জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৩৬

(গত সংখ্যার পর) ঃ কুমার বাহাদুর ভাল বেসেছিল একটি গ্রাম সুন্দর সুঠাম সাবলীল মেয়েকে। এ কথা জানত না রাজপুরি কেউ, জানতেন না রাজমাতা, জানতেন না রাজা বাহাদুর। এমনি রানী বৌমাও জানত না। জানত শুধু রাজ কর্মচারীরা। ক্রমে ক্রমে এ কথা রাজ্যের লোকের কানে উঠল। তবুও কুমার নিরুদ্যম হল না। ঘরে কি না আকাশের চাঁদের মত বৌ ফেলে তিনি মেতে উঠলেন গ্রাম্য সহজ সরল একটি মেয়ের প্রেমে।
মেয়েটি ভালবাসত নিজস্ব গড়া তাদের সংসার, ভাল বাসত গরীব কৃষক স্বামীকে, আর ভালবাসত সমস্ত মনপ্রাণ উজার করে তার সুন্দর ছোট ছেলেটিকে। গোধূলী লগ্নে সংসারের সমস্ত কাজ সেরে কৃষক বৌটি গায়ের পথে পানি নিতে আসত। কুমার তার পিছু নিত, মেঠো সুরের বাঁশি বাজাত। তবুও মেয়েটি কানদিন তার পানে ফিরেও চাইত না। এমনি সতী-সাবিত্রীর মত সেই গ্রামের কৃষক বৌটি।
রাজ্যের রাজমন্ত্রীদের দিয়ে কুমার পাঠাত অনেক টাকা-পয়সা। মেয়েটি স্বামীর অগোচরে তাচ্ছিল্য ভরে ফিরিয়ে দিত। ক্রমে ক্রমে এ সব কথা তার স্বামীর কানে উঠল। সে তার বৌকে আর গায়ের পথে যেতে দিত না। সমস্ত শক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরল সোনার প্রতিমা প্রাণ প্রিয় বৌকে।
সেই বছর পুঁজার সময় রাজ্যের লোকজন মেতে উঠল পুঁজার আনন্দে। মা আসছে, মা আসছে, মায়ের আবির্ভাবে মুছে যাবে লোকের দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি। রাজা, প্রজা, ধনী, গরীব সকলেই আনন্দে বিভোর। রাজপুরিতে আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল। পুঁজাঘরে পুঁজা দেউলে মা দুর্গার মূর্তি, মহালয়ার দিনে শ্রদ্ধাঞ্জলী দিয়ে ঠাকুরের আরতির মাঝে দেওয়া হল দেবতাকে মানুষের মনের অর্ঘ্য। ঘুম নেই কারো চোখে। নাচে গানে হাসিতে আনন্দে রাজপুরি বিভোর। রাজপুরির খানাপিনা খেয়ে সকলেই রাজা বাহাদুরকে ধন্য ধন্য করতে লাগল।
বিজয়ার দিন রাজবাড়িতে খুব আরতি হল। আরতির ধুয়ায় রাজবাড়ী খুব অন্ধকার হয়ে গেল। আরতির নাচ হলো আরো অদ্ভুত। রাজমাতা, রানী বৌমা, মাকে প্রনাম করল বছরের শুভ কামনা প্রার্থনা করে। সুন্দরের পাদপিঠ বরে, সুন্দরের আরতির মাঝে দেবতার বিসর্জন হল। সেই কৃষাণ বৌটি তার স্বামীর ঘরে আনন্দ আবেগে উচ্ছল। বিজয়ার দিন তার স্বামী তাকে এনে দিয়েছিল একখানা লাল তাঁতের শাড়ী। গলায় একছড়া পুঁতির মালা। হাতে একজোড়া সাদা শাখা। তা পরেই সে স্বামীকে প্রনাশ করেছিল।
ছোট ছেলেটি আরো সুন্দর। শরতের শিশির ভেজা শিউলির মত। তেমনি শুভ্র, কোমল, লাল একটি সুতির জামায় তাকে মনে হচ্ছিল একটি লাল গোলাপ। হাটি হাটি পায় সে হেঁটে বেড়ায়। আধো ভাষায় সে মা মা, বাবা, বাবা বলে ডাকে। লক্ষ্মী পুঁজার দিনে কৃষক বৌটি লক্ষ্মীর আরতি দিয়েছিল, তৈরী করেছিল অনেক প্রসাদ। সারা রাত জেগে করেছিল লক্ষ্মীর পুঁজা। যদি দেবী দয়া করে ভর করে তার সংসারে। কালি পুঁজার দিনে আলোয় আলোয় ভরে গেল রাজপুরি। কালি অর্ঘ্য দেওয়া হলো বিরাট করে। মা কালীকে খুশি করার কোন ব্যতিক্রমই হলো না।

(চলবে———–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।