শিক্ষা সংগঠক জয়নাল আবেদীন অন্ধকারে আলোক বর্তিকা

জয়নাল আবেদীণ যিনি একজন সাবেক কৃষি কর্মকর্তা তিনি ১৯৩৭ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন ভোলা শহর তলীর ছোট্ট গ্রাম আলগীতে। তার বাবার নাম ছিল দাইমুদ্দিন হাওলাদার মা জাকিয়া খাতুন। তার বাবা ও তৎকালীন সময়ে বিট্রিশ কোর্ট বিভাগে চাকরী করতেন। বাবা মায়ের প্রথম সন্তান ছিলেন জয়নাল আবেদীন। ছোট বেলা থেকেই তিনি শিক্ষার মর্ম বুঝতে পেরেছিলেন তাই ঐ সময়ই নিজেই তার গ্রামের তার বয়সের জুনিয়রদের পড়াশোনা করাতেন। তাদের মধ্যে আছেন কয়ছর মেম্বার, মতিন মিয়া। মতিন মিয়ার জবানীতে ফুটে আসে বিষয়টি। তিনিই আমাদের গ্রামের প্রথম শিক্ষিত মানুষ। মানুষ আমাদের কলাপাতায় লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে কাগজ কেনা ছিল ব্যায়বহুল। তাই তো কলাপাতা, তালপাতা আর বাশের কলম ছিল শিক্ষা উপকরণ আর তাছাড়া একই কাগজ প্রথমে পেন্সিল দিয়ে তার উপর কালি দিয়ে লিখে কাগজ সা¯্রয় করা হত। তিনি পড়াশুনা করেন পাশবর্তী গ্রামের নবীপুর সরকারী প্রাইমারী স্কুল, ভোলা সরকারী স্কুল। ঐ সময় ভোলায় কোন কলেজ না থাকায় বিএম কলেজ, বরিশালে।
শিক্ষাকালীন সময়ে তিনি দেখেন আলগী গ্রাম শহরতলীর হলেও সব দিক থেকেই পিছিয়ে এই গ্রাম। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবি, জেলে, দিনমজুর, রিক্সাচালক। সবাই লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত এবং এত জনগোষ্ঠির এই গ্রামটিতে কোন স্কুল নেই। শিশুরা বড় হয়ে শিখে বাবার সাথে কৃষি কাজে সহায়তা করা বা বাবার রিক্সা উত্তরাধিকার সূত্রে চালানো। তিনি চিন্তা করেছিলেন এই গ্রামের জনগোষ্ঠিকে এ অবস্থা থেকে কিভাবে বের করে এনে শিক্ষার আলোয় শিক্ষিত করা যায়। কারন শিক্ষা ছাড়া কোন জনগোষ্ঠি উন্নতি সম্ভব নয়। তাই তিনি তখন থেকে পন করেন তার নিজ গ্রামকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করবেন।
এই পদক্ষেপ হিসাবে তিনি প্রথম বাড়ী বাড়ী গিয়ে অভিভাবকদের উদ্ভুদ্ধ করেন যাতে তারা তাদের সন্তানদের অল্প বয়সে মাঠের কাজে না নেন, বা কিশোর শ্রমিক থেকে বিরত রাখেন। তিনি বাচ্চাদের লেখাপড়ার মনোযোগী করার জন্য চকলেট বিতরণ করেন। যদিও তিনি কৃষি কর্মকর্তা তার পরিচিতি হয়ে উঠে জয়নাল মাষ্টার হিসাবে। অতপর তিনি চিন্তা করেন কিভাবে আলগী গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যায়। কারন পার্শ্ববর্তী একমাত্র স্কুল নবীপুর সরকারী স্কুল বেশ দূরে। আর এই দুরের কারনেও পিছিয়ে পড়া গ্রামটির কেউ খুব একটা লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ পায় না, এই দায়িত্ব তিনি নিজেই কাধে নেন। তার ভাষায় “১৯৫৮ সালে ১৫ই জুলাই আমি প্রথম জালাল মৌলভি বাড়ির দরজায় আলগী বেসরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় নামে প্রথম স্কুল স্থাপন করি। শিক্ষক নিয়োগ করে নিজেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ করি। ঐ সময় স্কুলটি ফরিদপুর ইন্সপেক্টর অব স্কুলের অধীনে ছিল। পরে স্কুলটি ওমর আলী হাজীর বাড়িতে স্থানান্তর করি”।
এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি নিয়োগ দেন সহধর্মিনী বিলকিছুন নেছাকে এবং শিক্ষক হিসাবে জয়া উত্তরাকে। তার স্ত্রীর ভাষায় “তিনি ওমর আলীর হাজী বাড়ীর দরজার ৬০টি স্লেট, ৬০টি চক এবং ৬০টি আদর্শ লিপি কিনে দিয়ে প্রথম স্কুলের যাত্রা শুরু করেন এবং কয়েকটি হোগলা পাতায় ছাত্রদের বসার ব্যবস্থা করেন এবং খোলা আকাশের নীচেই ক্লাস শুরু করেন। বাচ্চাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য প্রায়ই চকলেট কিনে দিতেন। প্রধান শিক্ষক ও তার সহধর্মিনী সহ অন্যান্যরা বিনা বেতনে এ কাজ করতেন। উক্ত সময় স্কুলের সভাপতি হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালে প্রাইমারী স্কুল রেজিষ্ট্রেশন করতে হলে জমি লাগবে, সরকারের এরূপ নির্দেশনায় গ্রামের হাশিম সর্দার সাহেবের নিকট থেকে দলিল নেন কিন্তু বাস্তবে হাশিম সর্দার সাহেবের কোন জমি পাওয়া যায় নাই বিধায় জনৈক আব্দুল কাদের সাহেবের কাছ থেকে ৮০০০/- (আট হাজার) টাকা দামের বিনিময়ে ৮ শতাংশ জমি কিনে নেন। তিনি তাকে ৬৫০০/- (ছয় হাজার পাঁচশত) টাকা প্রদান করেন কিন্তু বাকী টাকা দেবার আগেই আঃ কাদের হঠাৎ করে ঝঃৎড়শব করে মারা যান। বিষয়টি (১) আঃ বারেক, খলিফা বাড়ী, (২) মোস্তাফিজ মিয়া, বৈদ্ধ বাড়ি ও মোঃ হাদিস সহ সবাই জানে। তখন তার কেনা জমিতে টিন দিয়ে স্কুল নির্মাণ করা শুরু করেন এবং প্রধান শিক্ষক হিসেবে তারই সহধর্মিনী বিলকিছুন নেছা দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ততদিনে স্কুলটি সুনাম ছড়াইয়া পড়ে। গ্রামের লোকজনদের তিনি আরো জোড়ে সোড়ে শিক্ষার কার্যক্রমে অর্ন্তভুক্ত করেন। প্রতিদিন সকাল বেলা বাড়ী বাড়ী গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে আনানোর ব্যবস্থা করেন। নিজের টাকায় বই কিনে দিয়ে, তাদের উৎসাহের জন্য চকলেট দিয়ে বাচ্চাদের অনুপ্রাণিত করেন। যে কোন বাচ্চাকে দেখলেই তার প্রথম প্রশ্ন ছিল সে লেখাপড়া করে কিনা? এই মানুষটি গ্রামের নিজের সন্তান হিসাবেই মনে করতেন এবং তাদেরকে লেখাপড়ায় উদ্ভুদ্ধ করতেন।
স্কুলটি ১৯৯০ সালে ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে রেজিষ্ট্রির হয় এবং তিনি ২০১৫ সালে সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তার ভাষায় “স্কুলের আরো জমির প্রয়োজন হওয়ায় এবং বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিং (সাইক্লোন সেন্টার) এর অনুমতি পাওয়ায় আমি গ্রামের জনৈক আলামিন এবং অন্যান্য ওয়ারিশদের কাছ থেকে খেলার মাঠ ও নতুন বিল্ডিং (সাইক্লোন সেন্টার) স্থাপনের জন্য ২০০৫ সালে ৮ শতাংশ জমি কিনে দেই”। উক্ত ৮ শতাংশ জমি কেনার জন্য নিজের সমুদয় সম্পদ বন্ধক রাখেন। নিজের জীবন জীবিকার অবলম্বন নষ্ট করে তিনি স্কুলের জন্য জমি কিনে দিতে কুন্ঠাবোধ করেননি। উক্ত জমিতেই খেলার মাঠ সহ নতুন ভবন (সাইক্লোন সেন্টার) নির্মিত হয়। পুরাতন ভবন পরিত্যাক্ত হওয়ায় নতুন ভবনে স্কুলটি স্থানান্তরিত হয়। মাঠটি আগে পুকুর থাকায় অনুদান দিয়ে ভরাট হয়। দীর্ঘ সময় বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে তার কেনা জমি স্কুলে দানের মাধ্যমে অনেক প্রচেষ্টার ফলে তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি ২০১১ সালে আলগী সরকারী প্রাথমিক স্কুল হিসাবে স্বীকৃতি পায় এবং তিনি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পাল করে আসছিলেন।
