সর্বশেষঃ

স্বামীর কথা রাখতে বৃদ্ধা ছবরজান আঁকড়ে আছেন ঝুপড়ি ঘরে

স্টাফ রিপোর্টার, লালমোহন ॥ ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা ছবরজান বিবি। তিনি একাই থাকেন একটি জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে। কোথাও হোগলা পাতা, কোথাও ভাঙাচুরা টিন, কোথাও তেরপাল, আবার কোথাও ছেঁড়া বস্তা দিয়ে ঘরটিতে বেড়া দেওয়া। ঘরের চালায় টিন থাকলেও সেই টিনের ওপরও দেওয়া তেরপাল। এমনকি ঘরের দরজাটিও হোগলা পাতার। তবুও সেই ঘর ছাড়ছেন না বৃদ্ধা ছবরজান বিবি। ওই ঘর থেকেই শেষ বিদায় নিতে চান তিনি। জরাজীর্ণ ঘরটিই যেন ছবরজানের স্বর্গ।
তিনি ভোলার লালমোহন উপজেলার ৯নং ওয়ার্ডের চরলক্ষ্মী এলাকার আলী মিয়া মাতাব্বর বাড়ির মৃত সামছল হকের স্ত্রী। প্রায় পাঁচ বছর আগে মারা যান তার স্বামী। বর্তমানে বৃদ্ধা ছবরজান বিবির ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে। ছেলেরা দিনমজুর। মেয়েরা থাকেন স্বামীর বাড়ি। ছেলেদের ঘরে আশ্রয় নিতে পারলেও তাদের ঘরে যাচ্ছেন না বৃদ্ধা ছবরজান বিবি।
তিনি জানান, আমার স্বামী মারা যাওয়ার সময় বলে গেছেন এই ঘরেই থাকতে। এই ঘরে থেকেই মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন তিনি। তাই কষ্ট হলেও ভাঙাচুরা জরাজীর্ণ ঘরটিতেই থাকছি। বৃষ্টি হলে ঘরের ভেতরে পানি পড়ে। তবুও স্বামীর কথা রাখার চেষ্টা করবো। আল্লাহ হায়াৎ শেষ করলে এই ঘরের মধ্যেই মারা যাবো। তবুও মরণ পর্যন্ত স্বামীর রেখে যাওয়া ঘর ছেড়ে কোথাও যাবো না।
বৃদ্ধা ছবরজান বিবির ছোট ছেলে আব্দুল খালেক বলেন, আমরা দিনমজুরি করলেও আমাদের মোটামুটি ভালো ঘর রয়েছে। মাকে আমাদের ঘরে আসতে বললেও তিনি আসেন না। বাবা নাকি মৃত্যুর আগে মাকে বলে গেছেন ওই ঘরে থাকতে। যার জন্য তিনি ওই ঘর ছেড়ে কোথাও যান না। তবে আমি এবং পরিবারের সদস্যরা তিন বেলা মাকে ওই ঘরে নিয়ে খাবার দিই। এছাড়া মা বয়স্ক ভাতা পান। ওই ভাতার টাকা দিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনেন।
ওই বৃদ্ধার নাতি মো. জীবন জানান, নানি নানার কথা রাখতে ঝুপড়ি ঘরটিতেই থাকেন। বহুবার তাকে সেখান থেকে মামাদের ঘরে থাকার জন্য বলা হয়েছে। তবে তিনি কোনোভাবেই নানার রেখে যাওয়া ঘর ছাড়ছেন না। তাই মামারা বাধ্য হয়ে সেখানেই নানিকে নিয়মিত খাবার-দাবার দিচ্ছেন। নানার কথার মর্যাদা দিতেই নানি অনেক কষ্ট হওয়ার পরও ভাঙাচুরা ঘরটিতেই দিন পার করছেন।
কালমা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ছাদেক বলেন, ওই বৃদ্ধা সরকারিভাবে একটি বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। এছাড়া শুনেছি স্বামীর কথা রাখতেই বৃদ্ধা ছবরজান বিবি ঝুপড়ি ঘর থেকে কোথাও যান না। তার ছেলেরা মোটামুটি সচ্ছল রয়েছে। তিনি চাইলে ছেলেদের ঘরে থাকতে পারেন।
লালমোহন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহাগ ঘোষ জানান, এই মুহূর্তে সরকারিভাবে জমি আছে-ঘর নেই প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে ওই প্রকল্পটি চালু হলে তাকে নতুন করে একটি ঘর নির্মাণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।