সাপের কামড়ে মৃত্যু বাড়ছে, অ্যান্টিভেনম সহজলভ্য হোক ॥ বাড়াতে হবে সচেতনতা

সাপের কামড়ে মৃত্যু। গত এক মাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের খবর আসছে গণমাধ্যমে। দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, কুষ্টিয়ায় সাপের কামড়ে এক মা ও তাঁর শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে। খবরে আরো বলা হয়েছে, ওই মাকে ঘুমের মধ্যে সাপে কামড় দেয়। কোনো পোকামাকড় কামড় দিয়েছে ভেবে তিনি আবার ঘুমিয়ে পড়েন। পরে মেয়েকে সাপে কামড় দিলে বিষয়টি বুঝতে পেরে চিকিৎসার জন্য দ্রুত তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা শুরুর আগেই প্রথমে মেয়ের এবং পরে মায়ের মৃত্যু হয়। অসচেতনতার কারণেও অনেকের মৃত্যু হয়।
সম্প্রতি যেমন ভোলার লালমোহন উপজেলার এক নারী অন্ধকারে ইঁদুর ভেবে মুরগির খোঁপে হাত দিয়ে সাপ চেপে ধরে। তখন ওই সাপ তাঁর ডান হাতের তালুতে কামড় দেয়। তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ভোলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
গত সপ্তাহে ফরিদপুরে দুই দিনে সাপের কামড়ে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। কয়েক বছর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর পাঁচ লাখ ৮৯ হাজার ৯১৯ জন সাপের কামড়ের শিকার হয়। এদের মধ্যে বছরে মারা যায় ছয় হাজার ৪১ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাপে কামড়ালেই মৃত্যু হবে এমন ধারণা ভুল। তাঁদের মতে, বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ সর্পদংশনের ক্ষেত্রে সাপ থাকে নির্বিষ। তাঁরা বলেন, সাপে কামড়ালে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সাপে কাটা পেশির নড়াচড়া যত কম হবে, বিষ তত কম ছড়াবে। কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। ওঝা বা ঝাড়ফুঁকের অপেক্ষা করে কালক্ষেপণ করা যাবে না। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায় কাউকে সাপে কামড়ালে সবার আগে সাপুড়ে বা ওঝার খোঁজ করা হয়। সাপে কামড় দিয়েছে এমন রোগী নিয়ে নানা অপচিকিৎসাও করা হয়। যেমন-পাবনায় এক ছাত্রলীগ নেতাকে সাপে কামড়ালে প্রথমে ওঝার সন্ধান করতে থাকে পরিবারের সদস্যরা। রাতে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। সম্প্রতি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক সাপুড়েরও মৃত্যু হয়েছে।
সাপ যদি কামড়ায়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা হলে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। কিন্তু অ্যান্টিভেনম কি সহজলভ্য ? সম্প্রতি রাজবাড়ীর পাংশায় সাপের কামড়ে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর পর অভিযোগ ওঠে দুই হাসপাতাল ঘুরেও অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন পাওয়া যায়নি। মানুষ সাপের কামড় থেকে দূরে থাকতে সচেতন হবে, অ্যান্টিভেনম সহজলভ্য হবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।