মধ্যরাত : পর্ব-২৫৬

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : দোলারও কপাল ভাল। মা-বাবা, ভাই-বোন রেখে এখানে আমার স্নেহ আদর অধিকন্ত সুশান্ত ও উমার অবাধ স্নেহ উজার করা ভালবাসা পেয়েছে। সুশান্ত আমাদের কাছে থেকে হারিয়ে গেল। থাকল আমার বাড়ীতে স্বইচ্ছায় উমা, আমাকে আমার নাতনী দোলা-কচ। সকলকে আপনার সন্তান তুল্য ভালবাসায় মায়ায় জড়িয়ে দিয়ে  স্নেহ জানাল। আপন দিল খোলা উদারতা উজারতা নিয়ে এটা উমার একটা মহৎ গুন বলতে হবে। দোলা আসছে ? আমার কোন চিন্তা নেই, সবই ওই উমা। আমি সেই পূর্বের মত ভার্সিটির বন্ধু-বান্ধব, কমন রুম আর বাড়ী আর ঘুম না এসে ড্রইং রুমের বড় ঘড়িটার ঢং ঢং ১২টা ঘণ্টা, রাত ৩টার ঘণ্টা, গুনে গুনে মধ্য রাতের প্রহর গুনব। মনে মনে একটু হাসলাম, ভগবান বুঝি অভাগাদের জন্য এমনি করেই মিলিয়ে দেন।
অনেকক্ষণ ধরে মাছের কাটা বেছে বেছে চিন্তার রাজ্যে আমি অবস্থান করছিলাম। উমা কাছে এসে বলল, দাদা আপনি কি এত ভাবছেন, ভাত-ত খাচ্ছেন না, খালি মাছ নিয়ে নাড়া চাড়া করছেন। কি এত ভাবছেন দোলা আসছে, ভগবান সহায়। আর আমি-ত আছি, কোন ভাবনা করার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি আবার এসব ভেবে ভেবে প্রেসারটা বাড়াবেন না। তাহলে কিন্তু আমি খুব মুস্কিলে পরব। উমার তাড়া খেয়ে চিন্তার জ্বলে আমার ছিন্ন হয়ে গেল। ভাবলাম, তাও একটা মনুষ আছে, যে অহরহ আমাকে লক্ষ রাখে। আমার বিপদ আপদের কথা চিন্তা করে। ছোটবোন যেমন বড় ভাইকে শ্রদ্ধা করে, আবার ভালবাসে। ঠিক উমা আমাকে সম্মান দেখায় আবার শ্রদ্ধায় শাসন করে। এ আমার একটা বড় সৌভাগ্য। আমি তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে মুখে একটা মৃদু হাঁসির ভাব নিয়ে কেটে পরলাম।
উমা ডাইনিং টেবিলের পর থেকে মাছের বাটি, কাটা কুটি যা ছিল সরিয়ে নিল। সেখানকার কাজ-কর্ম শেষ করে নিজের ঘরে ঢুকল। ওর পুজো বা আহ্নিক করে, একাদশী উপবাস পালন করে, বিধবা হওয়ার পর থেকে, একদিকে আমার যত্ন, আবার ওর আতপ চালের ভাত নিরামিষ তাও একবেলা খায়, রাত্রে দুধ ফল খায়। আমার মাঝে মধ্যে উপবাস করে। একটি অল্প বয়সের মেয়ে একটি সন্তান নেই, যে তাকে আকড়ে ধরে বাঁচবার আশা করবে। তবুও-ত উমা বেঁচে আছে। ও বোধ হয় আমাদের জন বেঁচে আছে, দোলা-কচ, ওদের খুব স্নেহ করে। দোলার বাচ্চা হবে সে ওর এক বড় স্বপ্ন।
আমি শুয়ে শুয়ে থন বার্ডটা পড়ছিলাম, ও দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলল- দাদা ঘরে একটা ভালো চাদরও নেই যে দোলার বিছানায় পেতে দেব। আমি বললাম, আচ্ছা কাল নিয়ে আসব। ও দরজার আড়াল থেকে চলে গেল। আমি আবার পড়ায় মননিবেশ করলাম। ঘরে অনেক ঝুল হয়েছিল, ও গুলু পরিস্কার করছিল। বালিশে ধোয়া ওষার ভরে দিল। লেপটা ভাল করে ঝেড়ে ঝুড়ে একটা ভাজ করে রোদে একটা চেয়ারের পর রাখল। একটা ছেড়া চাদও দিয়ে বিছানাটা ঢেকে দিল। আমি শুয়ে শুয়ে বই হাতে থাকলেও উমার গতিবিধির উপর আমার সজাগ দৃষ্টি থাকে। ওর যত্নে আদরে শ্রদ্ধায় আমি পরিপুষ্ট হচ্ছি। কিন্তু আমার, উমার চলাফেরা, কাজ-কর্মের উপর গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে।

(চলবে——)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।