সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-১৩৫

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : আমি দোলাকে ডাকলাম, দোলা এসে দাদাকে প্রণাম জানাল। বললাম চা দাও। দোলা নীরবে এসেছিল, নীরবে চলে গেল। কতক্ষণ পরে সুশান্ত উমা ওরা চা বিস্কুট নিয়ে এল। উমা বলল, দাদা বড় ব্যস্ত আছি। ঘর দোর সব এলোমেলো হয়ে আছে, কিচেনে সে রকম। আবার প্রশান্ত দা অসুস্থ্য কি খাবে না খাবে রোগী মানুষ। আপনার সাথে দেখা করব পরে অনেক কথা হবে। ও, হ্যাঁ কচকে পাঠিয়ে দেবেন। ও প্রশান্ত দাকে একটু মিউজিক শুনাবে। দাদা কিছুক্ষণ বসে চলে গেল, মাধুরী বৌদি (কচের বৌদি) যাওয়ার সময় বলে গেল আসি।
আমি খুব ক্লান্ত বোধ করছিলাম। দু’চোখ যেন ঘুমে বুঝে এল। তবু ভাবলাম কিছু খেয়ে ঘুমানই ভাল। দোলা তাড়াতাড়ি করে আমার জন্য ভাত, ডাল, ভর্তা, মাংস নিয়ে এল, আমি কোন রকমে মুখে দিলাম। একটু স্যুপ খেলাম। দোলা হাতে করে একটু সুপারী, দারুচিনি, এলাচ নিয়ে এসেছে। তা মুখে দিয়ে চিবুতে লাগলাম। দারুচিনির গন্ধটা আমার খুব প্রিয়। ছোট বেলা বাবার কাছ থেকে, বড়দির কাছ থেকে পয়সা পেলেই দারুচিনি-এলাচ কিনে খেতাম। আর মনে করতাম যদি জীবনে কোনদিন টাকা-পয়সা হাতে পাই তবে দারুচিনি কিনে খাব। কথাটা এই ক্লান্ত শরীরে মনে পরে, মনে মনে হাসলাম। দোলা কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। বললাম, যা তুই খেয়েগে ঘুমো।
আমি ভাবছিলাম, মন্ট্রিলে সব রেখে এলাম। বিশেষতঃ দোলার জন্যই এলাম। ওর বিয়ের কথা বার্তা পাকা করে বিয়ে দেবার জন্য। আর সুশান্ত রয়েছে ওর কাছে সব দায়িত্ব দিয়ে দিলে। ও আর উমা সুসম্পন্ন ভাবে সব সমাধা করতে পারবে। বিয়ের কথা বার্তা আমি নিজে না বলে সুশান্ত বলতেই ভাল হবে। আর দোলাকে আজ পরের হাতে তুলে দিতে আমার বড় কষ্ট হয়। ও যখন এসেছিল তখন আমার কত আশা, কত স্বপ্ন, কত সাধ, কত আকাঙ্খার সাগর আমি রচেছিলাম। আমি একা, বড় একা, নাতনীটা কাছে থাকলে আমাকে একটু দেখা শুনো করবে।
দেখলাম যে কেউই কাছে থাকে না। ছেলে, মেয়ে, বন্ধু, বান্ধব। পৃথিবীতে একাই এসেছিলাম। আবার একাই সবকিছু ফেলে দিয়ে। একাই চলে যেতে হবে। এই পৃথিবীর অমোঘ নিয়ম। তবু মানুষ এই পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে থাকে, পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার বাঁধে। আমি যখন কিছুই করলামনা, তখন মিছে কেন কুহকিনীর খেলায় আবদ্ধ হতে যাই। দোলাকে তার প্রেমাষ্পদের হাতে তুলে দিয়ে তার মুখে হাসি দেখে আমার জীবনের স্বার্থকতা কুড়াতে দোষ কি ? সুশান্ত খেয়ে এসে একটা বাংলা গানের রেকর্ড বাজাল। রবী ঠাকুরের লেখা একলা চল একলা চল রে। যদি ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে।
গানটা শুনতে শুনতে আমি একটু তন্দ্রায় ঢলে পরলাম। তখন আমি কিন্তু কানে সব শুনতে পাই। ঘুম ? আমার জীবনে জ্ঞান হওয়া অবধি আমি কোনদিনই তেমন ভাবে ঘুমুইনি। যাকে বলে গভীর ঘুম। হয়তঃ পর পাড়ে পাড়ি দেবার জন্য সে ঘুম আমার ভগবানের হাতে তোলা রইল। সেই গভীর ঘুম চির নিদ্রা যে ঘুম আমার কোনদিন ভাংবেনা। দরজায় কলিং বেলটা বেজে উঠল। সুশান্ত দরজা খুলে দিল। কচ এর গলা শুনলাম। কচ এসে ঘরে ঢুকে বলল, দাদু ঘুমিয়েছেন ? সুশান্ত বলল ওর ঘুম ? এখনই জেগে উঠবে। কচ বলল, দাদু আপনারা আমাদের ফোন করে জানালে কি দোষ হয় ? সুশান্ত বলল, বিশ্বাস কর কচ, একদম মনে ছিলনা। তাহলে তোমাদের জানালে আমাদের অনেক সুবিধে হত।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।