ভোলার পশ্চিম কানাইনগর গ্রাম, ঘর-বাড়ি আছে, নেই চলার পথ

শিমুল চৌধুরী : পাকা দোতলা বাড়ি, আধা পাকা ঘরসহ অন্তত: ১৫টি ঘর রয়েছে। সেখানে প্রায় ২০টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। আছে ঘরে বসবাসের জন্য নানা রকম সুবিধা। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি ঘর-বাড়ি নির্মানের অপেক্ষাধীন। কিন্তু ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে কোথাও যাওয়ার রাস্তা নেই। খানিক দূরের মূল সড়কে যেতে হয় অন্যের পুকুরের পাড় দিয়ে।
এমন অবস্থা ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কানাইনগর গ্রামের। ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে গত প্রায় তিন বছর আগে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে একটি লিখিত আবেদন করলেও চেয়ারম্যান কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন ভূক্তভোগীরা। তারা গত বৃহস্পতিবার ভোলার পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদন করেন। পুলিশ সুপার সেই আবেদন ভোলা সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করলে থানার একজন এস, আই মো: কবির হোসেন শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পশ্চিম কানাইনগর গ্রামের এছহাক মৌলভী বাড়ির মো: লোকমান ফরহাদসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেন। আবেদনপত্রে ভুক্তভোগীরা জানান, ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কানাইনগর গ্রামের এছহাক মৌলভী বাড়িসহ এর আশপাশে প্রায় ২০টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। মাত্র ২৫ ফুট রাস্তার জায়গার জন্য আমরা ঘর থেকে কোথাও বের হতে পারছিনা। ওই জায়গাটি রুহুল আমিন কানুনগো নামের এক ব্যক্তির। রাস্তা তৈরি করার সময় তিনি জীবিত ছিলেন। তার কথাতেই আমরা আমাদের জায়গার রাস্তা তৈরি করে আসছি। তখন তিনি টাকার বিনিময়ে সামনের ২৫ ফুট জায়গা রাস্তার জন্য দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ রুহুল আমিন কানুনগো মারা যান। পরে তার পরিবারের সদস্যরা সেই জায়গা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে ওই বাড়ির কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের নিয়ে প্রধান সড়কে উঠতে মারাত্মক বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া শুধুমাত্র ২৫ ফুট রাস্তা না থাকায় বাড়ির যুবতী মেয়েদের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। এমনকি বাড়ির কেউ মারা গেলে সেই মৃত মানুষের বহনকারী খাট বহন করাও সম্ভব হচ্ছে না।
ওই বাড়ির বাসিন্দা প্রকৌশলী শিপলু মেহেদী, রফিকুল ইসলাম ও মো: হাছানসহ বাসিন্দারা বলেন, বাড়ি থেকে মূল সড়কে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। ফলে ওই বাড়িতে বসবাসকারী মানুষ পাশের বাড়ির পুকুর পাড় দিয়ে যাতায়াত করছেন। সেখান দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অনেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। আবার অনেক সময় জমির মালিক তাদের চলাচলে বাধা দেন ও গালমন্দ করেন। ফলে বাড়ির বাসিন্দারা তাদের চলাচলে বিড়ম্বনা, দুর্ভোগ ও চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পশ্চিম কানাইনগর গ্রামের এছহাক মৌলভী বাড়ি ও এর আশপাশে বেশ কয়েকটি ঘর রয়েছে। ওই সব ঘরে বহু পরিবার বসবাস করছেন। তারা পাশের একটি পুকুর পাড় দিয়ে মূল সড়কে এসে ভোলা সদরে যাতায়াত করছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজল হক বলেন, ওই বাড়ির মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরির লক্ষে ইউপি চেয়ারম্যানসহ আমরা বসে সিমানা নির্ধারণ করে পিলারও স্থাপন করেছি। কিন্তু যার জায়গা সে রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়তে চাচ্ছেনা। আবার ক্ষতিপূরণও নিতে চাচ্ছেনা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এস, আই কবির ভোলার বাণী কে বলেন, আমি শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত কাজ শুরু করেছি। কিন্তু ওই বাড়ি-ঘরের পথের মূল জমির মালিক দেশের বাইরে রয়েছে। তবে, তার চাচাতো ভাইরা রয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলে চলাচলের পথের ব্যবস্থা করবো।
এ বিষয়ে ধনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ এমদাদ হোসেন কবির গতকাল শনিবার সকালে ভোলার বাণী কে বলেন, আমি শনিবার বিকেলে জমির মালিক ও বাড়ির লেকজনকে আসতে বলেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে রাস্তার ব্যবস্থা করা হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।