সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২০১

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : দিনের আলো অনেক কমে অন্ধকার হয়ে আসছে। প্রত্যেকেই তাড়িঘড়ি করে যার যার গাড়ীর দিকে এগিয়ে চলছে। আমিও গাড়ীতে এসে স্টার্ট দিলাম। আবার সেই কোন গাছের পাতা লাল-গাঢ় লাল, নীল-গাঢ় নীল, সবুজ-গাঢ় সবুজ, হলুদ-কাঁচা হলুদ, বেগুনি-গাঢ় বেগুনি, ম্যাজেন্টার, টিয়া রং কাচ পোকা রংয়ের রাজ্যে এসে পরে আমি মাঝে মাঝে গাড়ীর স্টিয়ারিং হুইল ছেড়ে দেবার উপক্রম করেছিলাম। ভগবান পৃথিবীকে, এক একটা দেশকে, রূপে রসে ছন্দে বর্ণে অপরূপ করে সাজিয়ে মানুষকে দিশা বিদিশ করে ফেলেন। আমি যদি মন্ট্রিলে না আসতেম তাহলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-নভেম্বর মন্ট্রিলের এই রূপ আমি স্বপ্ন জড়িমা চোখে দেখতেম কিনা জানিনা। দূর-দূরান্তর থেকে এই অপরূপ সুন্দরীকে দেখে যেনও আমি আমার মনের তৃষ্ণা মেটাতে পারছিনা। মনে অনেক অনীহা থাকা সত্ত্বেও আমাকে আমার বাসায় ফিরে আসতে হল। ঘরে এসে লাইট জানালাম। একটু বিশ্রাম নিলাম। বড্ড একা, একা মোটেই ভালো লাগছে না। সুশান্তকে ফোন করলাম। উমা ফোন ধরল, বলল সুশান্ত অসুস্থ। আমি আসার পর খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে বিছানা নিয়েছে। আমি বললাম কেন, ভার্সিটি যাচ্ছে না ? উমা বলল, ওর বুকে কষ্ট হচ্ছে। আমি বললাম, কচকে ডেকে বল ওকে ডাক্তার দেখাতে। উমা কাঁদ কাঁদ ভাব। বলল, প্রশান্ত দা ওর-ত কোনদিন এরকম দেখিনি ? জলে ডোবার পর এরকম করছে। আমি বললাম, আচ্ছা আমি দোলাকে ফোন করে বলে দিচ্ছি।
দোলাকে ফোন ডাকলাম। দোলা ফোন ধরল। হ্যাঁলো দাদু। আমি বললাম, তোমার সুশান্ত দাদুর শরীর খারাপ, কচকে বল ওকে ডাক্তার দেখাতে। প্রয়োজন তোমরা দু’জনে ওকে দেখাশুনো করো। দোলা বলল, আচ্ছা দাদু। আমি দোলা কচের কাছে ওদের দায়িত্ব দিয়ে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। আমার নিজের শরীরও তত ভাল না। তারপর আবার সুশান্তটা আমাকে একটু দেখা শুনো করত। তাও আবার সমুদ্রের এক্সিডেন্টের পর সুশান্ত ঝিমিয়ে পরেছে। ওকে কোনদিন অসুখে পরতে দেখিনি। এখন দেখি কি হয় না হয় ওকে মন্ট্রিলে নিয়ে আসব। আমার নিজের অসুখের জন্য অনেক ছুটি নিলাম। এখন আর ছুটিও পাওয়া যাবে না। সেপ্টেম্বর সব স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি খুলে গেছে। কচ দোলাকে-ত বলেছি, মাধুরী-ভবতোষ ওরা আছে। তবু সুশান্ত যেমন আামকে ভাইয়ের মত দেখে, আমিও ওকে আমার নিজের ভাইর মত দেখি। আর কেহকি ওরকম দেখবে। অনেক কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম। অনেক রাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঠিক মধ্যরাত বিছানা ছেড়ে উঠে ড্রইং রুমের জানালা দিয়ে দূরে, অনেক দূরে কতক্ষণ বিশাল আকাশের পানে তাকিয়ে থাকলাম, অনেক অসংখ্য তারায় আকাশটা ছেয়ে ছিল। অন্ধকার গাঢ় অন্ধকার। একটা রাতজাগা পাখি পাখা ঝাপটিয়ে কেন যেন একটা আর্তনাদের মত শব্দ করে উড়ে গেল। দেওয়ালের বড় ঘড়িটায় ঢং ঢং করে ওটার ঘন্টা পরল। আমি চমকে ঘড়ির পানে কতক্ষণ চেয়ে থাকলাম। এ ঘড়িটা আমার বহুকালের বন্ধু। ও চির দিন আমার পাশে থেকে মধ্য রাতের প্রহর ঘোষণা করে। প্রতিদানে ও আমার কাছ থেকে কিছুই পায়নি। যে যাকে ভালবাসে সে প্রতিদানের আশা করেনা। ভালবাসার এটাই হল বড় সার্থকতা। আর আমিত কাউকেই কিছু দেইনি। তবু এই হতভাগাকে সকলে ভালবাসে। কেন বাসে আমি জানিনা। জানার চেষ্টাও কোনদিন আমি করিনি। করার কোন প্রয়োজনও মনে করিনি।

(চলবে—–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।