সভাপতি হিসাবে থাকলেও তিনি ছিলেন জাত শিক্ষক। তিনি নিজেও স্কুলে ক্লাস নিতেন। এখনও তার গলার স্বর আলগী গ্রামের বাতাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। তার গলার স্বর বিলিয়ে ছাত্রদের শব্দ দুই একে দুই, দুই দু গুনে চার, তিন দু গুনে ছয়, এখনও অনেকে মনে করেন: স্কুলের পাশ দিয়ে হেটে গেলে কল্পনায় চোখে পড়ে তিনি ছাত্রদের চকলেট বিস্কুট বিতরণ করেছেন খাতা কলম বই কিনে দিচ্ছেন। প্যারডাইস বুক ডিপো বা ভোলা সরকারী স্কুলের সামনের লাইব্রেরী ছিল ফ্রি। তিনি তার ছাত্র ছাত্রীদের এখন থেকে বই নেয়ে যেতে বলতেন। বকেয়া টাকা তিনি পরে পরিশোধ করতেন।
প্রাইমারী শেষ করা ছাত্রদের তিনি নিজে ভর্তি করাতেন আঃ রব হাই স্কুলে বা শহীদ জিয়া হাইস্কুলে যাতে তারা তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে। ছাত্রদের হাইস্কুলের কার্যক্রম চালিয়ে যাবার জন্য তিনি অভিভাবকদেরকেও উদ্ভুদ্ধ করতেন। গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন নিজের সামান্য পেনশন থেকে দিতেন। তিনি নিজে হাইস্কুলে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরও পড়াশোনার খোজ খবর নিতেন। অনেক অভিভাবক চাইত ৫ম শ্রেণি পাস হয়েছে অনেক হয়েছে এবার মাঠে যাও বা কোন কাজ করা বা মেয়ে হলে বিয়ে দাও, এসব বিষয়ের বাধ সাধতেন তিনি। অভিভাবকদের বুঝাতেন শিক্ষা কি? তার ছেলে শিক্ষিত না হলে তারও উন্নতি হবে না বা অল্প বয়সে বিয়ে দিলে মেয়েদের জীবন কষ্টের হয় এবং তার চেয়ে পড়াশুনাই করানোই ভাল। এক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগীতার আশ্বাস দিতেন তিনি। এরকম শত শত ছাত্র-ছাত্রী উদাহরণ রয়েছে আলগী গ্রামে। আর তারই একজন উম্মে হাবিবা।
প্রাইমারী শেষ করা হাবিবার মা গৃহিনী বাবা কাঠ মিস্ত্রী। হাবিবার বাবা আর তাকে পড়াবেন না। তিনি তার বাবাকে বুঝাইয়া তাকে ভর্তি করান শহীদ জিয়া আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ে। সরাসরী তিনি তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন। বয়োবৃদ্ধ শারিরীক ভাবে অসুস্থ হলেও প্রতিবার স্কুলে গিয়ে শ্রেণি শিক্ষকের নিকট থেকে হাবিবার খোজ খবর নেন। স্কুল-ফি, প্রাইভেট শিক্ষকের বেতন পরিশোধ করেন। হাবিবাকে লেখাপড়া চালিয়ে যাবার জন্য উৎসাহিত করেন। তার একান্ত প্রেরণায় এবং চেষ্টায় হাবিবা এসএসসি পাশ করেন এবার তিনি তাকে শহরের নাজিউর রহমান কলেজে ভর্তি করান তার অভিভাবকদের বুঝিয়ে এইচএসসি-তে। যে বয়সে হাবিবার সব বান্দবী সংসার করছে হাবিবা তখন কলেজের গন্ডিতে নতুন উদ্যামে। বাচ্চাদের যে তিনি নিজের বাচ্চা মনে করতেন এবং সর্বোচ্চ মঙ্গল কামনা করতেন হাবিবাকে লেখা চিঠিতেই তার প্রমান। তার অনুপ্রেরণামূলক চিঠি যে কারোরই মনে গভীর রেখাপাত করবে।

