সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২০২

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : দোলা, কচ, সুশান্ত ওরা ভালত ? কেন জানি একটা অমঙ্গল আশংকায় আমরা বুকটা সর্বক্ষণ ছেয়ে থাকে। মায়ামির সমুদ্রের হঠাৎ এক্সিডেন্টটার কথা মনে আমার গেঁথে আছে। আবার গিয়ে বিছানায় পিঠ রাখলাম। ভোর হলো হাত মুখ ধুয়ে নাশতা করলাম। ভার্সিটিতে যাবার জন্য পা বাড়ালাম। হঠাৎ পিয়ন একটা চিঠি দিয়ে গেল। দেখলাম ক্যামেলিয়ার চিঠি। চিঠিটা পেয়ে খুব খুশী হলাম।

প্রশান্ত,
অনেকদিন পর তোমার ও সুশান্তর সাথে দেখা হয়ে আমি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাবার মত খুশী হয়েছি। মায়ামি সমুদ্রের পাড়ে যেয়ে অনেক আনন্দে জলে ঝাপিয়ে পরে আনন্দকে প্রকাশ করার সয়ম ঘটল অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা। সুশান্ত এই ভাবে নিজের জীবন বিপন্ন করে আমাকে বিপদ সীমা থেকে উদ্ধার করল। এই ঘটনা আমাকে দেবপ্রিয় মায়ামি থাকতে বলেনি। কলকাতায় এসে তবে দেবপ্রিয় বলেছে, যদি মায়ামি থাকতে একটু জানতে পারতাম। সুশান্তকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসতে পারতাম। দেবপ্রিয় অনেক অনেক দেরী করে ফেলল। তাই তোমাকে চিঠি দিলাম। আমি অকৃতজ্ঞ নই। তোমরা এবার বম্বে বেড়াতে এস না ? এখানকার আরব সাগরও অসুন্দর নয়, যার মন সুন্দর। তার কাছে পৃথিবীর সর্বত্রই সুন্দর হয়ে দেখা দেয়।

ইতি
ক্যামেলিয়া।

চিঠিটা পেয়ে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকলাম। ভাবলাম অনেক অনেক কথা। সুশান্তর ত্যাগ তিতিক্ষার কথা ভাবতে ভার্সিটির পথে পাড়ি জমালাম। ক্লাশে ঢুকে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়া নিলাম। তারপর কমন রুমে বসে ক্যামেলিয়ার চিঠিটা বের করে চোখ বুলিয়ে গেলাম। অমিয় দেবতোষ বিজন ওরা বলল, কি হে মিসের চিঠি নাকি ? আমি বললাম, কি যেন বলেন, আমাদের ক্লাশ ফ্রেন্ডের চিঠি বম্বে থাকে। ওরা বলল, তাই নাকি ? বিজন বলল, প্রশান্ত বাবুর কি কপাল, কত মেয়ের চিঠি পায়। আমরাত পাইনে। গশলে হেসে উঠল। আমি আর কিছু বললাম না। শুধু চুপচাপ সেখান থেকে কেটে পরলাম। তখন লাঞ্চ এর সময়, পেটটা ভীষণ ক্ষুধায় চোঁ চোঁ করছে কিছু খেলাম। কেমন যেন উদভ্রান্তের মত সারা পথে ঘুরে বেড়ালাম। এই ক্যামেলিয়াকে সুশান্তর এক ঘণ্টা না দেখলে মন অস্থির হত। আজ সুশান্তর সামনে দিয়ে ক্যামেলিয়া দেবপ্রিয়র হাত ধরে বম্বে চলে গেল। সুশান্ত ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকল। কোন অধিকার নেই, দাবী করার উপায় নেই। সে এখন পরস্ত্রী।
সুশান্ত খুব ভদ্র লোকের মত চুপচাপ তার স্ত্রী উমাকে নিয়ে মায়ামি থেকে ভার্জিনিয়া ফিরে এল। ভার্জিনিয়া দু-চার দিন কাটিয়ে টরেন্টো ফিরে এল। তবে ওর যেন শরীরটা তেমন ভালো যাচ্ছে না। এটা কি ওর মানসিক, না শরীরিক বুঝতে পারলাম না। তবে ওর কাছ থেকে একটা জিনিস শেখার আছে, প্রেম ভালবাসার উর্ধে কর্তব্য বড় জিনিস। সেটা ও দেখিয়ে দিল। ও চরি দিনই একটু রসিক লোক ছিল। হাঁসি তামাশা করতে ও খুব ভালো বাসত। কিন্তু ক্যামেলিয়ার ব্যাপারে একেবারে চুপ করে গেল। সন্ধ্যা হয়ে এল, অনন্ত আকাশে অসংখ্য তারা ঝিক ঝিক করছিল। আকাশের চাঁদ যেন অনেক সুন্দর হয়ে সুনীল আকাশের এক কোনে ভেসে উঠল। মেঘমুক্ত উদার আকাশে একখানা সপ্তর্ষি অনন্ত প্রশ্নের মত, আমাকে বার বার প্রশ্ন করছে, জীবনে কি পেলাম, কি হারালাম। লাভ লোকসানের কথা। আমি কোন উত্তর দিতে পারছি না। তবু আমার মন চিৎকার করে বলে উঠল কর্তব্য। আমরা কর্তব্যের বাহক। সমগ্র পৃথিবীর বুকে প্রেম ভালাবাসা, রোমাঞ্চ-ভাল লাগা, ভালো জানা, সব ভুল। সবি ভুল এ জীবনের পাতায় পাতায়, প্রশ্ন করি নিজের কাছে, কোথায় ছিলাম, কোথায় যাব। এই আমি গানটা যেন আমাকে এই কথা গুলি আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেল।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।