সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৫০

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

 (গত পর্বের পর) : তাড়াতাড়ি পা চালালাম। বাস স্টপেজ এসে বাস ধরলাম। সেদিন বাস ভর্তি লোক, তিল ধারণের জায়গা নেই। অল্পক্ষণের ভিতর বাস কনকোরডিয়ার কিছু আগে আমাকে এক বাস স্টপেজে ছেড়ে দিল। আমি জোড়ে পা চালিয়ে ভার্সিটিতে পৌছে গেলাম। কমন রুমে কিছুক্ষণ বসে ক্লাশে গেলাম। ক্লাশে যেন মন দিয়ে পড়াতে ভাল লাগছিল না। মনটা কেমন যেন উড়– উড়– ভাব, তবু পড়াচ্ছিলাম। এমনিতে ভাল ঘুম হয় না, তারপর হেমন্ত ওর অসুখের জন্য কোন বিশ্রাম না পাওয়ার শরীরটা ঝিম ঝিম করছিল। কমন রুমে এসে দোলার চিঠির খামটা খুললাম। দাদু তুমি চিঠি দাওনা কেন ? প্রথম লাইনেই একথা, এখানে তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই, তুমি আমায় ভুলে যেওনা। চিঠি পড়ে আমি হাসলাম। পাগলি মেয়ে।
বিজন, অমিয়, দেবতোষ বলল কি প্রশান্ত বাবু, চিঠি পড়ে হাসছেন যে বড়। আমি বললাম, আমার নাতনীর চিঠি। অমিয় বলল কি মিষ্টি খাওয়ার সু-খবর আছে নাকি ? আমি বললাম, আমার কাছে আসবে ডেলিভারী হতে। জানেন দোলা কি লিখেছে, আমি নাকি ওকে ভুলে গেছি। আমি তাড়াতাড়ি উঠে পরলাম। বললাম শরীর ভাল নেই, প্রেসারটা বাড়ল না কি ? যা ধকর যাচ্ছে, এই বলে কেটে পরলাম। বাসায় এসে ক্যামেলিয়ার চিঠিটা খুলে পড়লাম। অনেক কথা। ওর স্বামী দেবপ্রিয় এখন অসুস্থ্য হয়ে বোম্বের এক বিখ্যাত হাসপাতালে আছে। ও নিজেও ওখানকার ইউনিভার্সিটিতে প্রফেসারি করে। ও চায় বাংলাদেশে ওখানকার জনগণের জন্য একটা হাসপাতাল করতে, বা সেখানকার সরকারের হাতে একটা চেক দিয়ে দিবে। নাম হবে সুশান্ত চিলড্রেন হোম। এমনি কলেজ জীবনের কথা বা ঢাকার ইউনিভার্সিটির কথা, সেই জগন্নাথ হল, মুসলিম হল ও ঢাকা হলের চার পাশ দিয়ে ঘোরা-ঘুরির কথা লিখেছে।
দেবপ্রিয় কিছুটা আরোগ্যর পথে। দেবপ্রিয় নিজেই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, সুশান্ত ক্যামেলিয়াকে বাঁচাতে গিয়ে সমুদ্রের জল থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেই দেহত্যাগ করল। এযে কত বড় হৃদয়ের আত্মোৎসর্গ, এরকম লোক জগতে বিরল। দেবিপ্রিয় নিজেই সুশান্তের কথা বলতে গিয়ে শ্রদ্ধা করে কথা বলে। বলে আমি তোমার স্বামী, আমিত পারলাম না গভীর সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের মাঝে তোমাকে উদ্ধার করার জন্য বিশাল মনের উদারতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরতে। সুশান্ত অনেক মহৎ, অনেক উদার, অনেক উজার, বিশাল হৃদয়ের। সেখানে নেই কোন পঙ্কিলতা, নেই জটিলতা, কুলষতা নেই। জান প্রশান্ত, সে নিজেই মুক্ত হস্তে সুশান্তর নামে যে হাসপাতাল হবে সেখানে টাকা ব্যয় করতে। চিঠিটা পড়ে আনন্দে আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল। সুশান্তকে আমি কত ভালবাসি। তা সুশান্ত জানত, জানতে বলেই টরেন্টো থেকে অসুখ নিয়ে এসে মন্ট্রিলে আমার কাছে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে।
ওর নামে কিছু হোক এত আমার আনন্দের ও গৌরবের কথা। সুশান্ত অমর হোক, মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকুক। উমাকে ডাকলাম, উমা। উমা দৌড়ে এল কি দাদা। বললাম, সুশান্তর বান্ধবী সুশান্তর সাথে একসঙ্গে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ত। ও আমার মুখের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকল। আমি আরও স্পষ্ট করে বললাম, ঐযে ক্যামেলিয়া, যার সাথে ডিজনীতে দেখা হয়েছে, যে মায়ামি সমুদ্রের ¯্রােতে ¯œান করতে গিয়ে ডুবে যাচ্ছিল, সুশান্ত সমুদ্রের জলে ঝাপিয়ে পরে যাকে উদ্ধার করে নিজে অসুস্থ হয়ে দেহত্যাগ করল। এতগুলি কথা একসাথে বলে আমি হাপিয়ে পরেছিলাম। উমা ফুলে ফুলে কাঁদতে লাগল। আমি বললাম, আর কেঁদনা বোন, কেঁদনা আজ হাঁস। উমা আমার মুখের দিকে আমার চেয়ে থাকল। কেন দাদা ? আমি বললাম, সেই সুশান্তর বান্ধবী ক্যামেলিয়ার স্বামী দেবপ্রিয় বোম্বে বা বাংলাদেশে সুশান্তর নামে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায়ে একটি হাসপাতাল করবে বলে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মানুষ মরে যায়, কিছুই চিরস্থায়ী নয়, তবু কজন অমর হয় থাকে, বা কজনকে অমর করে রাখতে চায় ? কজনের ভাগ্য এনে দেয় যশের মুকুট। সুশান্ত বড় কপালে, উমার এবার তার স্বামীর যৌরবে মুখ-খানা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আজ সুশান্তর গৌরবে আমি গৌরব বোধ করছি।

(চলবে————)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।