জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-১৯

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর),মানুষই অগ্রগতির চালিকা শক্তি : হিরোশিমার পিস মেমোরিয়াল জাপান নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে। জাপানবাসীর সাফল্যই তাদের দিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তারা অতীতের ভুল-ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা লাভ করতে বেশি আগ্রহী বলে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞগণের অভিমত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিজেদের বাড়াবাড়ী সম্পর্কে তারা সচেতন। সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তাদের শোচনীয় পরাজয়কে তারা বাস্তবতার আলোকে দেখতে শিখেছে। আনবিক বোমায় বিধ্বস্ত হিরোশিমা এখন একটি অত্যন্ত আধুনিক শহর। ভয়াবহ অতীতকে তারা আকড়িয়ে ধরে পিছপা হয় নি। কারো বিরুদ্ধে তিক্ততা জিইয়ে রাখার মত মানসিকতাও তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। হিরোশিমার পিস মেমোরিয়াল এ আনবিক বোমা নিক্ষেপের পর তাদের মধ্যে উন্নয়নের উৎসাহ উদ্দীপনা বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে।

যে আমেরিকা এটম বোমা নিক্ষেপ করেছে, সেই দেশের প্রতি কোন ক্ষোভ বা তিক্ততা পরিলক্ষিত হয় না। অবশ্য এটাও বলা যায় যে, পরাজিত জাপানের পক্ষে আমেরিকাকে দোষারুপ করা বা আমেরিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা রসুযোগ কোথায় ?

কিন্তু আমার কাছে এটাই মনে হচ্ছে যে, কারো প্রতি তিক্ততা প্রকাশে নিজেকে ব্যস্ত রাখার পরিবর্তে জাপানীরা আমেরিকার সাহায্য ও সহযোগিতাকে পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করেছে। যা তাদের বুদ্ধিমত্তার বড় পরিচায়খ।

তাদের মনোভাব জানার জন্য আমি ইচ্ছা করে তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে প্রশ্ন করেছি। একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি সহজভাবেই বললেন, যুদ্ধে এমনই হয়< আমাদের এটম বোমা থাকলে আমাদের সমর নেতারা নিশ্চয়ই তা আমেরিকার উপর নিক্ষেপ  করতেন। নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা এটাই বলতে চান যে, জাপানে শ্রেণী বিভক্ত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আর নেই। তাই অতীতের মত কোন বিশেষ শ্রেণীর ইচ্ছানুযায়ী এডভেঞ্চারিজম এখন আর সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষ আর যুদ্ধ চাইবে না।

আধুনিক দুনিয়ায় যা কিছু ভাল আর যা কিছু সুন্দর তা গ্রহণ করেই জাপানীরা তাদের নিজস্ব পরিচয় ও বৈষয়িক রক্ষা করে চলছে। পিছনে পড়ে থাকার নাম যে, জাতীয় বৈশিষ্ট্যের রক্ষা নয় তা জাপানীরা ভালভাবেই বোঝে। তাদের কথা হলো- যুগোপযোগী সুন্দর জীবনের আকাংখা। তারা নিজেরাও সুন্দর, পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি জীবন যাপন করতে ভালবাসে। বর্তমানে বৃহত্তম জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি।

আমাদের বাঙ্গালী জাতিকে ও জাপানের মত উন্নত আদর্শে আদর্শিত হয়ে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশেল সাথে সমতা রক্ষা করে চলছে হবে। তাহলে আমরাও অতি তাড়তাড়ি উন্নয়নের দ্বার প্রান্তে পৌছে যাব। প্রত্যেক জাতি চায় উন্নয়নের বিকাশ ঘটাতে। যে জাতি যত পরিশ্রম ও কৌশল অবলম্বন করবে তারা আরো বেশি সাফল্য লাভ করবে। এ জন্য মানুষই হলো অগ্রগতির চালিকা শক্তি।

 

(চলবে—————)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।