সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৪৯

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : আমি বললাম, উমা তুমি কাছে থাক। দেখি ওর জন্য গ্লাসে করে জুস, ঘরে ফল ছিল এগুলো আনি। ছেলেটি বোধহয় সারাদিন কিছুই খায় নি। হেমন্ত চোখ বুজে পরেছিল। কিছু খাবার খেতে চাইল না। অচৈতন্য অবস্থায় বলল, আমি বাড়ী যাব। আমি আর এদেশে থাকব না। উমা ওর কথা শুনে কাঁদছিল, আমি বললাম, ছিঃ উমা অলুক্ষনের মত কেঁদনা। জ্বরটা নেমে গেলে ভাল হয়ে যাবে। ওর সেবা কর, যতœ কর, আর উমা ওর পথ্যগুলি চামচ দিয়ে মুখে পুরে দিচ্ছিল। হেমন্ত খাওয়ার খাচ্ছিল না, দাঁত দু’পাটি শক্ত লেগেছিল। আমি ডাকলাম, হেমন্ত-হেমন্ত ও কোন সারা দিচ্ছে না। তাড়াতাড়ি উমাকে জল আনতে বলে ওর মাথায় জল ঢালতে লাগলাম, উমা ও রচোখ মুখে জলের ঝাপটা দিচ্ছে। হেমন্ত চমকে উঠে একটু চোখ খুলে তাকাল। তাও অল্প কতক্ষণ।
এমনি করে সেদিন সারারাত আমি আর উমা ওর কাছে বসে রাত জেগেছিলাম। আর হেমন্ত সারা রাত একবারও চোখ খুলে দেখেনি। খালি অচৈতন্য অবস্থা মা মা করে ডেকেছিল। হেমন্তর দু’চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পরেছিল। সকালের দিকে জ্বরটা একটু কমের দিকে। এখন হেমন্ত চোখ খুলে চারদিক তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, আমি বলি চল হেমন্ত, আমি অন্য ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি, তোমাকে দেখিয়ে আনি। একটু জ্বর কম থাকায় ও তখন এপাশ-ওপাশ হয়ে একটু বোধহয়, আরামে চুপ করেছিল। উমা বলল, বাবা কি খাবে, কি তৈরী করে দেব।
হেমন্তকে উঠিয়ে নিয়ে ল্যাপিনিয়ারে এক ডাক্তারের কাছে এলাম। ডাক্তার ওকে ভাল করে দেখে শুনে ঔষধ দিল। ঔষধ পত্র ক্রয় করে ওকে নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম। এসে দেখি উমা ওর জন্য কপির ডালনা করেছে, খান কয়েক লুচিও এর মধ্যে করে রেখেছে। কয়টা পিয়াজুও ভেজে রেখেছে। এসব দেখে আমার খুব ভাল লাগল। নিজের সন্তান নেই, তবুও আর এক মায়ের সন্তানের জন্য বুক ভরা কত দরদ। কত ¯েœহ উথলে উঠেছে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভুত ভালবাসা দরদ প্রাণঢালা বুক ভরা ভালবাসা নিবেদন করতে চায় উমা হেমন্তের জন্য। হেমন্ত কিছু খেলনা, দুটো পিয়াজু তুলে একটু মুখে দিল। তাও বমি করে ফেলল। আমি বললাম, উমা এত জ্বরে ওকে এসব দেবে না। এখন জুস ও স্যুপ দাও। জ্বর দেখে মাথা ধুয়ে দাও। আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি, তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। হঠাৎ বাইরে লেটার বক্স নরার শব্দ পেলাম। দেখলাম চিঠি। ডোরার চিঠি বোম্বে থেকে ক্যামেলিয়ারও একখানা ভারি চিঠি এসেছে। এতগুলো চিঠি পড়ার মত আমার সময় নেই, বাস ধরতে হবে। ঘড়ি দেখে বুঝলাম, বাস এখনই এসে যাবে। আমার সময় নেই, শুধু দোলার চিঠিটা পকেটে পুরে, আর গুলো রেখে দিলাম পরে দেখব।

(চলবে——–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।