, ও নামটা ওর কে রেখেছিল জানি না। সত্যি যে উমা, তেমনি ধৈর্য্য, ত্যাগ-তিতিক্ষার অমরাবতী।
ডোরা আর কোন করেনি। হয়তঃ করবেও না। উমাকে দেখে ওর তীব্র জ্বালা হয়েছে। ও মনে করেছিল আমার হৃদয় জুড়ে তার একার আসন প্রতিষ্ঠিত থাকবে, সেখানে আমার বাড়ীতে উমার মত একজন বিধবার আশ্রয় দেখে সে ভ্রুকুটি করেছে। আশ্চর্য্য মেয়েরা মেয়েদের বড় একজন শত্রু। তার আসন আমার হৃদয়ে যে এখন আছে, বা থাকবে বা কোনদিন তা মলিন হতে মলিনতর হবে না। কিন্তু উমাকে এখান থেকে সরিয়ে নয়। উমা আছে থাকবে, সে আমার ছোট বোন।
নানা কথা, নানা চিন্তায় মন ব্যকুল হতে ব্যকুল হয়ে একটু যেন তন্দ্রা এল। দেখলাম ক্যামেলিয়া আমায় ডাকছে অনেক দূর থেকে। আমি বললাম, কাছে এস। আমাকে বলছে প্রশান্ত আমি সুশান্তর নামে একটা হাসপাতাল করতে চাই। আমি বললাম, তা-ত উত্তম কথা। তারপর কোন অদৃশ্য লোকে ক্যামেলিয়া মিলিয়ে গেল। আমার তন্দ্রা ছুটে গেল। আমি ব্যস্ত হয়ে উঠে বসলাম। কি দেখলাম, যেন মনে খুব-দুঃখ হতে লাগল। কোথায় ক্যামেলিয়া ? বোম্বের সুখ্যাত জায়গায় তার স্বামী প্রাকটিস করে। তারও কোন সন্তান-সন্ততি নেই। মস্ত বড় ব্রেইন স্পেশালিষ্ট, প্রচুর টাকার মালিক। যশ-মান, ধন সবই আছে। বেচারা এসেছিল ফ্লোরিডায় ছুটি কাটানোর জন্য। ভাগ্য বিরূপ, ক্যামেলিয়া সমুদ্রে সাঁতার কাটতে গিয়ে ডুবে যায় ¯্রােতের মাঝে। সুশান্ত তুলতে গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে উঠে আর সুস্থ্য হয়নি। একেই বলে নিয়তি। আজ আর সুশান্ত নেই, ক্যামেলিয়া আছে। তার সুখ-শান্তি-ঐশ্বর্য্য-বৈভব নিয়ে। সুশান্তর মত একজন সাধারণ লোক হয়ত ক্যামেলিয়ার টাকা-পয়সা-মান প্রতিপত্তি যশের মধ্যে মুছে গেছে।
রাত তখন ৩টা বাজে। বড় ঘড়িটায় ঢং ঢং করে ৩টার ঘণ্টা পরল। আমি উঠে ড্রইং রুমে বসে বসে ঘড়িটার পানে চেয়ে থাকলাম। এই ঘড়িটার আজ অনেক বয়স হতে চলল। বন্ধুর মত, সাথীর মত, প্রিয়ার মত, আমার কাছে আছে। অহরহ আমার কাছে কর্মে। আমায় সময়ের মূল্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কোন চাওয়া নেই, পাওয়া নেই। আশা নেই, আকাঙ্খা নেই। একে বলে খাটি ভালবাসা। লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ এর কেউ কাকে কাছে পেয়ে ভোগ করেনি। মজনু বনে বনে ঘুরে বনের হরিণকে বলেছে প্রিয়া, গাছের লতাকে বলছে প্রিয়া, সে ভালবাসার অমর কাহিনী আজও ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। কবি কালিদাসের মেঘদূত সে এক ভাগ্য হত যক্ষের বিরহ বার্তার অমর কাব্য মূর্ত হয়ে আছে।

(চলবে—————-)

 

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।