জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-২৬

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর), কুসুমের মা কিছু বলতে চাইলে বলত মা, তোমরা এর মধ্যে ইন্টারফেয়ার করো না। তোমরা ওকে বা ওদের এক কথা বলবে, আর ওরা আমাকে দশ কথা শুনিয়ে দেবে। তোমরাই আমাকে বিয়ে দিয়েছে, আমি বিয়ে করি নি। মিসেস খান বলতেন, কুসুম, ক’দিন এসে  আমার কাছে থাক না ? ক’দিন এখানে এসে বিশ্রাম নে।

কুসুম মাকে বলত মা তুমি ক’দিন বাবার বাড়ীতে থেকেছ ? সব সময়ই তো বাবার কাছে বা আমার দাদা-দাদীর সাথেই তো থেকেছ। আমাকে কেন বলছো তোমার কাছে এসে বিশ্রাম নিতে ? মিসেস খান বলত আমার স্বামী, আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আমাকে মাথার মনি করে রেখেছেন। শ্বাশুড়ী আমাকে নিজের মেয়ের মত স্নেহ করতেন। দেবর ননদরা আমাকে বড় বোনের মত ভক্তি শ্রদ্ধা করত। আর তাছাড়া তোমার দাদী আমার আপন ফুফু ছিল। তিনি সখ করে নিজের ভাইর মেয়েকে (মা-হারা) ঘরে এনেছেন।

আমার ভাই আবার তোমার ফুফুকে বিয়ে করেছে। মিসেস খান, পিছনে ফেলে আসা স্মৃতিচারণ করে মেয়েকে শুনিয়ে বললেন, আমার বাবা তখন সিরাজগঞ্জের ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট, তখনকার দিনে একজন ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের মর্যাদা বর্তমান একজন কমিশনারের চেয়েও বেশি সম্মান ছিল। হাক ডাক ছিল, চার পাচজন চাপরাশি ছিল। বাবা স্যুট হেট পড়ে কোর্টে যেতেন। একজন সাধারণ পাবলিক তার সাথে আলাপ করতে ভয় পেত।

আমার গানের মাস্টার ছিল। বাসায় সকাল-সন্ধ্যায় গানের রিহার্সাল চলত। আমার মা একদিন হঠাৎ পরপারে পাড়ি জমালেন। মা মরা যাওয়াতে আমি বড় একাকীত্ব ও অসহায় বোধ করলাম। রাতদিন মা’র স্নেহ ভালবাসার কথা মনে করে খুব কান্নাকাটি করতাম। তোমার বাবার সাথে তখন আমার বিয়ের কথা চলছিল। তারপর একদিন তোমার বাবার সাথে তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে গেল।

তোমার দাদা-দাদীর কাছে এসে তাদের স্নেহ, মায়া-মমতা আর ভালবাসায় আমি আমার মায়ের শোক আস্তে আস্তে ভুলে গেলাম। তারা তাদের মেয়ের স্নেহে অসংখ্য ভালবাসায় আমাকে ঘিরে রেখেছেন। আমাকে মায়ের শুন্যতা বলতে কিছুই বুঝতে দেন নি। আজ এতটি বছর হয়ে গেল তোমার দাদা-দাদী আমার কাছেই থাকলেন। এখন অনেক বৃদ্ধ হয়ে স্মৃতিহীন হয়ে চলার শক্তি হারিয়ে আমার কাছেই আছেন। আমি অদ্যাবধি তাদেরকে বাবা-মার মত সেবা করে আসছি। শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালবাসা দিয়ে তাদেরকে আগলে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

 

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।