জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৬৭

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর) : বিদেশী উন্মাদ হয়ে গেল। এত সুন্দর মানুষ হাসতে পারে ? এ হাসি মানুষের নয়, এ হাসি কোন স্বর্গের দেবীর। বিদেশী আসত আকাশীর কাছে, কত বনফুলের মালা নিয়ে। দু’জনের পদ্মার জলে পা ডুবিয়ে চেয়ে থাকত সীমাহীন অথই পানির দিকে। হারিয়ে যেত মন যৌবন। দু’জন দু’জনকে ভালবাসে। বিদেশী ছিল একজন জ্ঞানী তুখোড় ছেলে। পদ্মা কোনদিন ভাবে নি যে ছেলে এত ভাল সে এমন একটি কাজ করতে পারে। দু’জন পদ্মার পারে হাতে ধরাধরি করে ঘুরে বেড়াত। পদ্মা কোন দিন না করে নি। পদ্মা ভাবত বেড়াক না, সঙ্গী সাথীহীন পেয়েছে একজন সাথী থাক না একটু আনন্দে।
দু’জন হাসত, কথা বলত। রাত নেই, দিন নেই। কথার বিরাম নেই। স্রোতের মত চলছে সে কথা। যৌবন যে কোন সমাজ মানে না। বাধা মানে না, বিঘœ বিপত্তি মানে না, এ কথা পদ্মা ভুলে গিয়েছিল। মা হয়ে স্নেহের প্রবল আকর্ষনে সব কিছু তলিয়ে দেখবার সময় তার ছিল না। সে দিনটার কথা আজও পদ্মার মনে পড়লে না কেঁপে উঠে, মাথা ঘুরে যায়। শরতের স্বচ্ছ আকাশ, ভাদ্রের মাতাল করা পদ্মার বুকে জলের উচ্ছ্বাস, জালে স্রোত  কলকল ছলছল করে বয়ে চলছে জানা অজানার দেশে। সে কি উচ্ছ্বাস ! যেন ভেঙ্গে চুরে গুড়ো করে ছুটে যাচ্ছে, মিলনের পানে।
আকাশী ও বিদেশী তা দেখে হেসে হেসে গড়িয়ে পড়ছে। আকাশে সেদিন বড় করে পুর্নিমার চাঁদ উঠেছিল। মুদ্ধ নেত্রে দু’জনে সে চাঁদের পানে চেয়ে চেয়ে পাগল হয়ে গেল। ভুলে গেল বর্তমান, ভবিষ্যৎ, অতীত। আস্তে আস্তে বিদেশী একটা পাল তোলা নৌকায় আকাশীকে নিয়ে উঠে পড়ল। আকাশী একটুও আপত্তি করল না। যেন কোন চুম্বকের প্রবল আকর্ষণে তার পেছু নিল। রিনিঝিনি করে হেসে উঠল। ঘুমন্ত পদ্মাও যেন চেতনা পেয়ে জেগে উঠল শুধাল কে কে এমন করে হাসে ? এসে দেখল পদ্মা, পদ্মার পাড়ে কেউ নেই। শুধু নির্জন নদীর শুন্য পাড়টা খা খা করছে। পদ্মা কেঁদে উঠল, চিৎকার করে ডেকে উঠল। আকাশ-আকাশী ওরে আয়, আয়, ফিরে আয়, একবার ফিরে আয়, মা একবার ফিরে আয়। কোথায় আকাশী, আর কোথায় বিদেশী। শুধু শুন্য নদীর পাড়ে ভাদ্রের কাঁশবনের কাঁশফুলগুলো রিনিঝিণি করে হেসে উঠল।

 

(চলবে———)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।