সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-১৯৪

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : আমি ডাক্তারের কাছে আমাদের যাওয়ার জন্য ওদের নিতে অনুমতি চাইলাম। ডাক্তার কচকে ছুটি দিল, কিন্তু দোলার জন্য আরও দু’দিন সময় নিল। ওর ইনজেকশনের কোর্স শেষ হতে আরও দু’দিন লাগবে। আমি বললাম, দু’জনে একদিনে গেলেই ভাল হবে। ডাক্তার বলল ধন্যবাদ। আমি আবার মোটেলে এসে দোলা-কচের পাওয়া ও সুস্থ্য থাকার সংবাদ দিলাম। ডোরা কুসুমের মুখে একটু হাঁসির রেখা ঝিলিক মারল। হাসপাতালে গিয়ে দেখলাম সুশান্ত এখন অনেকটা সুস্থ্য হয়ে উঠে বসে উমার সাথে গল্প করে চলছে।
ক্যামেলিয়াও সুস্থ্য হয়ে দেবপ্রিয়র সাথে অনর্থক গল্প করে বেড়াচ্ছে। এখন পর্যন্ত কারো কাছে কারো কথা বলিনি। দিন আসবে, সময় হলে সব কথা বলে প্রসংশা কুড়াবার সময় এখন আসেনি মনে হল। তবু এক বার সকলকে ঘুরে দেখে গেলাম। মনে মনে কিছুটা শান্তি পেলাম। ভগবানই মানুষকে বিপদে ফেলেন। আবার তিনিই উদ্ধার করেন। দু’টো দিন আমি আর সমুদ্রের পাড়ে যাইনি। সমুদ্রকে দেখার সাধ কেন জানি চিরতরে আমার মিটে গেছে। মোটেলে বসে বা এদিক ওদিক ঘুরে কাটালাম। দু’দিন পর আবার সেই গ্রামের মধ্যে মায়ামির সমুদ্রের দূর দূরান্তের হাসপাতাল থেকে দোলা কচকে রিলিজ করে নিয়ে এলাম। হাসপাতালের নামটা আমার মনে নেই, তবে মায়ামি সমুদ্রের পার, আটলান্টিক মহাসাগরের বিক্ষুব্ধ গর্জন হিং¯্র পশুর মত এসে আমার কর্ণ কুহরে প্রবেশ করে। আমি দু-একদিনের ভিতর সুশান্তকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে এলাম। ক্যামেলিয়াও। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেল। আমরা সকলে আবার সুস্থ্য মনে সুস্থ্য হয়ে ভার্জিনিয়ার পথে পাড়ি জমালাম। ক্যামেলিয়াও ওখান থেকে আমাদের সাথে আসতে চাইল ভার্জিনিয়া। কিন্তু দেবপ্রিয় বলল, আমরা এখান থেকে কলকাতায় ফ্লাই করব। আর কোথায় যাবনা, সেখানে থেকে বম্বে। আমরা দেবপ্রিয়কে বার বার অনুরোধ করলাম। ভার্জিনিয়া কিংবা মন্ট্রিল একবার দর্শণ দেবার জন্য।
এরপর আমরা আবার কচ দোলা কুসুম আকাশ ওরা ওদের গাড়ীতে চড়ল। আমি, সুশান্ত, ডোরা উমা আমাদের গাড়ীতে উঠে গাড়ী স্টার্ট দিলাম। পথে আসতে আসেত সেদিন সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার গল্প করতে করতে ভার্জিনিয়ায় এসে থাকলাম। ভার্জিনিয়াকে কেন কাজিন ভালো লাগল। কদিন পরে ঘুমালাম। সুশান্তও ক’দিন বিশ্রামে থাকল। ডোরা তার ভার্সিটির চাকুরীতে যোগদান করল। কচ দোলা এখন অনেক সুস্থ্য হয়ে আবার দু’জনে ভার্জিনিয়ার প্রসিদ্ধ জায়গাগুলি দর্শণ করে বেড়াচ্ছে। ওদের নতুন জীবন যৌবন ঐ সামান্য হিং¯্র পশুর আক্রমণে ব্যথার চেয়ে ভয়ই পেয়েছিল বেশী আবার তাছাড়া বিদেশে বিভুঁয়ে দেখলে মনে হয়না ওরা কোন দুর্ঘটনায় পড়েছিল। অল্প বয়সে অনেক বড় বড় ধাক্তাও সামলে নিতে পারে।
সুশান্ত টরেন্টোয় ফিরে আসার জন্য, আমি মন্ট্রিলে ফিরে আসার জন্য উদগ্রীব প্রকাশ করলাম। কুসুম এসে ওদের বাড়ীতে নিমন্ত্রণ করে গেল। সেদিন রবিবার ছিল, আকাশ চৌধুরীর যত বন্ধু-বান্ধব ছিল, পরিচিত ছিল, এমনকি ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটি কয়েকজন নাম করা প্রফেসারও ছিল। আমরা অনেক আগেই তৈরী হয়ে ছিলাম। ডোরা ভার্সিটি থেকে আসতে দেরী হয়ে গেল। ডোরা হাত-মুখ ধুয়ে কাপড় চেঞ্জ করে আমাদেও নিয়ে আকাশ চৌধুরীর বাড়ীতে উপস্থিত হল। উমা সুন্দর একটা কাঁচা হলুদ রংয়ের একখানা ঢাকাই জামদানী পড়েছিল। ডোরা মেঘবরণ তাঁতের শাড়ী লাল পাড় পড়ে গিয়েছিল। তাতে বাংলাদেশের ঐতিহ্য প্রকাশ পাচ্ছিল। দু’জনের খোঁপায় গোলাপের কলির মালা জড়ানো কোন গহনার বালাই নাই। দু’হাতে কাঁচের চুরী। অন্যান্য মেহমান যারা ইন্ডিয়ান এসেছিলেন সকলেই নিজ নিজ দোশের কৃষ্টি কালচার বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছে।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।