সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৪২

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : আমিও প্রার্থণা জানালাম। আমিও সকলের দেখাদেখি ভগবানের কাছে আত্মহুতি দিলাম। আমি কার কার জন্য বলেছিলাম, আমার সংসার নেই, স্ত্রী নেই, গভীর ভালবাসার বন্ধনে বাঁধবার কেউ নেই। তবু আমি যাদের ভালবাসি বা আমার নিজের জন্য বললাম। আমার যেন সেখান থেকে ফিরে আসতে মন একে বারেই চাইছিলনা। তবুও অনেকক্ষণ এখানে ওখানে জোসেফের অনেক ছবি ঘুরে ঘুরে দেখলাম। হাজার মোমবাতির আলোয়, শত শত ফ্যাশনের ঝালুর বাতির অপরূপ অপুর্ব মনোহর, রকমারি জিনিষের প্রাচুর্য্যে গীর্জ্জার সৌন্দর্য্য ঝলমল ঝলমল করছে। এসব মহামানব দেবদূতদের পূণ্যের আলোয় আমাদের চোখে ধা-ধা লেগে যায়। আমরা কোন দিনই এত পূণ্য করে লক্ষ্য লক্ষ্য জনগণের হৃদয় কোড়ে নিতে পারব না। আমরা সামান্য কিছু করে মনে করি অনেক কিছু করে দেখলাম। দিগি¦জয় করে এসেছি, আর যখন এসব দেবদূতদের কাছে দাঁড়িয়ে তাদের ত্যাগ তিতিক্ষা, সহ্য, ধৈর্য্য, কষ্ট, ক্ষমা দেখি। তখন মনে হয় বিশাল সমুদ্রের কূলে দাঁড়িয়ে একখন্ড পাথরের নুড়ি কুড়াচ্ছি। এতবড় গীর্জ্জা মন্ট্রিলে আর নেই। অনেক দূর দূরান্ত থেকে (এমেরিকা) টরেন্টো, ভার্জিনিয়া দূর দুরের লোক এসে এখানে মানত করে যায়। অনেকের আশা নাকি পূর্ণও হয়। বিশ্বাসে মিলায় হরি তর্কে বহুদুর। অনেক কথা, অনেক ভাবনা, অনেক আশা ও নিরাশার কথা ভেবে বাড়ীর পথে রওয়ানা দিলাম।
পৃথিবীতে কেউই অমর হয়ে আসেনি। সকলকেই এ পৃথিবীর মায়া মমতা কাটিয়ে ওপারে চলে যেতে হবে। তই যে যেমন সৎকাজ করে যেতে পারে, সে চেষ্টাই চালিয়ে যায়। পর উপকার পরের দুখে দুঃখী হওয়া মানুষের একটা মানবতা। নিজের ভোগ লালসা, কাম-ক্রোধ দমন করাও একটা মনুষত্যের বড় পরিচয়। যে মহামানব, সে সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক উর্ধে। তার ভিতর সব সময় ভগবান আছেন। সে ভগবানের দেখা পায়। আমরা পাপী-তাপী সাধারণ মানুষ। পরনিন্দা-পরচর্চা, পরের ক্ষতি ছাড়া আমরা ভাল চিন্তা করতে জানি না। জানিনা বলেই আমাদের থেকে অনেক অনেক ক্রোশ দুরে চলে যায়।
আমি খুব আস্তে আস্তে ড্রাইভ করে কোর্দ্দেনিস থেকে শালভাদরে চলে এলাম। সারা পথে যীশুর কথা, যীশুর অমর বাণী আমার কানে ধ্বনিত হচ্ছিল। মনে হয় সব ছেড়ে ছুরে দিয়ে ও সব মহা তাপসদের বাণী প্রচার করে বেড়াই। মধ্যরাতে যখন আমার তন্দ্রা ছুটে যায়, নিশুতি রাত ধ্যানমগ্ন বসুন্ধরা নিরব নিজুম হয়ে গাছপালা, আকাশ বাতাশ, চাঁদ-তারা ঐ একখানা অনন্ত সপ্তর্ষিও বিশ্বপ্রভুর আরাধনায় মত্ত হয়ে থাকে। আমার জ্ঞান হওয়া অবধি এই মধ্যরাতের সাথে আমার নিগুড় সম্পর্ক। আমার জীবনের এতটি বছর আমি কোনদিন গভীর ঘুমে মগ্ন থাকিনি। সুস্থ্য অবস্থায়, কিংবা অসুস্থ অবস্থায় মধ্যরাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যাবেই। কোন রূপ কথার রূপপুরী থেকে বা ঠাকুর মার ঝোলা থেকে বা অচিন দেশের রাজকুমার বা কন্য কুমারী থেকে আমার বানানো কথা নয়। সত্যি, সত্যি, সত্যি। তোমার বিশ্বেস করবা না এইত ? বলবে মানুষ আবার এতকাল ঘুমনা গিয়ে কি করে বেঁচে থাকে। তবু আমি লিখেছি মধ্যরাত। নিস্তব্ধ মহামনি ঋষির অপরূপ নিরব নিঝুম নিরবাক পৃথিবীর মধ্য রাতের তাপস ঝরা ধ্যানমগ্ন পৃথিবীর বিচিত্র কথা। এই বিচিত্র পৃথিবীর বৈচিত্রময় মানুষের জীবনের দু-চারটি সাধারণ কথা। সুখ-দুঃখ, অভাব-অভিযোগ, প্রেম-ভালবাসা, রোমাঞ্চ এ নিয়েই মানুষের হাসি ও কান্নার জীবন।

(চলবে——)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।