হুমকির মুখে পেশা ॥ বেসরকারি শিক্ষকদের সহায়তা করুন

করোনার ধাক্কায় দেশের অর্থনীতিই শুধু নয়, দেশের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থাও হুমকির মুখে। গত ১৫ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বিধি-নিষেধের কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারছে না। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, আক্রান্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলেই শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা চিন্তা করা যেতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের হার সেই পর্যায়ে নামেনি। ফলে শিক্ষার্থীদের ঘরে বসেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
অন্যদিকে শিক্ষকরাও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা করোনাকালে টিকে থাকলেও বেকায়দায় পড়েছেন নন-এমপিও ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারাও বিপাকে পড়েছেন। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে কিছুদিন প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাঁদের সে চেষ্টাও বেশিদিন টিকিয়ে রাখা যায়নি। ফলে শিক্ষকদের পাশাপাশি অনেক উদ্যোক্তাও পেশা বদল করেছেন। দুঃখজনক হচ্ছে, মানুষ গড়ার কারিগরদের এমন সব পেশায় যেতে হয়েছে বা হচ্ছে, যা তাঁদের জন্য অবমাননাকর।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের অনেকে রাইড শেয়ারিং করছেন, অনেকে হয়েছেন রংমিস্ত্রি। রাস্তায় ওষুধ ফেরি করা থেকে শুরু করে মুদি দোকানের কর্মচারীর চাকরি নিয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ দিনমজুরি করছেন, এমন খবরও এসেছে গণমাধ্যমে। আগে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার খবর পাওয়া যেত। এখন শিক্ষকদের ঝরে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী ?
সরকার এমপিওভুক্তির জন্য যে নিয়ম করেছে, সেই নিয়ম মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা যেতে পারে। সুখের কথা, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রের হার্ডকপি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্তভাবে দুই হাজার ৬১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের শেষ দিকে বিশেষ ক্ষমতাবলে সরকার আরো সাতটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছিল। দুই বছর আগেই মাত্র দুই হাজার ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান যোগ্য হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ আগামী অর্থবছরে স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তির জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল। তবে পুরোটা না পাওয়া গেলেও এমপিওভুক্তি খাতে বরাদ্দ মিলেছে বলে জানা গেছে।
এখন প্রক্রিয়াটা চালু রাখা হোক। একই সঙ্গে সরকার এমপিওভুক্তির জন্য নতুন যে নিয়ম করেছে, সেই নিয়ম মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যোগ্যতা অর্জন করলে নতুন এমপিওভুক্তি হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কী হবে ? নন-এমপিও ও বেসরকারি শিক্ষকদের পাশে কিভাবে দাঁড়ানো যাবে, সেই পথ খুঁজে বের করুন। শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ান।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।