সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-১৯৭

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : সন্ধ্যায় হয় হয় আমরা টরেন্টোয় এসে সুশান্তের বাড়ীর সামনে গাড়ী থামালাম। উমা, দোলা, কচ সকলেই গাড়ী থেকে তর তর করে নেমে গেল। আমি সুশান্ত আস্তে আস্তে জিনিস-পত্র গুছিয়ে গাছিয়ে তবে নেমে এলাম। উমা কিচেনে ঢুকে ডাল-ভাত চড়িয়ে ডালে আলু সিদ্ধ দিল। সকলেরই পেটে বেশ ক্ষুধা লেগেছে। তাও যে বেচারী উমা উপলব্ধি করতে পেরেছে। সেজন্য ওকে ধন্যবাদ জানালাম। আমি বড় ক্লান্ত বোধ করছিলাম। মায়ামি’র ঐ ব্যাপারের পর থেকে আমার নিজের শারিরীক অসুস্থ্যতার কথা একদম ভুলে গেছিলাম। শুধু দোলা দোলা, কচ কচ করে আমি উদভ্রান্তের মত সাগরের পাড়ে ধ্যান মগ্ন ঋষির মত ওদের খুজেছি, আর ভগবানকে ডেকেছি।
তারপর ক্যামেলিয়া সুশান্তর সমুদ্রে ডুবে যাওয়া কি একটা ভয়াবহ বিপদ সীমানা পাড়ি দিয়ে আমরা আজ আবার আনন্দের দুয়ারে পা রাখলাম। ঘরে বসে ভগবানকে কতক্ষণ স্মরণ করলাম। সত্যি মায়ামির সমুদ্রে ক্যামেলিয়া ¯œান করতে নেমে ঢেউয়ে ভেসে গেল। সুশান্ত ঝাপ দিয়ে ক্যামেলিয়াকে উদ্ধার করতে যেয়ে নিজেই পরাজিত হয়ে সমুদ্রের জলে নেতিয়ে পরল। সঙ্গে সঙ্গে স্প্রীড বোট না গেলে ক্যামেলিয়া সুশান্তর সলিল সমাধি ঘটত। ওঃ ভাবলে গা শিহে উঠে। সাথে সাথে হাসপাতালে না নিলে ওদের বাঁচানো সম্ভবপর হতনা। ক্যামেলিয়া সুস্থ্য হয়ে দেবপ্রিয়কে নিয়ে মায়ামি থেকে কোলকাতায় পাড়ি জমাল, বেচারা ভীষণ ভয় পেয়েছে বোধ হয়।
আর কচ-দোলা ? তাদেরও সেই দশা কোথায় আমাদের সকলকে নিয়ে ওরা হানিমুন করতে গেল। গাড়ী থামিয়ে সমুদ্রের জন সমাবেশে আমরা ¯œানের উদ্যোগ করছিলাম। এরমধ্যে কচ-দোলা দু’জনে নিরালা-নির্জনে, নিরবে-নিথরে দুটো প্রেমালাপ, রসালাম করতে। সুমুদ্রের তীর ঘেষে সৌন্দর্য্যরে রঙ্গলীলা, উর্মিমালা ছল ছল, কল কল ধ্বনির মাঝে নিজেদের হারিয়ে যৌবনকে উপভোগ করছিল। হয়ত খেয়ালই ছিলনা জন-মানব ছারিয়ে লোকালয় রেখে ওরা কোথায় কতদূর এসেছে। বা কতদূর-দূরান্তর যাচ্ছে। একেই বলে যৌবন তারপর বন্য জন্তুও আক্রমনে আহত হয়ে ধরাশায়ী। ভগবানের অপার লীলা, ভাগ্যিস স্থানীয় লোকেরা তাদের হাসপাতালে দিয়েছিল।
এবারের সমুদ্র ভ্রমণ আমাদের বিফলে গেল। ওয়াল্ট, ডিজনী ওয়ালর্ডে ভলই দেখা শুনা করতে পেরেছি। বরং ক্যামেলিয়াকে পেয়ে জমেছিল ভালো। অনেক অনেক বছর পর ক্যামেলিয়ার সাথে দেখা। কত জল্পনা-কল্পনা করেছি, ওকে এসব ঘুরিয়ে দেখিয়ে বিস্ময় বোধ করার, তা হলই না। বেচারা ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি পালিয়েছে। যাক সব সময় সব কিছু সুখের হয়না। শান্তির হয় না। সুখ আর দুঃখ মানুষের জীবনে পাশাপাশি আছে। সুশান্ত-ত নিজেই ক্যামেলিয়ার জন্য মরতে বসেছিল। বেচারা এখনও মনে মনে ক্যামেলিয়ার প্রতি অনুরাগ, অনুকম্পা, অনুবেদন অনুভূতি ঝরে পরে। মুখে কিছুই প্রকাশ করেনি। কিন্তু ওর এই কাজে আমি সব বুঝে ফেলেছি। ক্যামেলিয়া মায়ামি থেকে প্লেন উঠার দিন সুশান্তর মুখ যেন অমাবশ্যার রাত। কাউকে কিছু বলেনি, আমি ওর অন্তরঙ্গ বন্ধু। ওর মনের খবর আর কেউ না জানুক, কিন্তু আমি সব জানি, সব বুঝি। পিছনের ভার্সিটির ক্যামেলিয়ার সাথে ওর ফেলে আসা জীবনের অনেক স্মৃতি বিস্মৃতি মনের গহীনে সুক্ষè অনু-পরমানুর মত সজাগ ও সচল। ক্যামেলিয়া জ্ঞান ফিরে আসার পর সুশান্তর কোন খোঁজও নেয় নাই। কে ওকে সমুদ্র থেকে তুলতে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করতে বসেছিল। তা ও কিচ্ছু জানেনা। দেবপ্রিয়ও ওকে বলেনি, আর বলার সময়ও বা পেল কখন ?

(চলবে————-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।