লালমোহনে খালে বাঁধ দিয়ে মৎস্য উৎপাদন প্রকল্প !

দায় সাড়া উপজেলা মৎস্য অফিস।
প্রকল্পের দলপতির ভাষ্য; অনেকেই লিখে-আপনিও লিখেন কিছুই হবে না।

ভোলার লালমোহনের ধলিগৌরনগর ইউনিয়নের কামারের খাল। প্রবহমান হিসেবে ওই খালটি এলাকায় অত্যান্ত গুরুত্ব বহন করে। তবে ওই খালটিতেই বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে একটি প্রভাবশালী মহল। এতে জলাবদ্ধতার আতঙ্কে রয়েছেন ওই এলাকার মানুষজন। খালে বাঁধ না দিতে স্থানীয়রা ৭ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মৎস্য অফিসার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। তবে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে দ্রুত খালটিতে বাঁধ দেয়ার কাজ শেষ করে ওই প্রভাবশালীরা। এতে সহযোগিতা করেছে উপজেলা মৎস্য অফিস। কাজ বন্ধ না হওয়ায় এলাকাবাসী গত ২৪ এপ্রিল ভোলা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। তাতেও বন্ধ হয়নি খালে বাঁধ দেয়ার কাজ।
সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস খালে মৎস্য উৎপাদন প্রকল্পের কাজ সার্ভে করতে গেলে স্থানীয়রা তখন বাধা প্রদান করেন। এসময় মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে স্থানীয়দের তর্কবির্তকের ঘটনাও ঘটে। তাদের বাধার পরেও মৎস্য কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিকভাবে ওই খালটিতে মাছ চাষের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করেন।
নামপ্রকাশে অনইচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, খালটিতে অনেক আগ থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টু দু’পাশে লোহার জাল দিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন। তবে এ বছর খালে ভেকু মেশিন নামিয়ে মাটি দিয়ে বাঁধ দিয়েছে মাছ চাষের জন্য। এ খালে এলাকাবাসী বছরের পর বছর মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন চেয়ারম্যানের মৎস্য প্রজেক্টের কারণে স্থানীয়রা খালটিতে মাছ শিকার করতে পারছে না। মৎস্য অফিস অনৈতিকভাবে চেয়ারম্যানের ভাই মো. আলমগীর, সফিউল্যাহসহ মোট ১১ জনকে সদস্য করে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। তবে এ প্রকল্পের অনেক সদস্যের জানা নেই তারা প্রকল্পের সুফলভোগী। নিয়ম অনুযায়ী বদ্ধ খালের দু’পাড়ের বাসিন্ধাদেরকে নিয়ে সমিতি করার কথা। তবে এখানে সে নিয়ম না মেনে প্রবহমান খালেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্প।


খালে মৎস্য চাষের ব্যাপারে প্রকল্পের দলপতি মো. আলমগীর বলেন, ৩০ বছর ধরে এ খালে মাছ চাষ করে আসছি। এটা বৈধ না অবৈধ তা জানি না। এটা নিয়ে লিখলেও আমাদের কিছু হবে না। অনেকেই লিখে, আপনারাও লিখেন। বাকি কথা সামনাসামনি বলবো।
প্রবহমান খালে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস বলেন, এখানে মৎস্য প্রকল্প করার জন্য অনাপত্তি দিয়েছে ইউএনও এবং এসিল্যান্ড। এখানে আমার কিছু করার নেই। তবে কিছু করার না থাকলে এ প্রকল্পের জন্য মৎস্য অফিস কিভাবে টাকা দিচ্ছে, এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জেলা মৎস্য অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিস এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। তবে নিয়ম না মেনে যদি এমন কোনো প্রকল্প উপজেলা মৎস্য অফিস প্রবহমান খালে বাস্তবায়ন করে, তাহলে আমরা কখনও এ প্রকল্পের অনুমোদন দিবো না। বিষয়টি সরজমিনে তদন্ত করে দেখব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পল্লব কুমার হাজরা বলেন, এলাকাবাসী প্রকল্পটি নিয়ে আমাদের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। যার ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।