সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৫১

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : নারী ছলনাময়ী, রহস্যময়ী, এ নামটাকে ক্যামেলিয়া মুছে দিয়ে যেতে চায়। নারী মাতৃরূপী, গরীয়সীর ভূমিকায় তার নাম অক্ষুন্ন রাখতে চায়। নারীর উজার-উদার মন স্নেহ কোমল মাতৃগত মন দিয়ে সকলকে সে ভালবাসে। সে কখন মা, কখনও বধূ, কখনও প্রিয়া, বিমুগ্ধ রজনীতে মানসীর রূপ ধরে সে প্রেমিকাকে মান মন্দিরের মানস প্রতিম করে রাখতে চায়, সেটাও তার একটা বড় কৃতিত্ব।
আজ ক্যামেলিয়া আমার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ধরা দিল। আমি তার চিঠিটা ডাক বাক্স থেকে নিয়ে অবহেলায় রেখে ভার্সিটিতে গিয়েছি। সুশান্ত মারা যাবার পর আমার মন এসব প্রেম, ভালবাসা নিছক একটা ন্যাকামী ছাড়া কিছু মনে হয় না। আজ দেখলাম যে নারী ভালবাসার মূল্য দিতে জানে, মানুষ সাধারণ ভাবে যা মনে করে সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠে অত নিন্ম সমালোচনার পাত্রি তারা নয়।
ক্যামেলিয়ার দীর্ঘ চিঠিতে অনেক কথা লেখা ছিল। কলেজ জীবন থেকে শুরু করে ভার্সিটির জীবন পর্যন্ত অনেক সুখ-দুঃখের ইতিহাস সুশান্তকে ঘিরে ছিল। শেষ পর্যন্ত সুশান্ত আমাকে বাঁচাতে গিয়ে চলে গেল। ও যদি অন্য কোন রোগ হয়ে মরত আমার অত দুঃখ হতনা, আমাকে বাঁচাতে গিয়ে লাঞ্চে জল ঢুকে আর সেরে উঠল না ? অনেক অনেক আফছোস নিরাশা হতাশা। চিঠিঠাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে, চিঠিটা যেন আমাকে মন্ত্রমুগ্ধের মত বার বার আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ক্যামেলিয়ার দুঃখে আমি আবার সুশান্তর জন্য হৃদয়ের অনেক ব্যাথা, অনেক অশ্রু ফেললাম।
ডোরার চিঠিটা খুললাম, সেই মেয়েলি কথা। প্রশান্ত তুমি আমাকে ভুলে গেছ ? এখন-ত তুমি উমাকে নিয়ে ব্যস্ত। দোলার জন্য পেরেশান। আমাকে ফোন করনা, চিঠি দাও না। এসব কথার আমি কি উত্তর দেব। আমার ভাষা নেই। তাকে ভালবেসেছি, এখনও ভালবাসি। কিন্তু ডোরা বুঝে না, যে মানুষ তার কৃতকর্মের দ্বারা তার ভালবাসাকে অমর করে রাখে। ডোরার একনিষ্ঠ প্রেম, অগাধ ভালবাসা, আমার প্রতি তার প্রেমের কৃতিত্ব এনে দেবে। সে আমাকে অবিশ্বাস করলে, তার ভালাবাসা মিথ্যা। আমিত তাকে অবিশ্বাস করি না। আমি মনে করি ডোরা যদি সথ্যি আমাকে ভালবাসে সে আর কাউকে ভালবাসতে পারে না। মানুষের মন একটা স্বচ্ছ কাঁচ। সেই কাঁচ একবার দাগ পরলে আর তা মুখে ফেলা সহজ না। বা মুছে ফেলাও যায় না। ডোরা কি করে ভাবে আমি খালি লোকের সাথে মন দেয়া করি। আমি একজন রক্ত মাংসে গড়া সাধারণ মানুষ।
উমা একজন সরল, সহজ, অবলা বিধবা নারী। হয়ত আজ বিধবা হয়ে আমার মনের কোন উদারতার পরিচয় পেয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তাকে আমি ছোট বোনের মত স্নেহ, আদরে আমার বাড়ীতে স্থান দিয়েছি। এটা আমার কর্তব্য। সুশান্ত আমার একনিষ্ঠ পরম বন্ধু, ভাইর চেয়েও আপন সে ছিল। আমার অসুখের সময় চাকরী ছেড়ে উমাকে টরেন্টোতে থেকে মন্ট্রিলে নিয়ে এসে নিজের টাকা-পয়সা খরচ করে সকলকে খাইয়েছে। নিজে খেয়েছে, আমার শরীর সুস্থ করে আমাকে দোলাকে সহ টরেন্টো নিয়ে রেখেছে। দোলার বিয়ে হয়ে দোলা কচের হানিমুন করে তবে ছেড়েছে। আমি উমার জন্য কিছুই করিনি। একটু থাকে এবং খায়। বিধবা মানুষ একবেলা দুষ্টু আলো চালের ভাত, নিরামিষ, রাত্রে দুধ ফল। এ যদি নারী হয়ে একজন নারীর দুঃখ-কষ্ট-ব্যথা-বেদনার সমব্যাথী না হয়। তাই ডোরা আবার উচ্চ শিক্ষার দাবী করে, সাহিত্যেও আলোড়ন তুলে লিখেছে অমর সাহিত্য আকাশের কত রং। কিন্তু হিংসার বশবর্তি হয়ে আজে-বাজে কথা লিখে নিজের মাথাটাও নষ্ট করছে, আমাকে বিরক্ত করে তুলছে।

(চলবে———–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।