সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২০০

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : কিচ্ছু ভালো লাগে না। দুটো ডালে চালে খিচুড়ী পাকালাম। ডিম ভাজা এ দিয়ে দুটে মুখে দিলাম। একটু ঘুমালাম। বুক শেলফে থাকে থাকে বই বড় বড় লেখকের লেখা বই সাজান। একটা টান দিয়ে পড়তে চেষ্টা করলাম। কেন জানি ভালো লাগেনা। নেহরুর জীবনী নিয়ে নাড়া-চাড়া করলাম। সন্ধ্যে হয়ে এল, গাড়ী নিয়ে নবেন শিয়ানের পথে পাড়ি দিলাম। গাড়ী অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে চলল।
দিগ-দিগন্ত জুড়ে বনরাজি যেন অপূর্ব সেজে বসে আছে। তখন বরফ ঝরার দিন আসি আসি করছিল। ভীষণ ঠান্ডা বাতাস। হাত পা যেন বরফের মতো জমে আসছে। ঠোটটা ঠান্ডায় অবশ হয়ে আসছিল। ঠান্ডা বাতাস ছিল গাড়ীর কাচ খোলা হয়নি। সারা বন বনান্তরে যেন রংয়ের আগুন লেগেছে। কোন গাছের পাতা লাল, কোনটা গাঢ় লাল, হলুদ, কাঁচা হলুদ, সবুজ, হাল্কা সবুজ, নীল, গাঢ় নীল, আকাশ নীল, জাফরানি রং টিয়া রং, কাচ পোকা রং, আমাকে যেন নিস্মত মুগ্ধ, স্তম্ভিত করে ফেলল। গাড়ী নিয়ে আমি গভীর বনের দিকে এগিয়ে চললাম। একটা পাহাড়িয়া নদী তর তর করে বয়ে যাচ্ছিল। কতগুলো সাদা ছেলে মেয়ে একটা ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। কতগুলো লোক ঝরণার পাড়ে টেনিস খেলছিল। খেলতে খেলতে হঠাৎ পা পিছলে ঝরণার জলে পরে যায়, সে নিজের চেষ্টায় কিছুতেই উঠতে পারছেনা। তখন খেলার মধ্যে থেকে কতগুলি লোক তাকে টেনে তুলল।
তখন সন্ধ্যা হয়ে আসছিল, আমি মন্ট্রিলে ফিরে আসার জন্য মনে মনে ঠিক করে ফেললাম। আর মন্ট্রিলের পরিচিত কয়েকজন বন্ধুকে দেখলাম অনেক দূর দিয়ে ঘুরে ঘরে বেড়াচ্ছে। তার মধ্যে আমি নিশা আর সুমনকে দেখে চমকে গেলাম। অভিলাষ তখন ব্রীজের দিকে হেটে যাচ্ছিল। নিশা আর সুমন ম্যাগগিল ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রী। অভিলাষ অটোয়ায় পড়াশুনো করত, সুমন নিশাকে নিয়ে ম্যাগগিলের অনেক মুখরোচক গল্প রাহাত খানের মারফত আমার কানে এসে পৌছেছিল। নিশা সুমনকে ভালবাসে। সে ভালবাসা আসমুদ্র হিমাচল ব্যাপী, কিন্তু অভিলাষ এসে তার মধ্যে বাঁধ সাধল। ওরাও দেখি এখানে ওখানে ঝরণার কাছে, কখন ব্রীজের উপর। ৩ জনেই গল্প করছে, সুমনের হাব ভাবে বেশ বোঝা যাচ্ছে। সে অভিলাষের উপস্থিতি মোটেই পছন্দ করছেনা। কিন্তু নিশার মনের দিকে চেয়ে সুমন ইতস্তত করছে। আমি ঝরণার কাছে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ কি যেন ভাবছিলাম। অনেক অনেক কথা। দেখলাম নিশা সুমন অভিলাষ আরও গভীর বনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

(চলবে——)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।