জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-২৩

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর), তার ছেলে মেয়েদেরও তার আদর্শে অনুপ্রানিত করেছেন। শিক্ষা-দীক্ষাসহ সকল কাজে ভদ্র পরিবারের মেয়ে কুসুম। কুসুমদের বাসায় আমি মাঝে মধ্যে যেতাম। বিশেষ করে আমার শারীরিক বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া এবং ধানমন্ডির লেডিজ ক্লাবের কাজকর্মের আলোচনা করতাম। মিসেস নাসিম ওখানকার কার্যকরী সংসদের মেম্বার। মিসেস নাসিম ঐ লেডিজ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তবে নিজের নাম প্রকাশ করা তিনি কখনো পছন্দ করতেন না। তার আচরণে ক্লাবের সকলেই তাকে ভীষণ ভালবাসত ও শ্রদ্ধা করত।

এই চার ছেলে মেয়ের দুটি মেয়ে কুসুম ও নিঝুম। দুটি মেয়ে যেন দুটি গোলাপ। ধরতে, ছুতেও যেন সংকোচ হয়। সম্ভ্রম জাগে, এত কোমল যেন লজ্জাবতী লতা। কুসুম তখন ডাক্তারী পড়ে। নিঝুম আর্টস নিয়ে পড়ে। বড় ছেলে ইঞ্জিনিংার, এমেরিকায় চাকুরীরত। ছোট ছেলে বিজয় বাংলাদেশে ডাক্তারী পাশ করে দেশের স্বপ্ন দেখছে।

বিজয় খুবই অমায়িক। সে তার মায়ের মত ধানমন্ডি এলাকায় পাড়ার ছেলেদের নিয়ে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করছে। সপ্তাহে দুই, তিন দিন অনাথ অসহায়দের বিনামূল্যে চিকিৎসা করে ফ্রি ঔষধও সরবরাহ করে। কুসুমের সাথে দুর্ভাগ্যবশতঃ আমার কোনদিন একটু আলাপ করার সুযোগ হয়নি। দূর থেকে ওকে আমি শুধু অবলোকন করতাম। আমার বাড়ীর সামনে দিয়ে হেটে যেতে দেখেছি। ওদের বাসায় গিয়ে অনেকবার দেখেছি সে আমাকে দেখলে মাথা নিচু করে রাখত। মাঝে মধ্যে ছোট কণ্ঠে একটু সালাম করে চলে যেত। এত লাজুক এত নম্র বিনয়ী শান্ত ডাক্তারী পাশ করা মেয়ে এই বিংশ শতাব্দীর যুদে আমার চোখে পড়ে নি। আমার বাড়ীর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মাথা নীচু করে বনের সন্ত্রস্ত হরিণীর মত চঞ্চল চপল পায়ে চলে যেত।

বাসায় ফেরার সময় হঠাৎ কোনদিন আমাকে আমার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে চোখে চোখে পড়লেই ভীরু লাজুক দুটি চোখ সম্ভ্রমে নামিয়ে নিত। আমি কেন যেন ওর চলার পথের দিকে চেয়ে কি ভাবতাম তা আজ আমার মনে নেই। ১৯৭৩ সাল ওদের স্কুল জীবন থেকে আমি ওদের দেখেছি। ১৯৮৪ সাল থেকে আমি বিদেশে আসা-যাওয়া করায় তাদের স্মৃতিচারণ যেন ছিন্ন প্রায়। বিদেশের সিটিজেনশিপ নিয়ে দেশে কিছুদিন বসবাস করার সিন্ধান্ত নিলাম। কিন্তু আর এ পথ দিয়ে কুসুমের চলার পগির টার্মিনাল পড়ে গেল।

 

(চলবে—————)।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।