ভোলায় অন্যের কবরস্থানে নেমপ্লেট লাগিয়ে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা
মধ্যরাত : পর্ব-১৩৩
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত পর্বের পর) : অনেকদূর পথ এগিয়ে এলাম। তবু অনেক অনেক পথ বাকী। দীর্ঘ ৭-৮ ঘণ্টার পথ। অসুস্থ্য শরীর নিয়ে আজ যেন মনে হয় পথ যেন ফুরোয়না। তবু পথের অনাবিল রূপ মাধুরী দেখে চোখ যেন জুড়িয়ে যায়। ভগবান পৃথিবীকে এত রূপে রসে, গন্ধে, ছন্দে, ফলে-ফুলে বিচিত্রে ভরে রেখেছেন। ঘর থেকে না বের হলে বুঝা যায়না। আমি বললাম, সুশান্ত কোন একটা নিরিবিলি জায়গায় গাড়ী থামা। একটু নেমে ঘুড়িফিরি। একটু গায়ে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করি। সুশান্ত সন্দর লেকের পাশে বিচিত্র বিচিত্র গাছ-গাছালির পাশে গাড়ী থামিয়ে উমাকে বলল, উমা চা খাওয়াও। উমা চা, কোক, স্যান্ডউইচ, চীজ, আপেল নামিয়ে দোলাকে নামতে বলল। সুশান্ত বলল, প্রশান্ত নাম। আমি যেন তখন কি ভাবছিলাম। সুশান্ত বলল, কিরে নাম ? কবি হয়ে গেলি নাকি ? আমি এত অসুস্থতার ভিতরও হেসে উঠলাম। মানুষ নাকি হাসলে অনেক দিন বাঁচে। জানিনা সত্য কি মিথ্যা। পার্কে বসে বিশ্রাম করে আবার গাড়ীতে উঠলাশ। সুশান্ত উমা দোলা সকলেই হৈ হুল্লোর করে গাড়ীতে চড়ে বসল। সুশান্ত বলল, প্রশান্ত তোর কোন শরীর থারাপ লাগলে আমাকে বলিস। আমি বললাম, তুই নিশ্চিন্ত থাকিস। সে তোমে অবশ্য বলব। দোলা বলল, দাদু তুমি একটু হেলান দিয়ে বস।
গাড়ী উল্কার মত ছুটে চলেছে। সুশান্ত ষ্টিয়ারিং হুইল ধরে আছে। উমা ওর পাশে বসে অনর্গল গল্প করে চলছে। আমি গাড়ীর সিটে বসে অনেক অনেক কথা ভাবছি। দোলার কথা ভাবছি। ও চলে গেলে আমাকে কে দেখা-শুনা করবে। কে মায়া মমতা দিয়ে আগলে রাখবে। কে দুটো সাহস দিয়ে অভয় দিয়ে চাঙ্গা করে তুলবে। তবুওত দোলাকে বিয়ে দিতে হবে। বিয়ের পর বলব আমার কাছে থেকে যতদূর সম্ভব আমাকে দেখা-শুনা করতে পারে। আরও ভাবলাম কচ আমার কাছে থেকে মাঝে মাঝে গান শোনাবে। গীটারের বাজনা শোনাবে, বেহালার সুর এর রাগিনী তুলে আমাকে স্তম্ভিত করে দেবে। অলীক কল্পনা গুলি আমার মাথার মধ্যে রিমঝিম করে বাজতে লাগল।
সুশান্ত ডাকল প্রশান্ত ঘুমুচ্ছিস ? আমি বললাম ঘুমুচ্ছি না, তবে ঝিমুচ্ছি। ঘুমে দুলছি। কিন্তু ঘুমুতে গেলে ঘুম আসছেনা। অসুখের সময় থেকে এরকম চলছে। দোলা ঘুমে ঢুলে ঢুলে পড়ছে। কয়েকবার আমি ডাক দিলাম, এই দোলা এই যে আমরা এসে গেছি। তখন প্রায় আমাদের গাড়ী টরেন্টো শহরের মধ্যে ঢুকে পরেছে। বড় দোকানগুলি পণ্য সম্ভারে পরিপূর্ণ। বড় বড় বিরাট বিরাট ব্রীজের নীচ দিয়ে আমাদের গাড়ী ছুটে চলেছে। দোলা চোখ মুছে বড় বড় করে ভাল করে দেখছে। উমা বলল, এইবার আমাদের বাসা এসে যাবে। ইস কতদিন বাড়ী ছেড়ে আমরা মন্ট্রিলে ছিলাম, মনে হয় অনেক বছর। টরেন্টো মন্ট্রিলের চেয়ে চার গুন বড়। গাড়ীর দোকানগুলি রং বেরংয়ের শাড়ীতে জমজমাট। অনেক অনেক মেয়ে মানুষের অগনিত ভীড়। আমি বললাম, দোলা এইবার তুমি শাড়ী মনের মত করে পছন্দ সই কেনা-কাটা করতে পারবে। দোলা বলল, দেখছ দাদু টরেন্টো কতগুলি শাড়ীর দোকান। আর মন্ট্রিলে মাত্র একটা শাড়ীর দোকান, নাম তার উমা। উমা বলল, তা-আবার আমার নাম। আমরা সকলে হেসে উঠলাম। সুশান্ত বলল, দেখলি প্রশান্ত উমা বেশ বগড় করতে জানে।
(চলবে—-)