সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৫২

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : হেমন্তের জ্বরটা ডাক্তারের ঔষধের গুনে আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। সন্ধ্যার দিকে হেমন্ত একটু এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখছে। এটা ঔটা খাবার কথা বলছে। উমা খুশী মনে সবকিছু তামিল করছে। হেমন্তকে কয়টা বালিশ দিয়ে উচু করে বসিয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যা বেলা নাকি শুয়ে থাকতে নেই। অব্যশ আমার মা দিদিমাদের মুখে শুনেছি একথা। যদিও আজকাল ওই বিংশ শতাব্দির যুদে এসব কথা কেউ বিশ্বাস করে না।
হেমন্ত বলল, প্রশান্ত দা; কার এত চিঠির মহড়া করছেন। আমি বললাম, নাতনী-বান্ধবী-বন্ধুর। আপনার বান্ধবী এখনও চিঠি লেখে ? এ বয়সেও আপনাদের সেরকম মন ও মানসিকতা আছে ? আমি বললাম, ভাই থাকবে না কেন ? মানুষের মন কোনদিনও মরে যায় না, বা বুড়ো হয় না। হেমন্ত একটু মৃদু হাসল, ওর যৌবন দৃপ্ত শরীরটা বেশ সুগোল-সুঠাম। ঠোটের উপর ক্ষীণ গোফের রেখা বেশ বলিষ্ঠ ও পুরু। বড় বড় ভাসা ভাসা দুটু চোখ, অনাদী-অনন্তকালের কথা কয়। ও মনে করে ওদের এখন রোমান্সের বয়স, ভালবাসার কথা মনের কোনে আল্পনা আঁকে। আর আমাদের মত বয়সের লোকের রোমান্স করতে শুনলে ওদের হাসি পায়, সেটা স্বাভাবিক। আর যে বিয়ে করল না, রোমান্স করতে গিয়েও ভেঙ্গে গেল, মান-মন্দিরের মানস প্রতিমা গড়তে গিয়েও স্বপ্ন সৌধ এক নিমিষে যে ধুলিসাৎ হয়ে গেল।
আজ ডোরাকে আমি দায়ী করি। ডোরা, ডোরা সে পারত। সুন্দরী-সুশিক্ষিত-বিদুশিনী, সাহিত্য পারদর্শিনী। সে আমাকে ভালবাসার সাগরে ডুবিয়ে রাখতে। কিন্তু ডোরা সে সাধনায় নিমজ্জিত ছিল না। সে যে কিসের সাধনা করেছে, আমি জানি না। তবে এটুকু দেখি আমার থেকে ডোরা আজ অনেক অনেক দূরে সরে গেছে। আমি অনেক দূরে পিছিয়ে গেছি, আজ আর ভালবাসি ভালবাসি বলে কাঁদলে কোন প্রতিধ্বনি হয় না। আজ এসব কথা আর নিষ্ফল ক্রন্দন করলে কোন লাভ হবে না।
হেমন্ত অনেক সুস্থ হয়ে চলাফেরা শুরু করেছে। ওর বাসায় ফিরে যেতে চায়। আমি বললাম, হেমন্ত আর দু-চার দিন থেকে যাও। ও লজ্জা পায়। উমার আদর-যতেœ-¯েœহে ও শীঘ্রই আরোগ্যের পথে যাচ্ছে। যতই হেমন্ত সুস্থ হচ্ছে, ততই ও লজ্জা বোধ করে। এখানে দেরী করতে। একদিন হেমন্ত বলল, প্রশান্ত দা; আমিত অনেক সুস্থ হয়েছি, এখন আমার কোয়ার্টারে যাই। আমি বললাম, তোমার মাসিমাকে জিজ্ঞাসা কর, সে বললে যাও। হেমন্ত তখন ড্রইং রুমে বসেছিল, উমা যেন কি কাজে ড্রইং রুমে ঢুকল। হেমন্ত বলল, মাসিমা আমি আমার এপার্টমেন্টে যাই ? উমা কতক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, এখনই যাবে হেমন্ত ? আরও একটু সুস্থ হও, তখন যেও। হেমন্ত বলল আমার ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। আপনার উপর দিয়ে ভীষণ চাপ পরে যাচ্ছে, আর তা ছাড়া প্রশান্ত দা’র অনেক খাটুনী বেড়েছে। উমা হেসে বলল, না না এ আর বেশী তেমন কি খাটুনী। তুমি ভাল হয়ে সুস্থ হয়ে তোমার জায়গায় তুমি ফিরে যাও। এই আমাদের কামনা। হেমন্ত চুপ করে থেকে নিজের হাত খানা নিজের হাতের উপর রেখে হাতের রেখা পর্যবেক্ষণ করছিল। আমি বললাম, হেমন্ত তোমাকে আমি আমার নিজের ছোট ভাইয়ের মত দেখি, তুমি এত লজ্জা সংকোচ সংশয় বোধ কর কেন ? আমাদের নিজের বলে ভাবতে পার না ? হেমন্ত মাথা নীচু করে কি যেন ভাবছিল, কিছু বলল না।

(চলবে———)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।