সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-১৯৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : আবার এদিকে দোলা-কচ সমুদ্রের পাড়ে বেড়াতে গিয়ে বন্য জন্তুও হাতে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে হাসপতালে সিট নেয়। দু-দুইটা এক্সিডেন্ট, সকলেই আমরা বিভ্রান্ত হয়ে পরেছিলাম। তারপর একটু সুস্থ্য ও সবল হয়ে যে যার যায়গায় পাড়ি জানালাম। সুশান্ত একটু নরম হয়ে পরেছে। টরেন্টো এসে ভার্সিটি যায় সত্য, কিন্তু খুব চুপ-চাপ থাকে। আর কি যেন ভাবে। উমা সব সময় ওর খাওয়া-দাওয়া বিশ্রামের প্রতি সজাগ। দোলা-কচ ওর বড়দার ওখানে চলে গেছে। ওরা ভাল আছে, তবে দোলার মুখের ডান পাশে নখের আচড়ের দাগ রয়ে গেছে। হয়ত আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাবে। কচ এর হাতের ও রানের দাগ আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে।
আমি সুশান্তকে আমার যাওয়ার ডেট জানালাম পরশু ভোরে। সুশান্ত মৃদু হাসল। আমাকে ভেড়ে যাবি ? আমি বললাম, আর কতদিন থাকব বল ? আমার ছুটির মাত্র আর ৪দিন আছে। সুশান্ত বলল একদিন আগে যা শূণ্য বাড়ীতে গিয়ে কি তোর মন বসবে ? আমি বললাম, পূর্বের জীবনই চালাব। ভার্সিটি, বাড়ী, কমন রুম, মন্ট্রিল পাহাড়, সেন্ট ক্যাথারিন, রুসলী, শ্যামভেলী, অটোয়া, কুইবেক এই করেই জীবনের বাকি কটা দিন আমি কাটিয়ে দেব। সুশান্ত হাসল। ওর কথায় আরও ৩দিন থেকে গেলাম। আমারও মন যেতে চায়না। তবু চাকুরী, ঐটা আছে বলেই ঐ ছাত্র-ছাত্রীদের অনাবিল আনন্দ ¯্রােতের মাঝে ওদের কচি কচি শুভ্র সুন্দর মুখের পানে তাকিয়ে আমি যেন কোন অনাগত দিনের স্বপ্ন দেখি। ওরা আছে বলে আমি বেঁচে আছি। তারপর কমর রুম, ভার্সিটির অন্যান্য প্রফেসারদের সাথে হয় রাজনীতি, না হয় সমাজনীতি না হয় গার্হস্থ্যনীতি নিয় দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর আলোচনা করি। এই ভাবেই জীবনের কটা দিন উৎরে যাবে। সুশান্ত কতক্ষণ আমার মুখের পানে নির্নিমেষ নয়নে চেয়ে থাকল। আমি বললাম, অমন করে দেখছিস কি ? তুইকি আমাকে নতুন দেখছিন না আমার মুখ থেকে এই প্রথম নতুন কথা শুনছিস। সুশান্ত বলল, তোকেও নুতন দেখছিনা, আর এই রাজনীতির এই সব গরম গরম বুলিও নতুন শুনছিনা। তবু যেন তোর মুখে এসব কথা বড় ভাল শুনায়। আমি আর কিছু বললামনা।
আর দু’তিনদিন খেয়ে শুয়ে গল্প করে চলে গেল। যাওয়ার দিন খুব ভোরে আমি আমার ছোট বাক্সটা কাপড়ের ব্যাগটা গাড়ীতে তুলছিলাম। সুশান্ত বলল, অতদূর গাড়ী ড্রাইভ করে যেতে পারবি-ত ? আমি বললাম, খুব পারব। সুশান্ত হেসে বলল, ইস খুব যে তেজ দেখাচ্ছিস। আমি বললাম, এখন আমি ভাল আছি, তুই তোর নিজের চিন্তা কর। আমি যখন গাড়ীতে উঠছিলাম ও আমার গাড়ীর দরজা ধরে বলল, ধীরে ধীরে গাড়ী চলাস বুঝলি ? আমি বললাম, তুই চিন্তা করিসনা, ঠিক পৌছে যাব। দোলা এসেছিল ? আমি বললাম, দু-তিনদিন আগে এসেছিল। সুশান্ত দু’তিন দিন আগে কি ? কাল আসেনি ? আমি বললাম, দোলার শরীরটা মনে হয় ভাল না। সুশান্ত রেগে গিয়ে বলল, তোকে কে বলল ? আমি বললাম, আমি দেখতে পাচ্ছি। বমি করে, মাথা ঘোরে, বোধ হয় প্রেগন্যান্ট। সুশান্ত চুপ করে থাকল। আচ্ছা আমি-ত এখানে আছি, সব সময় খোজ নিতে পারব। আমি গাড়ী ছেড়ে দিলাম। বললাম, সুশান্ত গুড বাই। সুশান্ত কিছু বললনা। অনেকক্ষণ দূর অনেক দূরের পথ পর্যন্ত তাকিয়ে থাকলাম।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।