কঠিন সময়ে “বৈশ্বিক অর্থনীতি”

ডেস্ক রিপোর্ট ॥ গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে। এমনটা হলে বৈশ্বিক অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়বে; প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। সেই সঙ্গে আবারও জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের মূল্য বাড়তে শুরু করবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক দশকের মধ্যে সম্ভবত বিশ্ব সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি অস্থির ও অনিশ্চিত।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ও কভিড-১৯ মহামারির জেরে তিন বছর ভোগান্তির পর মাত্র শ্বাস নিতে শুরু করেছে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতি। মুদ্রাস্ফীতি কমতে শুরু করেছিল, জ্বালানি তেলের মূল্যও স্থিতিশীল হচ্ছিল; সম্ভাব্য বিশ্বমন্দাও এড়ানো সম্ভব হয়ে উঠছিল। কিন্তু এখন বিশ্বের সামনের সারির কিছু অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সতর্ক করে বলছে যে, ইতোমধ্যে ভঙ্গুর বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধার জটিল হয়ে পড়বে।
জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যের ওপর ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দারমিত গিল। এ মূল্যবৃদ্ধি শুধু পরিবার ও কোম্পানিগুলোর ক্রয়ক্ষমতাকে প্রভাবিত করছে না, খাদ্যপণ্যের উৎপাদন মূল্যকেও ওপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিচ্ছে।
এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে মিসর, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এসব দেশ ইতোমধ্যেই অস্বাভাবিক ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ কমে গেছে। পাঁচ দশকের মধ্যে এ দেশগুলোর বাণিজ্যের অগ্রগতি সবচেয়ে ধীরগতির। সব মিলিয়ে সংকট থেকে তাদের উত্তরণের পথ অত্যন্ত কঠিন। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার বাড়িয়েছে, যা সরকার ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদ ইন্দারমিত গিল বলেন, এ সব কিছুই হচ্ছে একই সময়ে। আমরা বিশ্ব অর্থনীতির সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে রয়েছি।
একই সুরে কথা বলছেন অন্য বিশ্লেষকরাও। গত মাসে নিউইয়র্কভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগান চেজের প্রধান নির্বাহী জেমি ডিমন বলেন, গত কয়েক দশকের মধ্যে এটি সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন সময়। তিনি গাজায় সংঘাতকে পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেন। বিভিন্ন মহাদেশে ভূরাজনৈতিক সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক এ অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। প্রযুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনার জেরে জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্বজুড়ে আঞ্চলিক সংঘাতের মতো সমস্যাগুলো সমাধানে একসঙ্গে কাজ করার প্রচেষ্টা জটিল হয়ে পড়ছে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ ইতোমধ্যে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এটা উভয়পক্ষের জন্য নিয়ে এসেছে ভোগান্তি। অধিকাংশ বিশ্লেষক একমত, এ সংঘাত চলতে থাকলে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম এইচ পাওয়েল বুধবার বলেন, এটা এখনও পরিষ্কার নয় যে, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে কিনা। তবে এর মানে এটা নয় যে, এর গুরুত্ব কম। কারণ, ১৯৭০-এর দশকের মতো বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি তেলের উৎপাদনকারী দেশগুলো বিশ্বের জ্বালানি তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে না। এখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশ। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সংঘাতময় অবস্থার কথা তুলে ধরে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর গ্লোবাল এনার্জি পলিসি বিভাগের পরিচালক জেসন বোর্ডফ বলেন, এটা অত্যন্ত অস্থির, অনিশ্চিত ও নড়বড়ে একটি পরিস্থিতি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।