সর্বশেষঃ

“মহীয়সী নারী মজিদা বেগম এবং নারী উন্নয়ন”

শতাব্দীকাল আগে এক বাঙালী কবি উচ্চারণ করেছিলেন, “না জাগিলে আর ভারত ললনা, এ ভারত আর জাগে না”। আজ আমারও বলতে ইচ্ছা করছে, ‘না জাগিলে আর বঙ্গ ললনা, এ বঙ্গ আর জাগে না’। সমাজের নারী পুরুষের মিলিত স্রোতে কর্মধারায় সকল প্রকার উন্নতি সাধিত হয়। নারী সমাজ জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জাতীয় জীবনে তাদের যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তেমনি তাদের অধিকার রয়েছে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে নারীর ওপর, তেমনি নারীদের অধিকার রয়েছে তোমাদের ওপর।” সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অবধি নারী পুরুষের সম্মিলিত শ্রম ও চেষ্টায় আমাদের সমাজের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি নির্ভরশীল। তাই তো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, “কোনো কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি, প্রেরণা দিয়েছে শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষ্মী নারী।” মানুষ মানুষকে ভালবাসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সব সময় তেমন দেখা যায় না। আবার বিভিন্ন যুগে এমন মানুষও পৃথিবীতে আসেন যারা মানুষের সেবাতেই মনপ্রাণ সব ঢেলে দেন। ভালোবাসা দ্বারা তারা জয় করে নেন পৃথিবী।
মজিদা বেগম ছিলেন তেমন একজন অসাধারণ মানব দরদি। এই মহীয়সী রমনী বর্তমান বরগুণা জেলার বিষখালী নদীর তীরে বামনা নামক স্থানে ‘খন্দকার ’ উপাধিধারী সম্ভ্রান্ত এক সৈয়দ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্য নাম ছিল মজিদা। তাঁর পিতার নাম ছিল মরহুম খন্দকার আবুল হাসান। তিনি অত্যন্ত স্বাধীনচেতা লোক ছিলেন। আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে তিনি মাথা নত করেননি। তিনি নিষ্ঠাবান সমাজসেবক ছিলেন। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সহ অন্যান্য নেতাদের সাথে তিনি স্বদেশী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। পেশা জীবনে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। মহীয়সী মজিদা বেগমরা ছিলেন পাঁচ বোন ও তিন ভাই। বড় ভাই হলেন কে এস হোসেন। তিনি ছিলেন বি আই ডব্লিউটিসি-এর সিনিয়র অফিসার। তাঁর মেঝ ভাই মাহবুব হোসেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ছোট ভাই শাহাদাৎ হোসেন দৈনিক ইত্তেফাকের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন।
মজিদা বেগম ছোটবেলা থেকে সকলের খুব আদরের ছিলেন। মজিদা বেগম বামনা সরোয়ারজান হাইস্কুলে
পড়ালেখা করেছেন। তখণকার দিনে গ্রামের মেয়েদের মেধা বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ না থাকলেও তিনি শিক্ষা জীবনে যথেষ্ট মেধার পরিচয় রেখেছিলেন এবং মেধাবী ছাত্রী হিসেবে পরিচয় লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, “সারাটা জীবন দু’ভাই একসাথে জনগণের অধিকার অর্জনের জন্য সংগ্রাম
করেছি। আমি সংগ্রাম করেছি মাঠে-ময়দানে আর মানিক ভবাই তাঁর ক্ষুরধার লেখনির সাহায্যে।” এই মানিক ভাই আর কেউ নয় তিনি দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের নয়নমনি প্রখ্যাত সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করি। তিনি ছিলেন সত্য, সাহসী ও নির্ভীক একজন মানুষ। সারাজীবন গোড়ামী, শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। কলম ধরেছেন সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পক্ষে। বিপদের মুখে তাঁর কলম যেন আরও ক্ষুরধার হয়ে উঠত।
