সর্বশেষঃ

জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ

ডেস্ক রিপোর্ট ॥ বৈশাখের প্রচন্ড তাপদাহ। সেই তাপদাহকে উপেক্ষা করে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে উপস্থিত হাজারো জনতা। শ্বাসরুদ্ধকর বলী খেলার ফাইনালে উপস্থিত দর্শকের যেন তর সইছিল না। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে জব্বারের বলীখেলা শরু হয় বিকেলে ৪টা ২৫ মিনিটে। আর বলী খেলার ফাইনালের মঞ্চে বিকেলে ৫টা ২৯ মিনিটে আসেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শরীফ (বাঘা শরীফ) ও রানার আপ রাশেদ। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় লড়াই। ঘামে ভিজে, রোদে পড়ি অস্থির। তবু কেউ কাউকে ছাড় দিতে রজী নয়।
১১মিনিটেও কেউ কাউকে ধরাশায়ী করতে পারেননি। ১১ মিনিট পর রাশেদ নিজ থেকে হার মেনে নেন। এরমধ্যে দিয়ে ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলার ১১৫তম আসরের চ্যাম্পিয়ন হন কুমিল্লার হোমনার শরীফ বলী (বাঘা শরীফ)। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টা ২৫ মিনিটে শুরু হয় ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলার ১১৫তম আসরের ফাইনাল।
খেলায় মোট ৮৪ জন বলী অংশগ্রহণ করেন। চ্যালেঞ্জ রাউন্ড শেষে করে সেমিফাইনে উঠেন রাসেল, রাশেদ, শরীফ ও সৃজন চাকমা। কিন্তু সেমিফাইনালে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার সৃজন চাকমার সঙ্গে লড়াই করে ফাইনালে উঠেন কুমিল্লার সদরের রাশেদ। অপর সেমিফইনালে সীতাকুন্ডের রাসেল বলীকে সহজেই হারিয়ে ফাইনালে উঠেন কুমিল্লা হোমনার শরীফ। ফাইনালে রাশেদ আর শরীফের মধ্যে চলে তীব্র লড়াই। খেলা চলে ১১ মিনিট ধরে। ১১ মিনিট পরে রাশেদ নিজ থেকে হার মেনে নয়। এতে রেফারী শরীফকে বলী খেলার নতুন চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে এই আসরের শক্তিশালী পুরুষ হিসেবে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন ট্রফি আর সঙ্গে ৩০ হাজার টাকার প্রাইজমানি জিতে নেন বাংলাদেশ কুমিল্লার শরীফ। আর রানার আপ হন কুমিল্লার রাশেদ। গতবারের মতো এবারও প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হন খাগড়াছড়ির পানছড়ির সৃজন চাকমা।
খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন শরীফ বলেন, জব্বারের বলী খেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য নিজেকে অনেকদিন ধরে প্রস্তুত করছি। আজকে খেলায় জয়ী হতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। ভবিষ্যতেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো। এর আগে জব্বারের বলীখেলার ১১৫তম আসরে মোট ৮৪ জন বলী ঢাক ও নৃত্যের তালে তালে মঞ্চ প্রদক্ষিণ করেন। বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম নগরীর ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ.বি. এম ফজলে করিম চৌধুরী এম.পি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের জন্য আজকে একটি বিশেষ দিন। এই দিনের জন্য মানুষ অপেক্ষা করে। চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্য জব্বারের বলী খেলা। জব্বারের বলী খেলার মতো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে দেশের যুবসমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে স্থানীয় আব্দুল জব্বার সওদাগর লালদীঘি মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। পরে আব্দুল জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিত হয়, যার জনপ্রিয়তা এখনো অক্ষুন্ন রয়েছে।বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১২ বৈশাখে লালদীঘির ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এই খেলা, খেলার আগের দিন থেকে শুরু করে পরদিন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী লালদীঘি ময়দান ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বসে বৈশাখী মেলা। এবারের বৈশাখী মেলা শেষ হবে শুক্রবার।
আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভপতি জহুর লাল হাজারী বলেন, নতুন প্রজন্ম যেন দেশীয় খেলার প্রতি আশক্ত হয়ে সেই আহ্বান করবো। কিশোররা যাতে গ্যাং কালচার ও মাদক থেকে আকৃষ্ট হয়। আমাদের আয়োজন সফল হয়েছে। সারাদেশ থেকে বলীরা খেলার জন্য নাম নিবন্ধন করেছেন। বৈশাখী মেলায় চট্টগ্রামের নানা বয়সী মানুষ অংশগ্রহন করছে।
বলী খেলা সামনে রেখে এর মধ্যেই পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দোকানিরা। বৈশাখী মেলায় হরেক রকম পসরা নিয়ে ভিড় করেছেন দোকানিরা। আন্দরকিল্লা থেকে কোতোয়ালি মোড়, আসাদগঞ্জ থেকে সিনেমা প্যালেস পর্যন্ত চলছে মেলার বেচাবিক্রি। বিক্রি হচ্ছে হাতপাখা, শীতল পাটি, মাটির কলস, চুড়ি, ফিতা, রঙিন সুতা, হাতের কাঁকন, নাকের নোলক, মাটির ব্যাংক, ঝাড়ু, খেলনা, ঢোল, বাঁশি, বাঁশ ও বেতের নানা তৈজস, কাঠের পুতুল, নকশিকাঁথা, প্লাস্টিকপণ্য, মুড়ি-মুড়কি, লাড্ডুসহ নানা সামগ্রী।
আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি চসিকের আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, বৃটিশ আমল থেকে শুরু হয়ে এই বলী খেলা ও মেলা শুধু করোনার সময় একবছর বন্ধ ছিল। বলীখেলা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। মেলায় মাটির জিনিস নিয়ে আসা ব্যবসায়ী মুরাদ হোসেন বলেন, ‘টব শোপিসসহ মাটির নানা রকম জিনিস নিয়ে এসেছি। এখানে ভালো বিক্রি হওয়ায় গত আট বছর ধরে মেলায় আসছি। এবছর প্রচন্ড গরমে ক্রেতা কেমন হয় তা নিয়ে কিছুটা টনশনে আছি।
মেলায় দা-হাড়ি পাতিল নিয়ে ঢাকা থেকে এসেছেন হৃদয় নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এবার মেলায় গরমের কারণে অন্যবছর থেকে মানুষ অনেক কম হয়েছে। সেই কারণে বিক্রি কম। তবে বলী খেলার দিন মানুষ কিছুটা বেড়েছে। এর আাগে বলী খেলার এবারের আসর থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেন গতবারের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলী ও রানার আপ তরিকুল ইসলাম জীবন বলী।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।