সর্বশেষঃ

বাংলাদেশে প্রথম কোনো প্রধান বিচারপতির সাজা

এসকে সিনহার ১১ বছরের কারাদন্ড ॥ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। অন্য আসামিরা হলেন সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়। মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম রায় ঘোষণার সময় আসামিরা পলাতক থাকায় এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এর আগে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় মঙ্গলবার তাকে ১১ বছরের কারাদ- দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে তাকে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম বেলা ১১টা ৩ মিনিটে আলোচিত মামলাটির রায় পড়া শুরু করেন। রায় ঘোষণা করেন বেলা সোয়া ১টার দিকে।
১৮২ পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়, অর্থ পাচারের দায়ে সিনহাকে ৭ বছর কারাদ- দেওয়া হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে অর্থ আত্মসাতের দায়ে ৪ বছর কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আদালত বলেছেএন, সাজা চলবে একসঙ্গে। ফলে সিনহাকে কারাগারে থাকতে হবে ৭ বছর।
সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী শান্ত্রী রায়। এর মধ্যে এ কে এম শামীমকে চার বছর ও বাকিদের ৩ বছর করে কারাদ- দেওয়া হয়েছে। বেকসুর খালাস পেয়েছেন টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান এবং একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা।
এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুদক এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ গত ৫ অক্টোবর ধার্য করেন। কিন্তু ওইদিন বিচারক অসুস্থ হয়ে ছুটিতে থাকায় তা পিছিয়ে ২১ অক্টোবর ধার্য করা হয়। গত ২৯ আগস্ট মামলাটিতে পলাতক আসামিরা ছাড়া আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। গত ২৪ আগস্ট মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলায় ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। গত বছরের ১৩ আগস্ট বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম মামলাটির চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া : আর্থিক কেলেঙ্কারিতে এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো প্রধান বিচারপতি সাজা হলো। এর আগে বিশ্বের কোনো দেশে এমন নজির আছে কিনা তা বলতে পারছেন না কোনো আইনজীবী। পলাতক থাকায় এ মামলায় এসকে সিনহার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না।
মঙ্গলবার রায় ঘোষণার পর আসামিদের আইনজীবী মো. শাহীনুর ইসলাম অনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতির সাজা হওয়াটা যে কোনো বিচারব্যবস্থার জন্য কোনো সুখদায়ক বিষয় না। আমরা যারা এই অঙ্গনে আছি, যারা বিচারব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত, যখন প্রধান বিচারপতির সাজা হচ্ছে কোনো মামলাতে, তখন আলটিমেটলি নেতিবাচক প্রভাব বলেই মনে করি।
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বের কোথাও প্রধান বিচারপতির আর্থিক কেলেঙ্কারির সাজা হয়েছে কিনা, সেটি জানি না। তবে উন্নত দেশে অনেক সময় দেখেছিÍ একজন বিচারপতিকে ইমপিচমেন্ট করা হয়েছে। উনি স্কুলজীবনে হাশিশ (এক ধরনের মাদক) খাইতেন। কিন্তু আর্থিক কেলেঙ্কারি বা মানিলন্ডারিংয়ের জন্য দুর্নীতির দায়ে বিশ্বের কোনো দেশে প্রধান বিচারপতির বিচার হয়েছে কিনা বলতে পারব না। তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের দেশে এর আগে হয়নি, এটি আমরা জানি। পাকিস্তান আমলেও এটি হয়েছে কিনা জানা নেই। ভারতবর্ষে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ইলিগেশন আসছে, কিন্তু মানিলন্ডারিং বা দুর্নীতির জন্য উনার বিরুদ্ধে সাজা হয়েছে, এটি আমার জানা নেই।
দুদক আইনজীবীর কাছে এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান এসকে সিনহা যখন (২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর) বিদেশে চলে যান, তখন তিনি বলেছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি যখন বিচার পায় না, তখন সাধারণ মানুষ কীভাবে বিচার পায়।
জবাবে খুরশিদ আলম বলেন, তত্ত্ব, উপাত্ত ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এ রায় দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচার পাননি যখন বলেছিলেন, আমার জানা মতে, তখন তো উনার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। উনি কীসের বিচার পাননি তা তো ব্যাখ্যা করেননি। উনি বলেছেনÍ শুধু বিচার পাননি। উনি কার কাছে বিচার চেয়েছিলেন। কোন আদালতে গিয়েছিলেন। সেটির তো তিনি কোনো ব্যাখ্যা দেননি। উনি শুধু বলেছেনÍ প্রধান বিচারপতি বিচার পায়নি। কী বিচার পায়নি, সেটি তো আমরা জানি না।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।