জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৮৯

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী : ইংরেজদের শোষণ মুক্তির জন্য আন্দোলনের পর শুরু হলো পাকিস্তানীদের শোষণ মুক্তির আন্দোলন। এ আন্দোলনের মূলে ছিল ১৯৫২ সালের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার দাবী। ইয়াহিয়া খান উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য প্রত্যেক্ষ ঘোষণা করলে এ দেশের আপামর জন সাধারণ তার প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু পাকিস্তানী সরকার সে দাবী প্রত্যাখ্যান করে। জন সাধারণ স্বীয় দাবির পক্ষে অনড় থেকে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী হরতাল ডাকে। অপরদিকে পাকিস্তান সরকার ২০ ফেব্রুয়ারী থেকে এক মাস সর্বত্র হরতাল, সভা, মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। এত বাঁধার মুখেও ২১ তারিখের হরতাল সফল করার জন্য ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে একের পর এক মিছিল বের হতে থাকে। ঠিক এ রকম অবস্থায় উস্কানীমূলক ভাবেই ছাত্র জনতার মিছিলের উপর গুলি চালানো হয়।
ধূলোয় লুটিয়ে পড়ে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ নাম না জানা আরো অনেক তরুণের তাজা প্রাণ। ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হল। হত্যাকান্ডের এই খবর শহরে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষের মছিল সমাবেশে ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত হয়ে উঠে। যখন গুলি হয়, তখন পরিষদ ভবনে চলছিল ইস্টবেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বিলির বাজেট অধিবেশন। বিকাল সাড়ে ৩টায় অধিবেশন শুরু হলে স্পিকার আব্দুল করিম আসন গ্রহণ করা মাত্র দাঁড়িয়ে যান মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ। তিনি দাবী করেন যে, অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে লিডার অব দ্যা হাউস অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিনকে ঘটনাস্থলে যেতে হবে। হতাহত ছাত্রদের অবস্থা স্বচক্ষে দেখে এসে পরিষদে বিবৃতি দিতে হবে। কিন্তু সে দাবীর প্রতি কর্ণপাত করা হয় নি।
পর দিন ২২ ফেব্রুয়ারী আবারও হরতাল এবং গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সংবাদপত্রে ৩জন নিহত এবং ৩০০ জন আহত ও ১৮০ জনের গ্রেফতারের খবর ছাপা হয়। রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে। সচিবালয়ে কোন কাজকর্ম হয় না। রাষ্ট্রভাষা বাংলা দাবীতে সারাদেশে, শহর ও গ্রামে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন সংগ্রাম। অন্যদিকে চলতে থাকে দমন-নিপীড়ন।
রাজনৈতিক নেতাদের অনেককেই তখন গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তাতেও মাতৃভাষার দাবীতে বাঙ্গালীর আন্দোলন স্তব্ধ করা যায় নি। এমতাবস্থায় ২৪ ফেব্রুয়ারী গভর্নর ফিরোজ নূন বিশেষ আদেশ বলে প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন বন্ধ করে দেন। নূরুল আমিন সরকারের পতন হলেও রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে বহুদিন। তবে ৫২- এর সেই রক্তঝরা ২১ শে ফেব্রুয়ারী হয়ে ওঠে গোটা বাঙ্গালীর শোক, স্মরণ ও সংগ্রামের দিন।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো
একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।
এই গান, এই চেতনা আন্দোলিত, আবেগ স্পন্দিত করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্ব শ্রেণীর মানুষকে। প্রতি বছর দেশব্যাপী সেকরকারীভাবে উদযাপিত হতে থাকে শহীদ দিবস ২১ শে ফেব্রুয়ারী।

 

(চলবে——)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।