সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২০৩

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : কিছু সামান্য খেয়ে বিছানায় পিঠ রাখলাম। ঘুম আসছেনা। ঘুমের সাথে আমার চিরকালের আড়ি। তবুও চোখ বুজে থাকলাম। একটু যেন তন্দ্রা এল, দেখলাম সুশান্ত কোথঅয় যেন অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। আমি সুশান্তকে ডাকলাম ও একবার ফিরেও তাকালনা। তবু আমি অনেক জোরে ডাকলাম, সুশান্ত ঘুম ভেঙ্গে গেল। তখন অনেক রাত। রাতজাগা পাখি মধ্যরাতের প্রহর ঘোষণায় ব্যস্ত। আমার ড্রইং রুমের বড় ঘড়িটা ঢং ঢং করে ৪টার ঘণ্টা পরল। এ ঘড়িটা আমার বন্ধুর মত সব সময় কাছে কাছে আছে। মধ্য রাতের প্রহর ঘোষণায় ও আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ও আমার নিত্য দিনের, নিত্য কালের বন্ধু।
আজ আমার বড় একা লাগছে। যাকেই কাছে রাখতে চাই সে দূরে চলে যায়। তবু তাকে যেতে দিতে হয়। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল, ক্রিং ক্রিং। উঠে ফোন ধরলাম। উমার গলা, আশ্চর্য্য হলাম। এত রাতে ? প্রশান্ত দা, ও অসুস্থ্য, কি বললে ? ও অসুস্থ, কেন ? কি হল ? ওর বুকে কষ্ট তোমাকে আসতে বললো, প্রশান্ত দা তুমি আস। আমি অস্থির হয়ে ফোন ছেড়ে দিলাম। আমার গা কাঁপতে লাগল। কি স্বপ্ন দেখলাম, কি ফোন এল, উমাতো আমাকে কোনদিন ফোন করেনি। সুশান্তই প্রয়োজনে করেছে। আজ আজ সুশান্ত কি একেবারেই অক্ষম হয়ে পরল। রাত ভোর হলো তাড়াতাড়ি চা-নাশতা সেরে ভার্সিটিতে যেয়ে ছুটির দরখাস্ত করে গাড়ী নিয়ে টরেন্টোর পথে চললাম। পথে যেতে যেতে কত কথা মনে হল। এই পথ দিয়ে কিছু দিন পূর্বে সুশান্ত আমাকে অসুস্থ্য অবস্থায় টরেন্টোয় নিয়ে গিয়েছিল। সুখে দুঃখে সে আমাকে চিরদিন সাহায্য, সহানুভূতি, আশ্রয়, অনুবেদন দিয়ে এসেছে। তাই এর মত, বন্ধুর মত, আশ্বাস-বিশ্বাস অভয় দিয়ে আমার মনকে খুশী রেখেছে।
সন্ধ্যার কিছু আগে গিয়ে টরেন্টোয় সুশান্তর বাসায় আমি পৌছে গেলাম। উমা সুশান্তর মাথায় বসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। দোলা-কচ ওরাও সুশান্তর পায়ের কাছে একটা চেয়ারের হাতল ধরে দাঁড়িয়েছিল। মাধুরী অরেঞ্জ স্কোয়াশ এনে সুশান্তকে খাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে ভবতোষ। ডাক্তারের সাথে ফোনে কি কথা বলছিল। এমন সময় আমি দরজায় কলিং বেল টিপে দিলাম। দরজা খুলে মাধুরী এক কোনে দাঁড়াল। সমস্ত ঘরটা যেন নিস্তব্ধ-নিঝুম। আমি সুশান্তর মাথায় হাত রাখলাম। উমা কেঁদে ফেলল। আমি বললাম, ছিঃ উমা, সুশান্ত দু’চোখ মেলে আমার পানে তাকিয়ে বলল তুই এসেছিস ? আমি বললাম, হ্যাঁ। সুশান্ত আবার চোখ বুজল। আমি বললাম, তোর কি হয়েছে ? বুকে হাত দিয়ে দেখাল। গায়ে দেখলাম বেশ জ্বর। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে আমি নিজেই ডাক্তারের সাথে দেখা করে আলাপ করতে গেলাম। ডাক্তার বলল, লাঞ্চে জল জমেছে। বাসায় এসে ভবতোষ বাবুকে বললাম। ওদের সকলকে বললাম। কিছুনা, ভাল হয়ে যাবে। সুশান্তর খুব জ্বর, মাঝে মাঝে ঘুমের ঘোরে প্রলাম বকে। আমি কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। সুশান্ত আমার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ছাড়ে। আমি বলি সুশান্ত কাঁদিসনে ভাল হয়ে যাবি। তোকে হাসপাতালে রাখতে হবে। ডাক্তাররা লাঞ্চের জল কমাবার ঐষধ দেবে, ও আরও অন্যান্য চেষ্টা করবে।

(চলবে————-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।