সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৪৬

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : হেমন্তের ওখান থেকে অনেক খানি পথ হেটে এসে বাস ধরলাম। পথে আসতে আসতে বার বার হেমন্তের কথাগুলি আমার কানে বাজছে। সকলেই একটু স্নেহ-ভালবাসা চায়, সকলেই ভালবাসার কাঙ্গাল, দোলা ভালবাসা চায়, হেমন্ত স্নেহ চায়, উমা একটু মান মর্যাদা ও বড়দার স্নেহ-ভালবাসা চায়। এত বড় বিশাল বিপুল-বিরাট, উদার-উজার ভালবাসার স্নেহ, মায়া-মমতার সাগর আমার এ ছোট্ট হৃদয়ে কেমন করে স্থান করে দেব ? তা ভেবে আমি ভয় পেয়ে অধীর হয়ে উঠি। আমি সামান্য একজন মানুষ। কুটিলতা, জটিলতা, পঙ্কিলতা আমার মধ্যেও আছে। তবু যতটুকু পারি সকলকে দেবার চেষ্টা করি। ভগবান আমাকে ধৈর্য্য দিক, সাহস দিক, বিপদ আসলে বিপদকে কাটিয়ে উঠার মত শক্তি ও বিশ্বাস দিক। বাস এসে অটোপার্কে থামল, আমি আর এক বাসে উঠলাম। সকলেই দেখলাম জীবন সংগ্রামে, জীবনের তাগিদে ব্যস্ততার লড়াইয়ে হয়রান। কেউ কারো পানে ফিরে চাওয়ার সময় নেই।
বাসায় এসে রাতের খাবার খেতে উমাকে বললাম, জান উমা হেমন্তের খুব জ্ব। বেচারা একা ঘরে পরে আছে। বললাম, আমার বাসায় চল ও কিছুতেই রাজি হল না। বলেছি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে রাখতে। আমি কাল দুপুরে ওকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাব। আমি এক নিশ্বাসে সব কথাগুলি বলে গেলাম। উমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সব কটি কথা শুনল। আমি খেয়ে দেয়ে ড্রইং রুমে গিয়ে বসলাম। দেখি টেবিলের উপর অনেক চিঠি জড় হয়ে আছে। কয়েকটা খাম ছিড়ে খুলে পড়লাম। বিশ্বজিৎ বাবু দোলাকে আমার হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চায়। চিঠিটা বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়লাম। মাধুরিও সেই মত। মনে মনে হাসলাম, সে এক বিরাট দায়িত্ব। ওনি আরও লিখেছেন, আমি কচকে লিখে দিয়েছি দোলাকে আপনার ওখানে রেখে আসতে। যাক নিশ্চিন্ত হলাম। উমাকে ডেকে বললাম, উমা বলল কেন ডাকছেন দাদা। আমি বললাম, বিশ্বজিৎ বাবু মত দিয়েছেন দোলা এখানে থাকার জন্য। উমার মুখটা আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সুশান্ত মারা যাওয়ার পর আমি উমার মুখ খুশীতে এত উজ্জ্বল হয়ে আর উঠতে দেখিনি। উমা বলল, দাদা আপনি গিয়ে দোলাকে নিয়ে আসেন। আমি বললাম, যাব। হেমন্তটা একটু ভাল হোক। তখন ওকে তোমার কাছে রেখে তবে যাব।
রাত বাড়তে লাগল। অনেক অনেক প্রয়োজনীয় চিঠি পত্র এসে পরে আছে। সবগুলো পত্রের উত্তর লিখলাম। কিছু কিছু দিনেত সময়ই পাই না, রাতে যা একটু হাতে সময় থাকে। উমা কয়েকবার তাড়া দিল দাদা ঘুমুন গিয়ে, রাত জেগে পড়াশুনো করলে শরীর খারাপ হবে। হসলাম, সারা জীবন কতরাত আমি বিনা ঘুমে কাটিয়েছি, উমা তা জানে না। বরং কাজ করলে রাতে ভালই হয়, আমার জীবনের দীর্ঘ সময়গুলো কেটে যাবে। অনেক চিঠি পত্র ঘাটলাম, পরিচিত-অপরিচিত বহু জনের চিঠি। বড়দি চিঠি দিয়েছে, দোলার দুষ্টু ভাই দুষ্টু স্বপ্ন আর ইন্দ্র চিঠি দিয়েছে। বেশ মজার কথা লিখেছে। দিদি তুমি আস আর দুষ্টুমি করব না। সেই তিন বছর পর্যন্ত লিখে চলেছে দিদি তুমি এস আর দুষ্টুমি করব না। বড়দি লিখেছে প্রশান্ত একবার দেশে আয়, তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। দোলা কেমন আছে, ও চিঠি দেয় না কেন ? জামাই কেমন হল ? এমনি নানা ধরনের কথা। দোলার বাচ্চা হবে, বড়দি বোধ হয় জানে না। দোলাও কি ওর মাকে বা দিদিমাকে লিখে নাই ? আমি দেশে কাকেও লিখিনি, আমার ভীষণ লজ্জা লাগে। দোলাত লিখতে পারত। মেয়েরা মেয়েদের লিখিতে দোষ কি ? দোলার বাচ্চা হবার কথা শুনলে বড়দি খুব শুখী হতো। বড় ঘড়িটায় ১২টার মত বাজে, এখনই ৫ মিনিট পর ঢং ঢং করে ১২টার ঘণ্টা পরবে।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।