মধ্যরাত : পর্ব-২৪৪

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : অনেক রাত হল দেয়ালের বড় ঘড়িটায় ঢং ঢং করে ১২টার ঘণ্টা পরল। আমি চিন্তার রাজ্য ছেড়ে বাস্তবতায় ফিরে এলাম। শুতে গেলাম, দেখলাম মাথার কাছে ছোট টেবিলটার ছোট কাচের গ্লাসে এক গ্লাস জল খুব সযতেœ উমা কখন কোন সময় ঢেকে রেখে গেছে। বিছানা টান টান করে সাদা চাদরে ঢাকা কার সুনিপুন হাতের স্পর্শে সজীব হয়ে রয়েছে। বুঝলাম এ উমার কাজ, আমার বাংলার মেয়েদের মাতৃগত প্রাণ। মা যেমন নিজের সন্তানকে নিঃস্বার্থভাবে ¯েœহ করে ভালবাসে, উমাও তেমনি। ঘুমাবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু অনেকক্ষণ এপাশ-ওপাশ করলাম, ঘুম আসেনা। তবু জেগে জেগে ঘুমুবার ভান করলাম। এ আমার চিরকালের রোগ, এ রোগের কোন ঔষধ নেই।
এপাশ-ওপাশ করতে করতে রাত ভোর হয়ে গেল। বিশ্ব প্রভুকে স্ততি জানিয়ে উঠে পরলাম। হাত-মুখ ধুয়ে চা নাশতা খেলাম। উমা বলল, দাদা দোলা কবে আসবে। আমি মাধুরিকে লিখেছি, বললাম, দেখি ওরা কবে আসবে জানাবে। নিশ্চয় আমি জানতে পারব। উমা আর কিছু বলল না। আমি বললাম, মাধুরীকে লিখেছি কেন জান ? উমা দুঃখ বিজড়িত মুখখানি তুলে আমার দিকে মুখ ফিরাল। বললাম, দোলা এখন ওদের বৌ, ওদের বংশধর আসছে, ওরা যদি চায় ওদের কাছেই ডেলিভারি হবে। আর যদি খুশি মনে দোলাকে বলে, না তোমার দাদুর কাছে যাও, তবে-ত বড় খুশী হব। দেখি বিশ্বজিত বাবু কি বলেন। উমা কিছু বলল না, নীরবে মাথা নত করে চলে গেল। কুসুম একটা চিঠি দিয়েছে, বৌদির বাচ্চা হবে শুনে খু-উ-ব খুশী। ও আসবে টরেন্টো, তখন মন্ট্রিল বেরিয়ে যাবে। একটা বাচ্চার জন্য কতগুলো চোখ তাকিয়ে আছে, কতগুলো মন হা করে আছে। ভগবান যাকে দেন, ঘর ভরে দেন। আর যাকে না দেন, সে হাজার চেয়েও পায় না। এ দুনিয়ার রীতি।
আমি ভাবছিলাম, দোলার অনেক দিন হয় কোন খোঁজ-খবর পাইনি। কচও কোন খবর দেয়নি। আজ রাতের দিকে ফোন করব। হেমন্ত যেন বেশ কদিন হল আর আসছেনা, অসুখ-বিসুখ হল নাকি। ওরও এখানে কেউ আপন জন নেই। আমাকে চেনে তাই গায়ে পরে আপন করে নিতে এগিয়ে এসেছে, আমিও কোন কার্পন্য করিনি। দু’হাত উজার করে বুকে নিয়েছি। উমা আপন ছেলের মত ¯েœহ, মায়া-মমতায় বুকে স্থান দিয়েছ। দেখি কাল হেমন্তের ওখানে যাব। কুসুমও নাকি ভার্জ্জিনিয়া থেকে টরেন্টো আসবে। এমনি নানা কথা মনে আসছে, শীত এসে যাচ্ছে। ভীষণ বরফ গলা দিন গুলোর কথা মনে হলে আমার বুক কাঁপে, তবুওত বরফের সঙ্গে সন্ধি করে একটি চছর এখানে কাটিয়ে দিয়েছি। আরও হয়তঃ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এখানে কাটিয়ে দেব, নিঃস্ব নিরালা একাকিত্ব জীবন সমুদ্র।
ভার্সিটির পথে পা বের করলাম, এত আমার নিত্যকার রুটিন। ছাত্র-ছাত্রী পড়াই, সকলের জীবনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি। আমার জীবনের অভিজ্ঞতার সাগরের খবর কাউকে দেইনা। পুঞ্জিভুত ব্যথা বেদনার পাহাড় হতে উপ-পাহাড় হয়ে পাথরে পরিণত হয়েছে। নির্বাক নিরব কথার মালা হয়ে ধুকে ধুকে চুপে চুপে ধুকছে। জানি না এর নির্ব্বান অনির্ব্বান কবে হবে। বাস স্টপেজে অটো পার্কে এসে নামলাম। এখানে মন্ট্রিলের বিভিন্ন জায়গার বাস এসে জড়ো হয়। জংশন বললেও কোন ভুল হয় না। এখান থেকে কঙ্ক্রোডিয়ার বাস ধরলাম। সকলেই তার জীবন সংগ্রাম ব্যস্ত। কেউ কারো দিকে তাকিয়েও দেখছেনা। আমি বাসের এক কোনায় বসে ভাবছিলাম অনেক কথা। কঙ্ক্রোডিয়ার কিছু দুরে বাস থেকে গেল, আমি নেমে পরলাম। সেদিন ক্লাশে ঢুকতে বড় দেরী হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি ক্লাশে ঢুকে পরলাম। অনেকক্ষণ ক্লাশ নিলাম, ক্লাশ শেষ করে কমন রুমে কিছুক্ষণ বসলাম। হাতের কাছে খবরের কাগজটা পেয়ে চোখ বুলিয়ে গেলাম।

(চলবে———–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।