উপমহাদেশের এই প্রখ্যাত সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সাথে মাত্র ১৪ বছর বয়সে মজিদা বেগম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মানিক মিয়ার পছন্দেই সামাজিকভাবে তাদের বিবাহ হয়। এখান থেকেই শুরু হয় তার সাংসারিক জীবন। মজিদা বেগম ছিলেন আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। আত্মীয়-স্বজনদের সাথে তার আচরণ ছিল চমৎকার। পিতৃকুল ও শ্বশুরকুলের কোন মানুষকে তিনি আলাদা চোখে দেখেননি। তাদের সকলের কথা তিনি ধৈর্যের সাথে শুনতেন এবং প্রয়োজনে পরামর্শ ও সাহায্যের হাত প্রসারিত করতেন। সংসার জীবনে তিনি ছিলেন দৃঢ়। সংসারে খুঁটিনাটি ঝামেলা যে ছিল না তা নয়। তবে সবকিছু বাদ দিয়ে তিনি ছিলেন মানিক মিয়ার ছায়াসঙ্গী। সংসার জীবনে মানিক মিয়া ছিলেন খেয়ালী। সংসার সম্পর্কে তিনি ছিলেন কিছুটা অনভিজ্ঞ ও সরল। ছোট বধূটি হয়ে সংসারে এসে জীবনের শেস মুহূর্ত পর্যন্ত সংসার তরীটির হাল তিনি এমন শক্তভাবে ধরছিলেন যে সংসারে অভাব অনটন, স্বামীর কারাবাস, ইত্তেফাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, আত্মীয়-স্বজনের নানা সমস্যায় তিনি পরম স্বার্থকতা ও সাহসের সাথে তার মোকাবেলা করেছেন। শত ঝড়-ঝাপটায় তিনি ছিলেন হিমালয়ের মত অটল।
সংসার জীবনে মজিদা বেগম দুই পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জননী। তাঁর দুই পুত্র হলেন দেশবরণ্যে ব্যারিস্টার জনাব মইনুল হোসেন ও গণপ্রাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পানি সম্পদ মন্ত্রী জনাব আনোয়ার হোসেন। আর তার দুই কন্যা হলেন মরহুমা আকতারুন নাহার বেবী ও সুলতানা হোসেন রুবী। তিনি তাদের পরম যতেœ বড় করেছেন ও শিক্ষা প্রদান করেছেন। বরণ্যে রাজনীতিবিদরা তাদের সফলকার পিছনে স্ত্রীদের ভূূমিকার কথা বহু জায়গায় উল্লেখ করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলা বহু বছর স্বামীর সাথে জেল জুলুম খেটেছেন।
ভানতে কস্তুরবা গান্ধী তার স্বামী মহাত্মা গান্ধীর সাথে আমৃত্যু ছায়ার মত লেগে ছিলেন। বাংরাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তাঁর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদানের কথা বহুবার উল্লেখ করছেন। কথিত আছে মিস ফাতেমা জিন্নাহকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল তিনি নিজেকে কেন রাজণীতিবিদ পরিচয় দেন ? মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহর মত রাজনীতিবিদকে তিনি বুদ্ধি পরামর্শ ও সহযোহিত দিয়ে পরচালনা করেন। তেমনি মজিদা বেগম তার স্বামী জনাব তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সংসার ও কর্মজীবনে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, যে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন তা না পেলে তার পক্ষে এতখানি প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব হত কি না সন্দেহ। মানিক মিয়া ছিলেন একজন সত্য ও সাহসী সাংবাদিক। তার লেখনির জন্য তাকে অনেকবার কারাবাস করতে হয়েছে। এ সময় মানিক মিয়াকে মজিদা বেগম সাহস ও শক্তি যুগিয়েছেন। যখন সাময়িকভাবে ইত্তেফাক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তখন অগোছালো সংসারের হাল ধরেছিলেন শক্ত হাতে সাহসিকতার সাথে। বাজার, অফিস, দেশভ্রমন সবৃত্র মানিক মিয়ার একান্ত সহচর রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় তিনি ছিলেন স্বামীর প্রেরণার প্রধান উৎস। এজন্য তাকে মানিক মিয়ার প্রেরণাদাত্রী বলে আখ্যায়িত করা যায়।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি করতে পারে না। তাই ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবনে
