শখের কবুতর এখন ইয়ামিন’র উপার্জনের পথ

ভোলার বাণী ডেস্ক ॥ শখের বসে হাট থেকে দুই জোড়া কবুতর কিনে পালন শুরু করেন মো. ইয়ামিন (২২) নামে ভোলার এক শিক্ষার্থী। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে তার কবুতরের সংখ্যা। প্রতি মাসেই কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করেন তিনি। এই কবুতর বিক্রির টাকায়ই চলে ইয়ামিনের পড়াশোনা ও নিজের হাত খরচ। মো. ইয়ামিন ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের তুলাতুলি গ্রামের সৈয়দ আহমেদ হাওলাদার বাড়ির মো. ইউনুছ হাওলাদারের ছেলে। তিনি ভোলা সদরের পরানগঞ্জ এলাকার নাজিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

ইয়ামিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বসতঘরের পাশে ইয়ামিন ঘর তুলে দিয়েছেন কবুতরের জন্য। সকাল হলেই ঘর থেকে বের হয়ে তার বসতঘরের পাশে বিভিন্ন গাছের ডালে অবস্থান নেয় কবুতরগুলো। ইয়ামিন বাটিতে খাবার নিয়ে উঠানে দাঁড়ালেই ছুটে আসে তারা। এরপর উঠানে খাবার ছিটিয়ে দেন ইয়ামিন। খাওয়া শেষে কবুতরগুলো চলে যায় বিভিন্ন স্থানে। আবার সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসলেই কবুতরগুলো ঘরে ফিরে আসে।
মো. ইয়ামিন জানান, কবুতর পালনের খুবই শখ ছিল তার। বেশ কয়েক বছর আগে বাবার সঙ্গে স্থানীয় হাটে গিয়ে দুই জোড়া কবুতর কিনে পালন শুরু করেন তিনি। ওই কবুতর থেকেই বাড়তে থাকে কবুতরের সংখ্যা। বর্তমানে তার কাছে বাংলা কবুতর, রেচার কবুতর, হোমা কবুতর, কিং কবুতর, কাকজি কবুতর ও বোম্বাই কবুতর রয়েছে। তার কবুতরগুলোকে তিনি চাল, চালের খুদ, ধান, সরিষা, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়ান। কবুতর পালনে তাকে বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই উৎসাহ দেন। প্রতিমাসেই কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, বছরে প্রায় ১০০ জোড়ার অধিক কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করেন তিনি। প্রতি জোড়া কবুতর ৩০০ থেকে প্রায় ১ হাজার টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করেন। কবুতর বিক্রির টাকা দিয়েই কবুতরের খাবার, নিজের পড়াশুনা ও হাত খরচ চালান বলেও জানান ইয়ামিন। পড়াশুনা শেষে যদি ভালো কোনো সরকারি চাকরি না হয় তাহলে তিনি কবুতরের বড় করে খামার করবেন। আর একজন বড় উদ্যোক্তা হবেন। বেকার যুবকরা যদি মোটামুটি বড় পরিসরে কবুতরের খামার করতে পারেন তাহলে মাসে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা বা তারও বেশি আয় করা সম্ভব।
ইয়ামিনের বাবা মো. ইউনুছ হাওলাদার জানান, তার ছেলের শখ ছিল কবুতর পালনের। তাই তাকে দুই জোড়া কবুতর কিনে দেন তিনি। এখন ইয়ামিনের অনেক কবুতর রয়েছে। স্থানীয়রা ইয়ামিনের কবুতর দেখতে বাড়িতে আসেন। তিনি আরও জানান, ইয়ামিন তার কবুতর বিক্রির টাকা দিয়ে কবুতরের জন্য ঘর তুলেছে। সে নিজের পড়াশুনা, কবুতরের খাবার ও নিজের হাতখরচও কবুতর বিক্রির টাকা দিয়ে করে।
ভোলা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম খান জানান, ইয়ামিনের মতো অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে যারা শখের বসে কবুতর পালন শুরু করে এখন বাণিজ্যিকভাবে কবুতরের খামার করেছেন। এছাড়াও ভোলা জেলায় অনেক যুবক রয়েছেন যারা কবুতরের খামার করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সকলকেই আমরা সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।