সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৪৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : এমনি নানা কথা নানা প্রেম ভালবাসার গীতি কাব্য কথা আমার নিরালা নির্জ্জন নিরব নির্বাক মনে মধ্যরাতের গভীর ক্রন্দন হয়ে ধুঁকে ধুঁকে আমাকে অধীর করে তুলল। যৌবন যোয়ারে অনেক ভালবাসা আসে, অনেক ভালবাসা চলে যায়, আবার কেউ তাকে তার প্রেমের বাঁধনে চির অমর করে রেখেছে। রাত ভোর হয়ে এসেছে। প্রভাতে সুন্দর স্নিগ্ধ শান্ত আবহাওয়া আমাকে মুগ্ধ করল। পাখির কল-কাকলি আমার প্রাণে সুরের ঝঙ্কার তুলল। কোথা থেকে কার বাড়ী থেকে একটি সাদা খয়েরী মেশানো সুন্দর স্বাস্থ্যের নাদুস-নুদুস একটি বিড়াল জানালা দিয়ে মিউ মিউ করে ডেকে আমার ড্রইং রুমে ঢুকল। বিড়ালটাকে দেখে আমার আদর করতে ইচ্ছে করল। যদিও বিড়াল-কুকুর এসব ঘাটাঘাটি করতে ইচ্ছে করে না। খুব কাল একটা বিড়াল আছে ওটাকেও মাঝে মাঝে দেখি। ওটাকে দেখলে আমার ভয় হয়। ওর চোখ দুটু ভয়ঙ্কর বাঘের চোখের মত, এতকালো যে আলকাতরাকেও হার মানিয়ে দেয়।
আমার হেমন্তকে নিয়ে ডাক্তার এর কাছে যাওয়ার কথা। আবার ভার্সিটির ক্লাশ ছিল। উমাকে বললাম, আমার একটু তাড়াতাড়ি বেরুতে হবে। উমা ব্রেড টোষ্ট করে ডিম মামলেট ও চা দিল। আমি নাকে-মুখে কোন রকমে গুজে বেরিয়ে পরলাম। আগে ভার্সিটির বাস ধরলাম। সেদিন মাত্র একটা ক্লাশ ছিল। বাস কনকোরডিয়া থেকে অনেক দূরে থামে, তাই অতদূর পথ আমি হেটে এসে ভার্সিটিতে ঢুকলাম। সেদিন যেন কি কারণে ক্লাশে ছেলে-মেয়ের সংখ্যা খুব কম ছিল। তবু আমি আমার যা পড়াবার কথা ছিল তা পড়িয়ে এলাম। তখন প্রায় ২টা বাজে। হেমন্তের কাছে গিয়ে উপস্থিত হলাম। দেখলাম প্রচন্ড জ্বরে ও বিছানার পরে বেহুসের মত পরে আছে। ডাকলাম, হেমন্ত; হেমন্ত জ্বরের ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। তবু জবাব দিল কি, আমি বললাম, ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করেছ ? বলল, করেছি। থার্মোমিটার লাগিয়ে জ্বর দেখে চমকে উঠলাম। ১০৫। তখন মাথা ধোয়াবার মত বালতি, ঘটি বা বদনা হাতের কাছে কিছুই ছিল না। তবুও ওকে টেনে হিচরে বসিয়ে বাথরুমে নিয়ে মাথায় জল দিলাম। বড় তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে দিলাম। ছোট ফ্রিজটায় হাতরে বরফ পেলাম, একটা প্লাষ্টিকের প্যাকেটে পুরে হেমন্তের মাথায় ধরে, ওকে নিয় গাড়ীতে বসিয়ে দিয়ে ডাক্তারের সন্ধানে ছুটলাম। ডাউন টাউনেই যাব ভাবছিলাম। যার সাথে যোগাযোগ করা ছিল, দেখি ঘণ্টা খানেক দেরী হওয়াতে ডাক্তার চলে গেছে। আবার তড়ি কি পড়ি গেলাম ইমার্জেন্সিতে। ওকে অনেক কষ্টে ধরে ডাক্তারের সামনে হাজির করলাম।
ডাক্তার ওকে অনেক ভাল করে দেখে দিল, কি সামান্য ঔষধ দিল। বলে দিল জ্বরের অবস্থা দেখে পরে ব্যবস্থা করা যাবে। আমি ওকে বাসায় শাল ভাদরে নিয়ে এলাম। উমাকে ডাকলাম, বললাম- ড্রইং রুমে একটা ওর জন্য বিছানা করে দাও। কেউ দেখবার নেই, বুঝলে উমা। ছেলেটা জ্বরের ঘোরে প্রাণটা হারাবে। উমা ওর জন্য ওর ঘাট থেকে তুলে আনা গদি পেতে সুন্দর সাদা চাদর পেতে দিল। হেমন্ত কাঁপতে কাঁপতে গদিটার উপর ধপ করে বসে পরল। বলল, খুব মাথা ব্যাথা, এসগ্রিন বা ডিসপ্রিণ দিয়েছিল, তাই খেতে বললাম। উমাকে বললাম, আইস ব্যাগটা ওর মাথায় দাও। তখন বিছানায় চোখ বুকে শুয়েছিল হেমন্ত। জ্বর প্রচন্ড, জ্বরের ঘোরে ওর কোন চেতনা নেই। কোথায় ছিল, কোথায় এল। ডাক্তার কি যেন একটা ঔষধ দিয়েছিল, ওটা খাইয়ে দিলাম। হেমন্ত জ্বরের ঘোরে মা-মা করে ডাকছিল। উমা কাছে বসে ¯েœহের সুকোমল হাতে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। যে ছেলেটিকে হাজার বলেও আমার বাসায় থাকার জন্য মত করাতে পরিনি, আজ অসুস্থ অবস্থায় মনের অনিচ্ছায় আসতে বাধ্য হয়েছে। এত একা কেমন করে থাকে, আমার চিন্তার বাইরে।

(চলবে———)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।