উন্নয়নের প্রধান শর্ত হল শিক্ষা গ্রহণ করা। তৎকালীন মুসলিম সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত করে রাখা হতো। ধর্মীয় গোড়ামী, কুসংস্কার নারী শিক্ষার প্রধান অন্তরায় ছিল। তেমনি এক সমাজ ব্যবস্থায় জন্ম হয় মজিদা বেগমের। ছোটবেলা থেকে তিনি অনেক মেধাবী ছিলেন। কিন্তু তখনকার দিনে গ্রামের মেয়েদের মেধা বিকাশের তেমন সুযোগ ছিল না। তিনি মাত্র হাইস্কুল পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন। কিন্তু তার মধ্যে শিক্ষা গ্রহণের একটি ব্যকুলতা ছিল। তাই তিনি নারী শিক্ষার স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এছাড়া তিনি গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য করতেন। গরীব ছাত্রীদের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য তাদেরকে অর্থ সহায়তা প্রদান করতেন। তিনি তাঁর অঞ্চলের নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে একজন পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন দয়াশীল প্রকৃতির মানুষ। কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতা, অভাবগ্রস্ত যে কোনো মানুষ তার কাছে সাহা চাইতে আসলে তিনি কখনও তাদেরকে নিরাশ করতেন না। মজিদা বেগম নারী শিক্ষা ও নারী উন্নয়নের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন ধর্মভীরু নারী। তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ভয় করতেন। এবং ধর্মের প্রতি অনুগত থেকে তিনি তার সংসারসহ যাবতীয় যাবতীয় কার্য পরিচালনা করতেন।
পারলৌকিক কল্যাণের জন্য তিনি হজ্জব্রত পালন করেছিলেন। তিনি নিজে তার এলাকায় বহু মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে তিনি অকাতরে দান করেছেন। তিনি গরীব দুখী অসহায় মানুষগুলোর জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন। তিনি তাদেরকে চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তা প্রদান করতেন। হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক এসোশিয়নে তিনি অর্থ প্রদান করতেন। এছাড়া তিনি তার জীবদ্দশায় নানা ধরণের সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে সহায়তা করেছেন।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, “আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি সমৃদ্ধ জাতি দেব।” কারণ একজন শিক্ষিত মা পারে একজন সুশিক্ষিত সন্তান গড়ে তুলতে। মজিদা বেগম ছিলেন তেমন একজন মহীয়সী নারী যিনি শিক্ষা ওসমাজ উন্নয়নের জন্য আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি তাঁর অসমাপ্ত স্বপ্নগুলো পূরণের জন্য তার সুযোগ্য সন্তান মাননীয় মন্ত্রী জনাব আনোয়ার হোসেনকে রেখে গেছেন। তিনি তার মায়ের স্বপ্নগুলো সুষ্ঠু ও সন্দরভাবে পূরণ করে চলছেন। তিনি বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে চলছেন। তিনি মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য মায়ের নামে মজিদা বেগম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও মজিদা বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন যাতে মেয়েরা সঠিকভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তিনি মেয়েদের শিক্ষার জন্য সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা প্রদান করছেন। গরীব মেয়েদের জন্য বিনা বেতনে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।
তিনি দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কারসহ বহু ব্রীজ ও পুল তৈরি করেছেন। এছাড়া তিনি মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতালসহ শিশুদের বিনোদনের জন্য পার্ক ও খেলাধূলার জন্য মাঠ তৈরি করেছেন। মানিক মিয়া অকপটে একথা স্বীকার করতেন যে, তাঁর জীবনের প্রতিষ্ঠা, প্রতিপত্তি সব কিছুর পেছনেই রয়েছে মহীয়সী মজিদা বেগমের অকুণ্ঠ অবদান। তিনি ছিলেন মানিক মিয়ার ছায়াসঙ্গী। বাজার, অফিস, দেশভ্রমণ সর্বত্র মানিক মিয়ার একান্ত সহচর ছিলেন, স্বামীর সকল কাজের প্রেরণার উৎস ছিলেন মজিদা বেগম। জীবনের অন্তিমলগ্নে মানিক মিয়া পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি গিয়েছিলেন একাকী। কিন্ততু সেখানে পৌছামাত্র তিনি তার স্ত্রীকে ফোন করে তার কাছে নিয়ে যান। কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস যে পাশাপাশি থাকা সত্ত্বেও মানিক মিয়ার অন্তিম সময়ে তিনি তার কাছে থাকতে পারেননি। সেটা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ ও আক্ষেপ।