My Dear Habiba  Allah is great,                            Dated: 11.10.2016.

At First my Cordial Love to you Hope you are quit ok and healthy body. You will be very busy for study. If you are not busy you will be fail in future understood mind it as you show, so you reap. Time is not wait for none. You should try again and again then you wall success, otherwise not. Men goes but action remain. You should read one time but write ten times. I want you to read and write. Mind it education is the back bone of a nation. I love you from core of my heart. Only for your studies if you need something you will tell me.

Thank you

Your Sir.

হাবিবাকে লেখা এ চিঠি শুধু হাবিবাকে নয় অত্র আলগী গ্রামের প্রতটি ছাত্র-ছাত্রীকে লেখা এ চিঠি সারা বাংলায় ছাত্র ছাত্রীকে লেখা। চিঠিটি পড়লে বুঝা যায় লেখাপড়ার প্রতি ছিল তার গভীর দরদ ও আকর্ষণ। এ ক্ষেত্রে তার আর্ন্তরিকতার কোন ঘাটতি ছিলনা হয়তবা সে তার আতœীয় হইক বা অনাতœীয় হউক এবং তিনি কোন পাথর্কের দৃষ্টিতে কাউকে দেখতেন না, সবাই ছিল তার কাছে সমান। হাবিবাকে তার মাস্টার্স পর্যন্ত সব খরচ চালানোর কথা বলেছিলেন তার পিতামাতাকে। এই ভাবে গ্রামের প্রতিটি জায়গায়, বাড়ীতে, তার প্রচেষ্ঠায়, আলগী গ্রাম নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়। আলগী গ্রাম পরিনত হয় আলোকিত গ্রাম হিসেবে। আর এটাই ছিল তার সার্থকতা।
জয়নাল আবেদীন মাষ্টার সাহেবের ব্যাক্তি জীবন ছিল খবুই সাধারণ এবং অনাড়ম্ভর। অত্যন্ত সহজ সরল, ছিলেন এই সাদা মনের মানুষটি। চলাফেরা এবং বেশ-ভুষায় ছিলেন অতিমাত্রায় সাধারণ, কারণ তার কাজ ছিল অসাধারন। তার এই অসাধারণ কাজের সহযোগী হিসাবে বেছে নেন বিলকিছুন নেছাকে। তারই পার্শবর্তী নবীপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে বিলকিছুন নেছাকে। তার বাবার ইচ্ছায় তিনি মুসলিম মৌলভীর বাড়ীর ৭ম শ্রেণির এই মেয়েকে বিয়ে করেন, এখানেও তার কৃতিত্ব। বালিকা বধু বিলকিছুন নেছা স্বামীর উৎসাহে শশুর বাড়ীতে পড়াশুনা শুরু করেন। লোক ভয়ে ও নিজ পরিবারের বাধা সত্ত্বেও স্ত্রীকে স্কুল পেড়িয়ে কলেজ গন্ডিতে নিয়ে জান। এইভাবে শিক্ষাবিস্তারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার স্ত্রী ছিলেন ফজিলাতুন নেছা মহিলা কলেজের উদ্ধোধনী ব্যাচের ছাত্রী। পরবর্তীতে তিনি পিটিআই থেকে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেন। র্দীর্ঘদিন প্রায় বিনা বেতনে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসর নেন। তার স্ত্রীর আত্মত্যাগও স্বরণীয়। স্বামী হিসাবেও তিনি ছিলেন অসাধারণ। এই জন্য তারা উভয়ই শিল্পকলী একাডেমীতে অনুষ্ঠিত দাপ্তত্য মেলায় শ্রেষ্ঠ দাপ্তত্য পদক পুরস্কার পান।
তবে প্রতিটি ভাল কাজের কিছু বেদনা থাকবে, এটাই নিয়তি। তারই নিয়োগ পাওয়া পরবর্তী প্রধান শিক্ষক মনজু রহমান ও অন্যান্য কুচক্রি মহল মিথ্যাচার করে তাকে ২০১৬ সাথে সভাপতি থেকে বাদ দেয়। নিজ সন্তানের মত তিলে তিলে গড়া স্কুল থেকে এভাবে বাদ পরায় তিনি অনেকটাই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরেন। কিন্তু তার পরেও উদ্যাম হারাননি। মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি শিক্ষা বিস্তারের আলোর মশাল নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন। বর্তমান প্রধান শিক্ষকের সরাসরি ইন্দনে এবং জেলা শিক্ষা কমিটির সহায়তায় তার প্রতি এ অবিচার করা হয়। এ ব্যাপারে তিনি জেলা শিক্ষা কমিটি বরাবরে একাধীকবার অভিযোগ করেন এবং জেলা শিক্ষা কমিটি এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তার জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি তার এই চাপা কষ্ট বয়ে বেড়িয়েছিলেন। তবে জীবনের শেষ দিনও কেটেছিলেন তার শিক্ষা বিস্তারে। ছোট বোনকে দেখতে ঢাকা থেকে ভোলা এসেছিলেন তিনি, পথিমধ্যে অসুস্থ্য হয়ে পরেন। ভোলা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে, সু-চিকিৎসার জন্য আবার ঢাকার উদ্দ্যেশে রওনা হন। ঢাকা যাওয়ার প্রাক্কালে শেষবারের জন্য তিনি তার ছাত্র-ছাত্রীদের দেখে জান এবং অনেকের স্কুলের ফি দিয়ে যান। এটাই ছিল তার জীবনের শেষ কার্যদিন। এক দিনের জন্যও অবসর নেননি তার দায়িত্ব থেকে। ঐদিন ২০১৭ সালের ০৬ জুন ঢাকা যাওয়ার পথে লঞ্চে ষ্টোক সবাইকে কাঁদিয়ে তিনি শেষ নি:স্বাশ ত্যাগ করেন।
তাই শিক্ষা সংগঠক জয়নাল আবেদিন অন্ধকারে আলোক বর্তিকা হিসেবে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।

লেখক ছায়েদুর রহমান
৫৫ সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।