সর্বশেষঃ

চরের মানুষের জীবন: পর্ব-৫

চর কচুয়াখীবাসীর প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্টিকর্তাই একমাত্র ভরসা

চরের মানুষের জীবন: পর্ব-৫

জাহিদ দুলাল ॥ ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর কচুয়াখালী। প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে তেঁতুলিয়া নদীর বুকের এই চরটিতে মানুষ বসবাস করছেন। প্রতিনিয়ত এ চরের মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সঙ্গী করেই দিন পার করে আসছেন। চর কচুয়াখালীবাসী বহু ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও নদীর জোয়ারের অতিরিক্ত পানির সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন। কারণ চরটিতে নেই কোনো বেড়িবাঁধ। এছাড়া কিল্লা না থাকায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় পোষা প্রাণিসহ চরম আতঙ্কে দিন পার করেন চর কচুয়াখালীর মানুষজন।
চরের বাসিন্দা মো. আলমগীর মাতাব্বর, আজিজুর রহমান ও তরিকুল ইসলাম জানান, এই চরে মানুষ পাঁচ হাজার, অথচ একটি মাত্র মুজিব কিল্লা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে এই কিল্লাতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। প্রচন্ড ঝড়, বাতাস ও বৃষ্টির মধ্যে আমরা কেবল মহান সৃষ্টিকর্তাকেই ডেকেছি। ভয়ানক সেই ঝড়ে আল্লাহ-ই আমাদের রক্ষা করেছেন। আগে আমরা ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত জানতে পারতাম না। শুধু আবহাওয়া ও নদীর পানির অবস্থা দেখে বুঝতাম বড় কোনো ঝড় হবে।
তারা আরো জানান, দেশ স্বাধীনের পর চর কচুয়াখালীতে একটি মাটির কিল্লা করা হয়েছিল। এরপর একবার এটি মেরামত করা হয়। কিল্লা নির্মাণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরবাসী তাদের পোষা প্রাণি গরু, ছাগল ও মহিষ নিয়ে এই কিল্লাতে আশ্রয় নিচ্ছে। তবে বর্তমানে ওই কিল্লার পাশাপাশি চরে দুইতলা বিশিষ্ট একটি আশ্রয়কেন্দ্র কাম বিদ্যালয়ের ভবন আছে। তবে চরের মানুষের তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্র ও কিল্লার সংখ্যা অপ্রতুল। ঝড়-বন্যায় সব মানুষ তাদের প্রাণি নিয়ে কিল্লা আর আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে কোনোভাবেই সেগুলোতে ঠাঁই হবে না। কারণ চরে অনেক মানুষ। তাই চরের মানুষের জন্য আরো কয়েকটি আধুনিক কিল্লা ও পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি সাইক্লোনশেল্টার নির্মাণ করা উচিত। যাতে যেকোনো দুর্যোগে মানুষ স্বাচ্ছন্দে এসব কিল্লা ও সাইক্লোনশেল্টারে আশ্রয় নিতে পারে। এছাড়া চরে বেড়িবাঁধ নির্মাণও জরুরি।


মোসা. তানিয়া, শিরিনা আকতার, তছির আহমেদ এবং আবুল বশার বলেন, আইলাসহ বিভিন্ন ঝড়ের সময় আমরা ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আবাসনের ঘরের মধ্যেই ছিলাম। যখন প্রচন্ড বৃষ্টি বাতাস আর ঝড় শুরু হয়, তখন ঘরে বসে সকলে চিৎকার করে মহান আল্লাহকেই ডেকেছি। মানুষের তুলনায় চরে মুজিব কিল্লা ও আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা খুবই কম। যার জন্য ঝড়ের সময় সবাই মিলে সেখানে গেলে কেউই ভালোভাবে থাকতে পারছে না। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরবাসী ও পোষা প্রাণির নিরাপত্তার কথা ভেবে এখানে আরো মুজিব কিল্লা ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, আমরা লক্ষ্য করেছি- প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্গম চর কচুয়াখালীর মানুষের জানমাল রক্ষায় তেমন কিল্লার ব্যবস্থা নেই। যার জন্য চরে নতুন করে আরো কিল্লা নির্মাণের জন্য আমরা জমি নির্ধারণের চেষ্টা চালাচ্ছি। জমি পেলেই কিল্লা নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।