মধ্যরাত : ৭৪

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

 (গত পর্বের পর) : দোলা বলল, আপনার কাছে থাকলে কথা না বলে থাকা যায় না। আপনি যেমন এক মূহুর্তে পরকে আপন করে নিতে পারেন। তখন ঠাকুর মন্ত্র পাঠ করছিলেন। আগুন সাক্ষী করে কসুমকে বর গ্রহণ করছিল। শুভ দৃষ্টির সময় হয়ে এল সুন্দর একটা জরির পাতলা ওড়না দিয়ে দুজনকে ঢেকে দিচ্ছিল। কুসুম বরের পানে দুটো আকুতি ভরা সজল চোখ তুলে তাকাল। কচ বলল, দেখেছ দোলা আজ থেকে কুসুম অন্যের হয়ে গেল ওঃ ভাবতে আমার বুকের মধ্যে খুব কষ্ট হচ্ছে। একদিন কুসুমকে আমি কত ভালবাসতাম। কুসুম আমি ইউনিভার্সিটি থেকে না ফিরা পর্যন্ত খেতনা। আমার কাপড় জামা ধুয়ে ইস্ত্রি করে রাখত। আজ আমার পথ চেয়ে কে থাকবে ? বউদি তখন ওখান দিয়ে খাবারের থালা হাতে করে ফিরছিলেন। ইস- কে পথ চেয়ে থাকবে ? তাই অস্থিও ? কেন ? কচ দেবযানির বিয়ে এলেইত হয় ? আর যতদিন কেউ না আসে, এই বউদিই কচের পথ চেয়ে থাকবে। কচ বলল, বউদি ভাল হবে না কিন্তু।
বউদি মুচকি হেসে তাড়াতাড়ি কেটে পরল। পাতলা শাড়ীর ফাক দিয়ে দেখা যাচ্ছিল কুসুম খুব অবিরত কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ সব লাল হয়ে ফুলে উঠছিল। গা ভর্তি গহনা, বড়দা অনেক দিয়েছে যেন বোনের মনে কোন দুঃখ না থাকে। বানারসীটাও কুসুমকে দিয়ে পছন্দ করে কিনে দিয়েছে। বাবা মা নেই, দু’ভাই, একটি বোন, বড়দা কুসুমকে ভীষণ ভালবাসেন। বড়দা ঘুরে ফিরে একবার করে কুসুমের মাথায় হাত রাখেন। ছোট বেলায় ওর বাবা মা মরে গেল। এই ভাই সাথে করে নিয়ে বেরিয়েছে। শত মান অভিমান হাসি কান্না সব বড়দা। কচ আর কুসুম দুটি ভাই বোন। পিঠাপিঠি, দুজনে খুব জগড়া হত। সব বড়দাই সামলাতেন। কচ আর কুসুমের খুব ভাবছিল। একজন একজনকে না দেখলে থাকতে পারবে না। কতদিন কচ বড়দাকে বলেছে বড়দা কুসুমকে, তাড়াতাড়ি বিদেয় কর। আর আজ কুসুম বিদেয় হচ্ছে। হঠাৎ কচ খুব মন খারাপ করে বসল। বড়দা বলল, কচ কুসুমের কাছে গিয়ে মাথায় হাত রাখ।
কচ কেঁদে ফেলল। বড়দা কুসুম একেবারে চলে যাবে ? বড়দা বলল, হ্যাঁ তুমি জাননা মেয়েরা বিয়ে হলে পরের ঘরে চলে যায়। কচের চোখদুটি ছলছল করে উঠল। তারপর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। কুসুমের কাছে কিছুতেই যেতে চায়না। ফুলে ফুলে কেঁদে কেঁদে চোখ লাল করে ফেলল। দোলা চুপচাপ নিরব নিথর হয়ে একবার কচকে, একবার কুসুমকে দেখছিল। নিমন্ত্রিত লোক জনেরা ভিড় করে বর কনেকে দেখছিল। কুসুমের চোখদুটি কেঁদে কেঁদে লাল হয়ে ফুলে উঠেছিল। দুদিন পর্যন্ত কিছুই খায়নি, বৌদি হাজার চেষ্টা করেও খাওয়াতে পারেনি। বৌদি বড়দাকে বলছিল, দেখ ওগো এসনা। কুসুম আজ দুদিন যে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। না খেয়ে খেয়ে কুসুম যে মরে যাবে। বড়দা অনেক অনুনয় করেছে। দুটি ভাত মুখে দেওয়ার জন্য, কিন্তু কুসুম নাছোর বান্দা, সে কিছুতেই মুখে গ্রাস তুলেনি।
পাড়ার মেয়েরা সব ভিড় করে দাঁড়িয়েছিল। টরেন্টোতে অনেক বাঙ্গালী। প্রায় বাঙ্গালীই এসেছিল সবহিন্দু বৌ ঝিরা। বড়দা এখন কুসুমকে ছেলের হাতে তুলে দিবেন বলে বৌদি সব আয়োজন করছে। কুসুমের শাড়ীর আঁচলের সাথে বরের ধুতির খুটি বেঁধে দিলেন। কুসুমের ডান হাতটা নিয়ে বরের হাতে তুলে দিয়ে বড়দা কেঁদে ফেলল। সেকি কান্না, ওর কেহ নেই ওকে দেখো। কুসুম বড়দা বলে বড়দার বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে ফেলল। অনেক কান্না কাটির পর কুসুম কচ এর কাছে এসে দাঁড়াল। ছোড়দা বলে কেঁদে ফেলল। কচ অনেক কাঁদল, বেচারা কেঁদে কেঁদে চোখই লাল করে ফেলেছে। বাড়ীর বাইরে ফুলদিয়ে সাজান গাড়ী দাঁড় করানোই ছিল। বরের বাবা, ভাই এতক্ষণ বাড়ীর ড্রইং রুমে বসেছিল। এখন আপাতত টরেন্টোতেই ডাউন টাউনে থাকবে। পরে বর ভার্জিনিয়ায় চাকুরী করে, সেখানে যেতে পারে। বাবা মা টরেন্টোতে থাকে। বরের কোন বোন নেই, তিন ভাই।

(চলবে———–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।