বাঁশখালীর আলোচিত শিশু মাফি হত্যায় পুরোনো অপহরণ চক্র জড়িত থাকার অভিযোগ

মুহাম্মদ আতিকুর রহমান হান্নান (বাঁশখালী প্রতিনিধি) ॥ চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নিখোঁজের পর লাশ উদ্ধার হওয়া ৬ বছরের শিশু নূর উল্লাহ মাফিকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছিল। খুনের পর লাশ গুম করতে ফেলা হয় পাশের জলকদর খালে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হত্যাকান্ড  নিশ্চিত হওয়ার পর এ ঘটনায় শিশুটির বাবা সাতজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। এর মধ্যে দু’জন গ্রেপ্তার হলেও ঠিক কী কারণে এ হত্যা, তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, এ হত্যার সঙ্গে যুক্ত চক্রটি দেড় বছর আগেও আরেকটি শিশু অপহরণ করেছিল। তখন পার পেয়ে যাওয়ায় ফের একই অপরাধে জড়িয়েছে তারা। এদিকে মাফির মা-বাবা সন্তান হত্যার বিচার দাবি করেছেন। শিশু মাফি বাঁশখালীর ইলশা গ্রামের মুহাম্মদ নুরুল আনচারের ছেলে। সে স্থানীয় চাঁপাছড়ি আবু বকর ছিদ্দিক (রা.) ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল। গত ১১ অক্টোবর ২৩ সন্ধ্যায় বাঁশখালীর গুনাগরী-মোশারফ আলী মিয়ার বাজার সড়কে ইলশা রাস্তার মাথার পাশে বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয় মাফি। ছয় দিন পর বাহারছড়া রতœপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে জলকদর খালে তার লাশ পাওয়া যায়। তখন শিশুটিকে হত্যার অভিযোগ করেছিলেন মা-বাবা। তবে পুলিশ হত্যা মামলা না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা নেয়। সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন চিকিৎসক। মাথায় আঘাতের কারণে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক দোলন চক্রবর্তী ও এএনএম মনজুরুল কাদের চৌধুরী।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর শিশুটির বাবা নুরুল আনচার সাতজনকে আসামি করে বাঁশখালী থানায় মামলা করেন। তারা হলো- জাহেদ ও তার বাবা জামাল উদ্দীন, স্থানীয় যুবক রিয়াদ, জিহান, জিয়াদ, তছলিমা আক্তার ও সজন। এদের মধ্যে তছলিমা আক্তার শিশুটির ফুফু। মামলায় নুরুল আনচারের অভিযোগ, মাফি নিখোঁজ হওয়ার পর রিয়াদের বাড়িতে খুঁজতে যান স্বজনরা। রিয়াদ ও জাহেদ এতে বাধা দেয়। এ সময় তারা হুমকি ও ভয়ভীতি দেখায়। শিশুটির বাবা ও স্বজনদের ধারণা, অপহরণের পর শিশুকে ওই ঘরে লুকিয়ে রেখেছিল। ঘর তল্লাশি নিয়ে কথা কাটাকাটির মাধ্যমে সময় ক্ষেপণ করে তারা সুযোগ বুঝে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে শিশুকে ঘরের পেছন দিয়ে সরিয়ে নিয়ে যায়। পরে ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে মাফিকে কোথাও রাখতে না পেরে খুন করে খালে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
মাফির বাবা (১৯ জানুয়ারী ২৪) এ প্রতিবেদককে বলেন, যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা ছিল না। তারা কেন আমার সন্তানকে অপহরণ করে খুন করেছে, বলতে পারছি না। মামলায় আমার স্ত্রীর সন্দেহ অনুযায়ী বোনকেও আসামি করেছি। এখন পুলিশ প্রকৃত হত্যাকারীদের বের করে বিচারের মুখোমুখি করবে বলে আশা করছি।
তবে তাঁর এক স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আসামিরা বখাটে। নুরুল আনচারের স্ত্রীর ধারণা, সম্পত্তির লোভে ওই বখাটেদের মাধ্যমে মাফির ফুফু এ খুন করিয়েছে। তবে পুলিশ এর কোনো সত্যতা পায়নি।
বাঁশখালীর ইলশা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, আসামি জাহেদ, রিয়াদ, জিহান, জিয়াদ ও সজনের একটি গ্যাং রয়েছে। ২০২২ সালের ২০ মে একই এলাকা থেকে আকিল উদ্দিন নামে ৯ বছরের শিশুকে অপহরণ করা হয়। তখন শিশুটির দাদির কাছে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে জাহেদ। পরদিন গাজীপুর থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই সময় অপহরণের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকিরা পার পেয়ে যায়।
এ ব্যাপারে শিশু আকিলের চাচা আইনজীবী তাজউদ্দীন বলেন, ভাতিজাকে অপহরণের পর জাহেদ আমার মাকে ফোন করে মুক্তিপণ চেয়েছিল। তবে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার দুই আসামি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তাদের নাম না বলায় তাকে আসামি না করে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে।
মাফি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মজনু মিয়া বলেন, দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কী কারণে শিশু মাফিকে হত্যা করা হয়েছে, এখনও অজানা। গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে পেলে হত্যারহস্য উন্মোচিত হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।