সর্বশেষঃ

আজ অগ্নিঝরা মার্চের চতুর্থ দিন

ডেস্ক রিপোর্ট ॥ একাত্তরের রক্তঝরা মার্চের চতুর্থ দিন আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনটির ঘটনাপ্রবাহের দিকে তাকালে বোঝা যায়, দেশমাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করার দৃপ্ত শপথে বাঙালি জাতি কী প্রস্তুতি নিয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) তখন বিদ্রোহ-বিক্ষোভে উত্তাল। একাত্তরের এই দিনে ক্ষুব্ধ বাঙালির মিছিলে মিছিলে ঝাঁঝালো স্লোগানে উচ্চকিত ছিল সারাদেশে। সবকিছু চলছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা মেনে। মুক্তিযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে বলীয়ান বাঙালি জাতি অপেক্ষায় ছিল তার পরবর্তী নির্দেশনার।
১৯৭১ সালের এই দিনে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা ও গণহত্যার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকাসহ সারা বাংলায় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। প্রদেশের বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। হরতাল চলাকালে খুলনায় সেনাবাহিনীর গুলিতে ৬ জন শহীদ হন। চট্টগ্রামে দু’দিনে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ায় ১২১ জনে।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানের পর স্বাধিকার আন্দোলনে গুলিতে আহত মুমূর্ষু বীর সংগ্রামীদের প্রাণরক্ষার্থে শত শত নারী-পুরুষ ও ছাত্রছাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’ এবং পাকিস্তান টেলিভিশন ‘ঢাকা টেলিভিশন’ হিসেবে সম্প্রচার শুরু করে।
বেতার-টেলিভিশন শিল্পীরা ঘোষণা করেন, যতদিন পর্যন্ত দেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজ সংগ্রামে লিপ্ত থাকবেন ততদিন ‘বেতার ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তারা অংশ নেবেন না’। ৫ ও ৬ মার্চ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, যেসব সরকারি ও বেসরকারি অফিসে কর্মচারীরা এখনও বেতন পাননি শুধু বেতন প্রদানের জন্য সেসব অফিস দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
করাচি প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান। পিডিপিপ্রধান নূরুল আমিন এক বিবৃতিতে ১০ মার্চ রাজনৈতিক নেতাদের সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে প্রেসিডেন্টের প্রতি অবিলম্বে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় আহ্বান করার দাবি জানান।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেডএ ভুট্টো করাচিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের সংহতির জন্য তার দল যতদূর সম্ভব ৬-দফার কাছাকাছি হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ৭ মার্চ যতই এগিয়ে আসতে শুরু করে, স্বাধীনতাকামী বাঙালি ও পাক সামরিক জান্তার মধ্যে উত্তেজনা ততই বাড়তে থাকে। দ্রোহ-ক্ষোভে বঞ্চিত-শোষিত বাঙালি তখন ক্রমেই ফুঁসে উঠেছিল ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে। তারা এক বুক প্রত্যাশা নিয়ে বসে থাকে ৭ মার্চ কী ঘোষণা দেবেন বঙ্গবন্ধু।
অন্যদিকে, পাক সামরিক জান্তা ভয়ে কাতর, যদি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তখন কী হবে? এমন আতঙ্ক, ভয় তাদের তাড়িত করে। এদিকে, আন্দোলনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা দফায় দফায় বৈঠকে বসেন ৭ মার্চের জনসভা সফল করার জন্য। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) চলতে থাকে জনসভার প্রস্তুতি। পাশাপাশি ঢাকাসহ সারাদেশে চলতে থাকে সংগ্রাম কমিটি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।