সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-১৯৫

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : আকাশ চৌধুরী তার ড্রইং রুমে বিভিন্ন ফুল সম্ভারে সুসজ্জিত করেছে। তাজা ফুলের গন্ধে ঘরখানা যন মাতিয়ে রেখেছে। দোলা কুসুম এখনও ড্রইং রুমে প্রবেশ করেনি। বোধ হয় কিচেনে অতিথি বর্গের খাওয়া দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত, কচ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পায়জামা-পাঞ্জাবী পড়ে প্রবেশ করল। দোলা লাল একখানা ঢাকাই ভিটিথান, লাল ব্লাউজ, লাল কাঁচের চুরী পরে এসেছে। কপালে সিঁদুরের টিপ, সিঁধিতে সিঁদুর। প্রকান্ড চুলগুলি স্যাম্পু করে ছেড়ে দিয়েছে। সকল অতিথি বর্গের চোখ তার প্রতি নিবদ্ধ। কুসুমও একখানা আকাশ নীল তাতের শাড়ী পড়ে, হাতের আকাশ নীল রেশমী কাচের চুরি পরে ঢুকল। সেদিন এই সুদূর দেশে এই এমেরিকায় বাংলার মান, বাংলার কৃষ্টি, বাংলার ঐতিহ্য যেন ঝলমল করে উঠল। আরও যারা বাঙ্গালী বৌরা এসেছিলেন সকলেই বিভিন্ন রকমের শাড়ী পড়ে বাংলাদেশের গৌরব বৃদ্ধি করেছে। সকল অতিথিবর্গ এসে আকাশ চৌধুরীর বাড়ীতে জমা হয়ে গম গম করছিল।
আকাশ চৌধুরী কচ দোলাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন সকল অতিথি বর্গের সাথে। এই আমার এক মাত্র শালা। সকলেই হো হো করে হেসে উঠল। এই শালা। বৌ দোলা। সকলকে নমস্কার জানাল। তারপর সুশান্ত-প্রশান্তর দিকে চেয়ে আমাদের দাদু, প্রশান্ত বাবু মন্ট্রিল কঙ্ক্রোডিয়া ভার্সিটির প্রফেসার। সুশান্ত বাবু টরেন্টো ভার্সিটির প্রফেসার আজকের প্রধান অতিথি। সকলেই খুশী হল। মিস ডোরাকে দেখিয়ে বলল, একে-ত আপনারা চেনেন, দাদু’র ক্লাশ ফ্রেন্ড। ভার্জিনিয়ার ভার্সিটির প্রফেসার। আকাশ চৌধুরী বলল, আজকের এই আনন্দ মিলনের উৎসবে আমার শ্যালক কচ ওনি একজন ডক্টরেট। আপনাদের গীটার বাজিয়ে আনন্দ দেবার জন্য অনুরোধ করছি। কচ উঠে সকলকে নমস্কার করল। কচ আস্তে আস্তে ঘরের মধ্যে থেকে গীটারটা নিয়ে কোলের উপর রাখল। সুন্দর সুশ্রী, স্বাস্থ্যবান, গৌরববর্ণ বড় বড় ভাসা ভাসা দু’টি চোখ যেন অনাদি অনন্ত কালের কথা কয়।
কচ গীটারটায় অনেকক্ষণ পর্যন্ত সুর তুলল। একবার যেতে দে মা———আমার ছোট্ট সোনার গায়। অনেকক্ষণ পর্যন্ত গানটা বেজে বেজে থেমে গেল। সকল সম্ভ্রান্ত অতিথি বর্গ কচের প্রসংসায় পঞ্চমুখ। ও ধন্য ধন্য করতে লাগল। যে নিজের দেশের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা দেখে নিজের দেশকে কত ভালবাসে। একবার যেতে দে মা আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়। রাত তখন অনেক হতে চলছিল। খান খাওয়ার জন্য সকলকে আমন্ত্রণ জানানো হল। সকলেই মুখরোচক খানা খেয়ে খুশী হল। অনেক গাল-গল্প চলল। বাংলাদেশের ইদানিং ভয়াবহ বন্য নিয়ে আলোচনা চলল। বছর বছর বন্যায় বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অনাহারে-অনিদ্রায়-নিরক্ষরতায় বাংলাদেশের মানুষ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিলে তিলে নিষ্পেষিত হচ্ছে। এর কোন প্রতিকার নেই। অগনিত মানুষ তার রোগে চিকিৎসা পাচ্ছেনা। শীতের কাপড় নেই, বাচ্চার মুখে দুধ নেই। এসব নিয়ে সব বাঙ্গালীরা ভীষণ দুঃখিত, ব্যাথিত, চিন্তিত হয়ে যার যার ঘর অভিমুখে রওয়ানা হল।

(চলবে———-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।