সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-১৯৬

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : আমরাও কুসুমের বাড়ী থেকে রাত ১২টার সময় ডোরার বাড়ীর অভিমুখে রওয়ানা দিলাম। ডোরা কচের মিউজিক বাজানোর খুব প্রসংশা করল, সুশান্ত আরও উচ্চ প্রসংশা করল। ডোরা বলল ছেলেটা শুধু শিক্ষিতই নয়, একজন উ”ু দরের শিল্পী। প্রশান্ত তুমি খুব ভালো নাত জামাই পেয়েছে। যেমন সু¯্রী, লম্বা চওড়া, টানা টানা বড় বড় চোখ। দু’চোখ বুদ্ধি মত্তার ছাপ। আমরা ডোরার বাড়ীতে দু-চারদিন থেকে টরেন্টো আসার জন্য মনস্থির করে ফেললাম। কচ দোলাও আমাদের সাথে ফিরে আসতে মন স্থির করে ফেলেছে। কুসুম খুব মন খারাপ করে বসে আছে। আমাকে বলল দাদু, বৌদি আরও ক’দিন থাকনা। আমি বললাম, ওকে জিজ্ঞাসা কর, ওরা যদি থাকতে চায়, তবে থেকে যাক, পরে যেতে পারবে। দোলা লল না দাদু, মায়ামিতে ঐ এক্সিডেন্টের পর আমার আর ঘুরতে ইচ্ছে করছেনা। আমিও টরেন্টো থেকৈ মন্ট্রিলে যেয়ে তোমার কাছে বিশ্রাম নেব। কচ বলল, দেখ টরেন্টো চল, বড়দা কি বলে। আমি বললাম, সেই ভাল।
সেদিন খুব ভোরে আমি, সুশান্ত, উমা, কচ, দোলা, ডোরা ও কুসুমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে টরেন্টোর পথে পাড়ি জমালাম। ডোরা অপলক নেত্রে আমাদের যাত্রার পথ পানে তাকিয়ে ছিল। দুটো চোখ ছল ছল করে জলে ভরে উঠেছিল। অনেক কথা বলতে গিয়েও যেন বলতে পারেনি। তার কণ্ঠ রোধ হয়ে আসছিল। কুসুম কাঁদছিল। তার ছোড়দার জন্য ভাইটি বেড়াতে এসে সমুদ্রের পাড়ে এই অঘটন ঘটেছিল বলে। আমি বললাম, কুসুম কেঁদনা, ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যে প্রাণঘাত করেনি। অল্পেতেই ছেড়ে গেছে। আমরা যাদের নিয়ে এসেছিলাম, আবার ভগবানের কৃপায় সুস্থ্য দেহে সুস্থ্য মনে টরেন্টোর পথে পারিদিচ্ছি।
দোলা-কচ-কুসুমের জন্য খুব মন খারাপ করেছিল। আকাশ চৌধুরী হাঁসি হাঁসি মুখে, খুশী মনে আমাদের বিদায় নিলেন। আমরা আবার দু-গাড়ী এক সাথে চালিয়ে সারা পথে গল্প করতে করতে জর্জিয়া ইনফরমেশন সেন্টারে এসে নেমে চা, কফি, চীজ, ফল, কোক খেলাশ। দোলাকে খুব খুশী খুশী লাগল ওর যেন মায়ামির ঐ ব্যাপারের পর থেকে কেমন ভয় ভয় কাটছিলনা। এখন যেন কেমন ফ্রি মনে হল। কেমন উচ্ছল দূরন্ত প্রজাপতির মত ঐ ফুলে সেই ফুলে হাত দিয়ে ধরে দেখছে, আর এক এক ফুলের গন্ধ গ্রহণ করছে। পার্কের এধার থেকে ওধারে পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে দেখছে।
আমি ওদের গাড়ীতে উঠতে বললাম, আবার আমরা দুটো গাড়ী স্টার্ট দিলাশ। সুদৃশ্য বনরাজি মনোরম-মনোহর হয়ে আমাদের চোখের সামনে থেকে দূর থেকে দুরান্তরে মিলিয়ে যাচ্ছে। জানিনা আবার কবে কখন কোনদিন কোন সময় এপথ দিয়ে আমরা ভার্জিনিয়া বা জর্জিয়া আসার পরিকল্পনা করতে পারি। তা ভবিতব্যই জানেন। মনটা আমার যেন কেন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল। যাওয়ার সময় দেখার আশা, পাওয়ার বাসনা, আর—এখন ? ফেলে আসার বেদনা। তবু যতদূর সম্ভব মুখে হাসি ফুটিয়ে সকলের সাথে কথা বলছি। যেতে আমি দেবনা তোমায়, তবু যেতে দিতে হয়। রবী ঠাকুরের সেই কবিতাটি মনে পরল। কবি সাহিত্যিকরা মানুষের মনের কথাগুলি কেমন সুন্দর করে লিখে গেছে।

(চলবে——–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।