সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-১৯৯

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : আমার যেন কেন সুশান্তকে কেমন কেমন মনে হল। তবু আমি জানি ও বড় আপন ভোলা। নিজের কথা মোটেও ভাবেনা। কেবল পরের কথা ভাবে, পরের উপকার করে। এটা ওর আজীবন এর হবি। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আমি অনেক সুন্দর সুন্দর মনোমুগ্ধকার সৌন্দর্য্য নয়ন ভরে গ্রহন করে করে শেষ পর্যন্ত মন্ট্রিলে এসে নিজের বাসায় বহুদিন পর পায়ের ধুলো ফেললাম। ঘরের জিনিস পত্র সব আগোছালো লন্ড-ভন্ড এদিক-ওদিক ছড়িয়ে আছে। কতক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। তারপর কয়েক খন্ড ব্রেড, একটা ডিম পোচ করে খেয়ে নিলাম।
বড় একা লাগছিল, গোলা থাকতে কেমন যেন আমার জীবনের পরিবর্তণ এসেছিল। ভাবছিলাম দোলাকে কাছে রেখে বাকী জীবনটা কাটাব। তা ওকে বিয়ে দিতে হল। শুয়ে একটা ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠে ঘর দোরটা পরিস্কার করলাম। আর দোলার কথা বার বার মনে করলাম। দোলা যদ্দিন ছিল আমি কোনদিন ঘর দোর পরিস্কার করিনি। তাকের মধ্যে দোলার হাতের আচাঁর, আমসত্ত্ব, কুমড়োর বড়ি, একটা বয়ামে দেশ থেকে আনা চালের গুড়ো সব পরে আছে, শুধু মানুষটা নেই। দোলারও বোধ হয় আমার জন্য মন কেমন করছে। হঠাৎ দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল। দরজা খুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখি শ্যামল মুখে মৃদু হাঁসি নিয়ে ঘরে ঢুকল। আমি বললাম, তুমি কোথা থেকে ? শ্যামল বলল, জামাই বাবু বললেন আপনি গতকাল এসেছেন। এখন আপনার ভার্সিটি শেষ হয়ে গেছে। সেজন্য আপনাকে দেখতে এলুম। আমি বললাম বেশ, বেশ বস। না বসবনা। বাসায় কাজ আছে। দিদির শরীর খারাপ, বাচ্চারা দিদিকে জ্বালাতন করে, যাই ওদের সামলাই গিয়ে। ও খুব ব্যস্ত হয়ে চলে গেল।
তারপর দিন ভার্সিটিতে গেলাম অনেকদিন পরে। ছাত্র-ছাত্রীদের দেখে মনটা খুব ভাল লাগল। সকলেই বলল স্যার কেমন আছেন, শরীর ভাল-ত ? অনেক দিন আপনাকে আমরা দেখি নাই, তবে আপনার খোজ-খবর নিয়েছি। আপনি সুস্থ্য হয়ে আসুন এটাই আমরা কামনা করছি। আমি ওদের সরল-সহজ অনাড়ম্ভও মুখের দিকে তাকিয়ে যেন অনেক অনেক শান্তি পেলাম। ওরা আমায় কত আপন মনে করে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমার কেই নাই, কিছু নেই। আজ মনে হয় না, না, এটা আমার ভুল ধারনা। আমার সব আছে, এদের মাঝেই আমি বেঁচে থাকব, এদের মাঝেই আমার জীবনের স্বপ্ন-সাধ পরিস্ফুট হয়ে উঠবে এদের যশ কীর্ত্তির মাঝে। অনেকক্ষণ ক্লাশ নিলাম। এসে কমন রুমে বসলাম। বন্ধুরা ছেঁকে ধরল, কেমন হল দোলার বিয়ে ? কেন হল ডিজনী ভ্রমণ ? এমনি না না কথা ডিজনীর গল্প করলাম। না ভই, আমাদের বেড লাক। সেকি ? সকলে বলে উঠল, আমাদের ক্লাশ ফ্রেন্ড বম্বে থেকে স্বামী ডাক্তার, তার সাথে ডিজনীতে আলাপ হয়। আমাদের সাথে ওরা মায়ামি যায়। তারপর মেয়েটি সমুদ্রে ¯œান করতে ঢেউয়ে ঢেউয়ে সমুদ্রের অনেক দূরে চলে যায়। সুশান্ত তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেই ডুবে যেতে লাগল। সকলেই বলে উঠল সেকি ? সকলেই প্রশ্ন আমার কাছে তারপর ? তারপর স্প্রীড বোট তাদের উদ্ধার করে। জল খেয়ে জলমগ্ন হয়ে, দু’জনেরই জ্ঞান ছিলনা। দুজনকেই হাসপাতালে দেওয়া হল। ৪-৫ দিনে ওরা সুস্থ্য হয়ে উঠল। মেয়েটি স্বামীসহ কলকাতায় পাড়ি জামাল। আমরা ভার্জিনিয়ায় চলে এলাম।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।