মধ্যরাত : পর্ব-১৬

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : সুপ্রিয়, সেদিন তোমাকে ওয়ালট ডিজনী ওয়ালর্ডে পেয়ে অন্ধের মত সবকিছু ভুলে গিয়ে সারাক্ষণ তোমার সাথে সাথে ছিলাম। সারাটা দিন যে কিভাবে কেটেছিল তা আমি হাজার চেষ্টা করে আজ তোমাকে বুঝাতে পারব না। কি এক অপ্রত্যাশিত আনন্দঘন মুহূর্তে সেদিন আমার জীবনে এসেছিল। তোমাকে একান্ত ভাবে, নিবিড় করে কাছে পেয়ে, তা বলে আমি হাজার রাতেও শেষ করতে পারব না। তোমাকে আমি অনেক কথা বলেছি, কোনটা রেখে কোনটা বলব, তা ঠিক করতে পারিনি। আকাশের কত রং নামে আমি একটি উপন্যাস লিখেছি, সে বইয়ের নায়ক তুমি প্রশান্ত, চিঠি দিও। বেড়াতে এস। ঠিকানা রইল। ডোরা।
চিঠি পড়ে আমি বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে থাকলাম। ডোরা, সত্যি, বইয়ের নায়ক আমি ? বার বার আমার মনে হতে লাগল, আমাকে নিয়ে ডোরা কি লিখল ? নিছক প্রেমের কথা নয় তো ? পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চের নাট্যাভিনয়ের অপরূপ রূপকথা। বন্যার পানি যখন পুকুরে প্রবেশ করে তখন পদ্মের ভাটায় টান পরে। ডোরার চিঠিটা হাতে করে শুয়ে পড়লাম। যেন পরম শান্তিতে পরম তৃপ্তিতে। ডোরার গন্ধ, ডোরার স্পর্শ, আমার শরীরের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করে আমাকে বিবশ করে তুলল। সে আমাকে কাছে থাকতে যা দেয়নি, আজ অনেক অনেক দূর থেকে সে আমাকে আরতির অর্ঘ প্রদান করছে। এত আনন্দ বুঝি আমার জীবনে আর কখন আসেনি।
ঘুমিয়ে পড়লাম, সকালে ঘুম থেকে উঠে শরীরটা বেশ ঝর ঝরে লাগল। যেন কবুতরের মত পাখনা মেলে আকাশে উড়ে বেড়াতে ইচ্ছে করল। সুর এল মনে প্রাণে। শিহরণ এল অঙ্গে অঙ্গে। আমি যেন শুনতে পেলাম আকাশে ধ্রুব তারা হয়ে জন্মাবার জন্য তোমার জন্ম হয়নি। কে যেন আমায় বলছে–
ডোরার জন্য আজ আমার অনুভব অনুভূতি অনুরাগ ঝরে পড়ছে। ডোরাকে কোনদিন আমি হৃদয় খুলে অফুরন্ত ভালবাসা দিইনি। আজ মনে হয় হৃদয়ের কাছে টেনে আনি। অধরের কাছে অধর নিয়ে বলি ডোরা আমি তোমায় ভালবাসি। আজ দূরে আছে বলেই বোধ হয় এত ভাল লাগছে। অথচ কাছে থাকতে ওকে আমি দূরে ঠেলে রেখেছি। সেজন্য আমি আজ অনুতপ্ত।
ডোরার চিঠির কি উত্তর দেব ভাবছি। কোনদিন কোন মেয়ের কাছে আমি চিঠি লিখিনি। আজ ভীষণ লজ্জা লাগছে। পরশু পর্যন্ত কক্সেয়িয়া ইউনিভার্সিটির ছুটি আমার শেষ হয়ে যাবে। কতদিন ইউনিভার্সিটিতে যাইনি। আবার ছাত্র পড়ানো, সে এক ঘানি টানা, ক্লান্তি নেই, শ্রান্তি নেই, সে এক মেশিন। বিকেলে মন্ট্রিল পাহাড়ে বেড়াতে গেলাম। এই পাহাড়ের উপর থেকে মন্ট্রির শহরের দৃশ্য অপরূপ। অলিম্পিকের ঘরটা কত বিশাল অথচ পাহাড়ের উপর থেকে একটু খানি লাগে। পাহাড়ের চুড়ায় উঠে দেখলাম উপরে বেশ একটা প্রশস্ত রাস্তা আছে। টেলিভিশনের ব্রড কাষ্টিংয়ের কাছে গেলাম। অনেক্ষণ এদিক ওদিন ঘুরে বেড়ালাম। প্রাকৃতিক দৃশ্য যেন তেমন ভাল লাগছিল না। গাড়ী নিয়ে ওখানে একটা লেক আছে সেখানে গেলাম। মনটা যেন ছটফট করে। কেমন অস্থিরতা প্রকাশ করছে। আমি যে কি চাই তা আমি ভাল করে জানিনা। নীড়হারা পাখিরা তখন নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। আকাশের এক কোনে ক্ষীণ চাঁদ উকি দিচ্ছে। পাইন গাছগুলি নির্ভিক প্রহরীর মত দাড়িয়ে আছে। লোকের চার পাশের বেঞ্চিতে বন্ধু-বান্ধবীরা, কপোত-কপোতির মত গুনগুন করে কথা বলছে। লোকের স্বচ্ছজল টলটল করছে। কতগুলি কতুতর লাল টুকটুক পায়ে ঘুড় ঘুড় করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমিও কোনটার চার পাশে কতক্ষণ ঘুরে বেড়ালাম। মুগ্ধ দৃষ্টিতে অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলাম। যেমন অনাহুতের মত সেখানে গিয়েছিলাম। আবার সেই অনাহুতের মত ফিরে এলাম। রাতে ঘরে ফিরে ডোরাকে চিঠি লিখব ভাবলাম। (চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।