জীবনের শেস মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি এই দুঃখ সবার অজান্তেই বয়ে গেছেন। স্মরণীয় ও বরণীয় মহীয়সী রমনী মজিদা বেগম উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৬ সালের ১৬ জানুয়ারী বেলা ১০.৩০ মিনিটে ঢাকাস্থ পিজি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। আমরা তাঁর আত্মার শান্তি ও কল্যাণ কামনা করি এবং তাঁর অসমাপ্ত কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করি। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। জনশক্তির এই অর্ধাংশকে বাইরে রেখে দেশের উন্নয়ন হতে পারে না। এ অল্প সংখ্যক শিক্ষিতের মধ্যে নারী শিক্ষার হার আরও নগন্য। পুরুষের পাশাপাশি নারীর উন্নয়ন ছাড়া জাতীয় প্রতিভার সামগ্রিক বিকাশ সম্ভব নয়। মহামতি লেলিন বলেছেন, “নারীর সাহায্যে তাঁর চিন্তা ও সচেতনতায় সভ্য সমাজের বিনির্মাণ সুদৃঢ় হতে পারে।” সুতরাং নারীর চিন্তাশীলতা ও সচেতনতা জাতীয় জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যুগ যুগ ধরে বহু মহীয়সী নারী আমাদের দেশ, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অতুলনীয় অবদান রেখে গেছেন। এবং বর্তমানে তারা নিজেদের সগৌরবে কাজ করে চলছে। তাই দেশ ও জাতির উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হলো নারীর উন্নয়ন। তাই উন্নয়নের ধারাকে সচল রাখতে নারী উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত।বাংলাদেশ উদীয়মান বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। কোনো দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো দক্ষ জনশক্তি।
দক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধির জন্য নারী উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। মহামতি লেলিন বলেছেন, “নারীর সাহায্যে, তার চিন্তা ও সচেতনতায় সভ্য সমাজের নির্মাণ সুদৃঢ় হতে পারে। সুতরাং নারীর চিন্তাশীলতা ও সচেতনতা জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাইতো জাতীয় কবি বলেছেন, “বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়োছে নারী অর্ধেক তার নর।” যুগে যুগে বহু মহীয়সী নারীগণ তাদের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা ও কর্মের ফলে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন। তারা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। যেমন-শিক্ষাক্ষেত্রে বেগম রোকেয়া, সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরী, আর্ত মানবতার সেবায় মাদার তেরেসা, সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বেগম সুফিয়া কামাল, সংগ্রামী চেতনায় ইলা মিত্র, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। তাদের অসামন্য অবদান পৃথিবীর মানুষ যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে। তেমনি একজন মহীয়সী নারী হলেন মজিদা বেগম।তিনি নারী শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
মজিদা বেগম ছিলেন একজন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি নির্ভীক ও সাহসী মানুষ ছিলেন। সর্বদা গরীব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তিনি নারী উন্নয়নের জন্য, গরীব মেয়েদের বিদ্যালয়ে পড়ার জন্য সাহায্য করতেন, কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতা, অভাবগ্রস্ত যে কোনো মানুষ তার কাছে সাহায্য চাইলে তিনি কখনও কাউকে নিরাশ করতেন না। এই মহীয়সী নারী তাঁর কর্মের গুণে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

লেখক : মোঃ আতিকুর রহমান
প্রভাষক, অর্থনীতি বিভাগ
ভান্ডারিয়া মজিদা বেগম মহিলা কলেজ
ভান্ডারিয়া, পিরোজপুর।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।