মধ্যরাত : পর্ব-২৪৫

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : অমিয় বলল কি প্রশান্ত বাবু বড়দিনে কোথাও যাচ্ছেন না কি ? আমি বললাম, না আর কোথাও যাবার উপায় নেই ? অমিয়, বিজন, ভবতোষ, অলক এই তিন-চার জন এক সাথে বলে উঠল কেন ? কেন ? না ভাই নাতনীটা আসবে। ওর আমার ডেলিভারীর ডেট। অমিয় বলল আছেন বেশ। আজ নাতনী, কাল বন্ধুর বৌ, পরশু বান্ধবী, মন্দনা। চলছে আপনার বেশ। আমি বললাম, আমার মত হলে বুঝতেন, কতধানে কত চাল। বিজন বলল, প্রশান্ত দা সংসারই বাঁধলোনা তা আবার বলছেন, কত ধানে কত চাল। সকলেই হেসে উঠল। অলক বলল, তা প্রশান্ত দা আপনার বান্ধবী মিস ডোরা, ওনি দেখি আর আসছে না। আমি বললাম, তা আমি জানি কি ? আমার উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেল। তাকে আসছে, বা কে আসছে না, এর খোজ খবর আমি এখন রাখি না। বা সে রকম মন মানসিকতা এখন আমার নেই, কেউ আপনতা নিয়ে এগিয়ে আসলেও না করব না। বা কাকেও আসার জন্য জোর জবর দস্তি করব না।
সকলেই মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল। আমি সেখান থেকে সরে পরলাম হেমন্তের ওখান হয়ে যাওয়ার জন্য মন ঠিক করে ফেললাম। রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। হঠাৎ বাস পেয়ে গেলাম। বাস হেমন্তের বাড়ী থেকে অনেক দূরে থামল, সেখান থেকে হেটে প্রায় অনেক খানি ওর বাড়ীতে এসে পৌছে গেলাম, দরজায় বেল টিপলাম, হেমন্ত কোঁ-কাঁতে কোঁ-কাঁতে এসে ছিটকানি খুলে দিল। বললাম, কি হেমন্ত তোমার কি হয়েছে ? বলল খুব জ্বর ক’দিন কিছু খেতে পারি না, বমি হয়। গায়ে হাত দিয়ে দেখি গা পুড়ে যাচ্ছে। সমস্ত গা লাল, মুখ লাল টক টকে।
আমি বললাম, তোমার গায়ে কি ব্যাথা। ও বলল না, শুনে একটু অসুস্থ হলাম। ওর কোন খারাপ লক্ষ্য নেই। বললাম, ঔষধ খাচ্ছ ? ডাক্তার দেখিয়েছ, বলল না। আমি বললাম, খুব ভাল করেছ। আমি বললাম, কাল সকালে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে রেখ, আমি দুপুরের দিকে এসে নিয়ে যাব। আচ্ছা হেমন্ত, তোমার এখানে দেখার কেহ নেই। চলনা আমার ওখানে উমা তোমাকে দেখাশুনো করবে। হেমন্ত বলল না, আমি ভাল হয়ে সামীমার সাথে দেখা করব। আমি আর বাক্য ব্যায় না করে হেমন্তকে কিছু খাইয়ে, কিছুক্ষণ বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। হেমন্তের দু’চোখ দিয়ে অবিরল ধারায় জল গড়িয়ে পড়ল। আমি বললাম, কাঁদছ কেন ? ও বলল, মা হলে এমনি করে আদরে, স্নেহে, ভালবাসায় মাথায় হাত দিয়ে বুলিয়ে দিতেন। আমি বললাম, ছিঃ কাঁদেনা, মা কি কখন কারও চিরদিন কাছে কাছে থাকে। হেমন্ত বলল, আপনি জানেন না প্রশান্ত দা। আমার মা কত অভাবে অনটনে আমাদের দু’ভাইকে বুকে করে জীবন তরী পার করেছেন। শুধু উচ্চ ডিগ্রী নেবার জন্য বুকের মাঝে এমন ছবির মত গেঁথে আছে। অনেক দিন হয় মার কোন চিঠি পাইনি, জানি না আমার মা কেমন আছেন।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।