সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-১৩৬

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : উমা এসে বসল কাছে। এ কথা, সে কথা বলল; কচকে চা দিল। আমিও তন্দ্রা থেকে জেগে উঠলাম। কচ আমার কাছে এসে বসল। মাথায়-কপালে হাত বুলাল। দাদু, আপনার শরীর এখন কি রকম চলছে ? জানেন দাদু, সেদিন মন্ট্রিল থেকে আপনাকে ছেড়ে আসতে আমার পথে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। আমি বললাম, আমার জন্য ? না- আর একজনের জন্য ? দূর—দাদু কি যে বলেন ? আমি বললাম, আমি একদম ঠিক ঠিক বলেছি। কিন্তু তুমি আমার কাছে লুকাচ্ছ। কচ হাসল, ভারি মিষ্টি সে হাসি। দুগালে টোল পরল। পুরুষের মধ্যে এত সুন্দর সাধারণত দেখা যায় না। আমি যদি শিল্পী হতাম, তখন ওর একটা ছবি আঁকতাম। কিন্তু আমি শিল্পী না।
বললাম, কচ কতদিন তোমার হাতের একটা মিউজিক শুনিনি, আজ একটু বাজাও। কচ এদিক-ওদিক তাকাতে লাগল, আমিও সব বুঝি দোলাকে খুঁজছে। দোলা বোধ হয় বিয়ের কথা বার্তা শুনে লজ্জায় দূরে দূরে সরে থাকছে। অন্য সময় কচকে দেখলে ঝর্ণার মত ছুটে আসত। আমি সুশান্তকে ডেকে বললাম, সুশান্ত ওকে গীটার-বেহালাটা এনে দাও। আর দোলা কই ? সুশান্ত বলল, পাশের ঘরে শুয়ে বই পড়ছে। আমি বললাম, ওকে বল কচ এসেছে। সুশান্ত গীটার ও বেহালা এনেদিল। সুশান্ত বলল, কচ তোমার পিএইচডি’র রেজাল্ট কখন আউট হবে ? কচ বলল, সামনের মাসে। কচ অনেকক্ষণ ধরে গীটারে সুর তুলল। দোলা তবু এলনা। সুশান্ত বলল, দোলার বলে লজ্জা পাচ্ছে। আমি বললাম কেন ? আজ দোলাকে দেখে যেন চেনা যায় না। ভীরু, লাজুক-লাজুক দু’টি চোখ, অতি সংকোচে এসে আমার মাথার কাছে বসে আমার চুলের ভিতর অতি স্নেহে আঙ্গুল দিয়ে বুলাতে লাগল।
তখন সন্ধ্যা হয় হয়। আকাশের সেদিন অনেক বড় করে সুন্দর চাঁদটা উঠেছিল। অসংখ্য তারায় তারায় আকাশ ছেয়ে গিয়েছিল। আমি শুয়ে থেকে সুশান্তর ঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদটার দিকে নির্নিমেষ নয়নে চেয়ে থাকলাম। করুণ রাগ রাগিনী বাজতে লাগল, অসম্ভব সে আবেদন-নিবেদন আমার এ বয়সেও যে বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার এল মনে-প্রাণে। অঙ্গে অঙ্গে সুর এলো—

এখনও উঠিবে চাঁদ——–আধো আলো
আলো ছায়াতে কাছে এসে প্রিয়-হাত খানি
রাখ হাতে। কাছে এসে প্রিয়- হাতখানি রাখ হাতে।

এই শব্দটা যেন সুরের পর সুরের লাহরি তুলে সমস্ত ঘর খানাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম। দোলায় আমার চুলের ভিতর আঙ্গুল চলানো থেকে গেল। উমা, সুশান্ত ও ঘর থেকে উঠে এল।

(চলবে———–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।