সর্বশেষঃ

ভোলার সংবাদকর্মীদের সহযোগীতায় ১০ বছর পর আপন ঠিকানা ফেলেন বরগুনার তানিয়া

ইয়ামিন হোসেন : বাল্যবিবাহ যে সামাজিক ব্যাধি সেটা আবারো প্রমান হলো তানিয়ার (ছন্দনাম)  বেলায়। মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রতিবন্ধী ছেলের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া তানিয়া ২০ বছর বয়সে হয় দুই সন্তানের জননী। দুই সন্তানের জননী হবার পরেই ঘটে বিপত্তি। সন্তানদের চেহারায় তানিয়ার ননদের ছেলের মিল দেখে  অনেকের কাছ থেকেই কটুকথা শুনতে হত।  সন্তানদের পরিচয় ঠিক নাই’- এমন কথাও কেউ কেউ বলেছে। বাবা কে এ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।  তখন কষ্ট লাগলেও ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি বলে জানান তানিয়া তবে সবসময়ই মনে হতো আমার বাবা-মা বেঁচে আছেন এখনো। তবে তানিয়ার বাবা গরীব ও দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকায় সমাজের কোথাও ঠাঁই মেলেনি তানিয়ার। তাই একবার আত্মহত্যা করতে গিয়েও বেঁচে যান। অবশেষে হাসপাতাল থেকেই স্বজনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে ঢাকায় চলে যায় তানিয়া।
অভাগার কপাল সেখানেও খুলেনি। ঢাকায় গিয়ে আশ্রয় নেন জনৈক এক মহিলার কাছে। গৃহকর্মীর কাজে নামে তানিয়াকে ঐ গৃহকর্তী যৌন কর্মে লিপ্ত করে খদ্দেরের কাছে রাত্রি যাপন করতে যেতে বাধ্য করেন। এ ভাবেই ১০ বছর অন্ধকার জগতে কেটে যায় তানিয়ার জীবন। সেখান থেকে তাকে কৌশলে উদ্ধার করেন এ প্রতিবেদকসহ সংবাদ কর্মীরা। উদ্ধার করার পরে এক মাস তাকে নিরাপদ স্থানে থাকার ব্যাবস্থা করেন। সেখানে তার পরিবারের সন্ধান করতে দির্ঘদিন তাকে জিজ্ঞেস করলেও সামাজিক ভাবে তাকে কেউ মেনে না নেয়ার ভয়ে পরিচয় গোপন রাখেন তানিয়া।
অবশেষে ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ তানিয়া তার পিতার নাম ও গ্রামের নাম জানালে সংবাদকর্মীরা খুজে পায় তার গ্রামের মেম্বার হারুনকে। মেম্বার হারুন বলেন বিগত এগার বছর আগে আমার প্রতিবেশী তানিয়া হাড়িয়ে গেছে অনেক খোঁজ করেও তাকে উদ্ধার করা যায়নি তবে হারানোর বিষয়ে তার পরিবার গরীব বলে কোন আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করতে যায়নি।
এদিকে তানিয়া আরও বলেন, যারা আমাকে আশ্রয় দিয়ে অবশেষে কুকর্মে লিপ্ত করেছে আমি তাদের বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
আমার সন্তানেরা সবসময়ই তাদের নানাবাড়ি যেতে চাইতো। আমি তাদের জন্য হলেও আমার পরিবার ফিরে পেতে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতাম। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। আপনাদের মাধ্যমে আমি আমার পরিবারকে ফিরে পেয়েছি। আমার বাকীজীনের স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে।
তানিয়ার চাচা ইসমাইল  বলেন, মেয়েকে হারানোর পর অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। আল্লাহর কাছে প্রতিদিনই চাইতাম যেন মেয়েকে ফিরে পাই। শেষ বয়সে এসে মেয়েকে পেলাম। আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া। মেয়ের পরিবারের সবাই খুশি হয়ে আপাদের জন্য দোয়া থাকবে।
গত ১৮ ডিসেম্বর তানিয়ার চাচা, চাচাতো ভাই,ও বোন জামাই তানিয়া কে নিয়ে যান আপন ঠিকানায়।
এসময় তানিয়া কে এক মাস পালন করা আনোয়ার হোসেন গাজীর পরিবারে নেমে আসে এক কান্নার রোল। তানিয়া কে পেয়ে খুব আনন্দে দিন কেটেছে আনোয়ার হোসেন গাজীর ৬ বছরের শিশু মারিয়ার। তানিয়া চলে যাবে শুনতেই বাঁধভাঙ্গা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মারিয়া।
প্রিয় পাঠক 🙁 ছন্দনাম) তানিয়ার আত্মসম্মানের জন্য পুরো ঠিকানা গোপন রেখেছি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।