সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-২৫৭

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : তখন সন্ধ্যা হয়ে আসছিল, গোলাপের ঝড়গুলু শীত ও বরফ আসি করাতে কেমন ম্লান হয়ে নেতিয়ে গেছে। অথচ সামারে প্রকান্ড প্রকান্ড বড় বড় রক্তলাল গোলাপে ভরে যেত। জগতে কিচুই চিরস্থায়ী নয়, আজ আছে; কাল নেই। উদার উন্মুক্ত নীল আকাশে শুক্র পক্ষের বড় চাঁদটা উকি দিচ্ছে। আমি বইটা রেখে একটু কিচেনে গেলাম। দেখলাম, একটা ভান্ডে কতগুলু আলোচাল জলে ভেজানো। ভাবলাম কে জানে উমার কি কাজে লাগবে। উমাকে দেখলাম ওর ঘর-দোর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করছে, এক মূহুর্তেও উমা বিনা কাজে থাকে না। এটা-ওটা, সেটা একটা না একটা কাজ তার হাতে থাকেই, না থাকলেও তৈরী করে নেয়।
আমার ঘরে ফোন বাজার শব্দ পেলাম। ফোন ধললাম, হ্যাঁলো দাদু তুমি কেমন আছো ? দোলা বলছি, বললাম, ভালো কখন এসে পৌঁছাচ্ছ ? দাদু কাল বিকেলে। বললাম, আচ্ছা, তোমরা ভাল-ত ? হ্যাঁ দাদু, ফোন ছেড়ে দিলাম। মনে মনে ভাবলাম, কখন কয়টায় বিকেল পর্যন্ত এসে পৌছাবে, তা-ত জিজ্ঞাসা করলাম না। উমাকে ডাকলাম, উমা উমা স্বশরীরে এসে হাজির, দাদা ডাকছেন ? শোন দোলা এখনই ফোন করেছিল, ওরা বিকেল কখন পৌছাবে, কোন এয়ারপোর্ট জান ? উমা বলল মিরাবেল এয়ারপোর্টে বিকাল ৫টায় এসে পৌছাবে। বাব্বাঃ বাঁচলাম ঘামদিল। কি বিপদ খালি দাদু দাদু করলেই হল, বলবে-ত। কখন, কয়টায়, কোন এয়ারপোর্টে। ভাগ্যিস উমা দোলার কাছ থেকে সব জেনে রেখেছিল।
সেদিন আকাশে খুব মেঘ করেছিল। খবরে বলা হয়েছে রাতে বরফ পরবে। ভীষণ কনকনে ঠান্ডা হাত-পা যেন ঝিম ধরে যাচ্ছে। ফায়ার প্রেসটায় আমি কাঠ দিয়ে আগুন দিলাম। তাতে শরীরটা একটু গরম লাগছিল। কিন্তু ঠান্ডা ভাবটা যেন কমছেনা, বাথরুমে গিয়ে স্নান করার কথা কিছুতেই মনে আসছেনা। দু-তিনটা সোয়েটার চড়িয়েও যেন শরীরের কাঁপা-কাঁপা ভাব কমছে না। তবু আগুনের কাছে অনেকক্ষণ বসে থেকে শরীরটা গরম করে নিলাম। উমা ব্লাইন্ডারে আতপ চালের গুড়ো তৈরী করছে। এই ব্লাইন্ডারগুলি এত বিশ্রি আওয়াজ তুলে আমার বড় বিরক্ত লাগে। তবু সংসারে নানা প্রয়োজন ওটাকে ব্যবহার করতে হয়। নিষেধও করতে পারি না। উমা কি পিঠা বানাবে জিজ্ঞাসা করিনি, ও এমন মুখ ভার করে থাকে, মাঝে মাঝে কথা বলতেও সাহস হয় না। আগে উমা কত উচ্ছল ঝরণারমত চিল, আর এখন যেন কোন বর্ষিয়সী মহিলা। সুশান্ত এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার পর ও বদলে গেছে। উমাকে সে জন্য আমি দোষ দেইনা।
বুক শেলফটাকে একটু ঝেড়ে মুছে, বইগুলু সাজাবার চেষ্টা করলাম। দোলা এসেইত বলবে দাদু, বইগুলুকে হতছারার মত রেখেছ ? যেন ওর কেহ আপনজন নেই, বই রাখলেই হয় না, বই না পড়লে বইর যতœ করতে জানে না বইকে ভালবাসতে জানে না। দোলার ঐ গুনটা ছিল বই পড়ত বইর কদর বুঝতে। বইর মূল্যবান কথাগুলি আমার সাথে আলোচনা করত। মাঝে মাঝে ওর প্রশ্নের প্রশ্ন শুনে আমি হিমশিম খেতাম। মেয়েটা অনেক পড়াশুনো করে, অনেক কিছু বোঝে ও জানে। উমা আমাকে খেয়ে যেতে বলল, ওর নামি অনেক কাজ আছে। কাজ আবার কি, পিঠে বানাবে। তবুওত উমার স্নেহ-কাঙ্গাল মনটা সকলেরে আদর স্নেহ ভালবাসা দিয়ে ভরে রাখতে চায়। এত ভালবাসা ওর কোথায় ছিল ? হেমন্তকে আদর করে, দোলাকে ভালবাসে, কচকে স্নেহ করে। আমাকে ভালবাসে স্নেহের শাসনও করে। অথচ কারো কাছে এতটুকু প্রতিদানের আশা রাখে না। আশ্চর্য্য মহিমান্ডিত ওর কার্য প্রণালী। এ বাড়ীটাকে ও ভালবাসে। বাড়ীর লোকগুলোকে আদর যত্নে মায়া মমতা দিয়ে সকলকে আপন হতে আপন তর করে নিয়েছে। দোলা উমাদি বলতে অজ্ঞান। হেমন্ত মসিমা বলতে ব্যাকুল, আমি উমা ছাড়া এখন কিছুই বুঝিনা। ছোট অবুঝ শিশু যেমন একজনের উপর নির্ভরশীল হয় আমিও তেমনি। উমা যা দেয়, তাই খেয়ে চেলে যাই, ওমা যা বলে তাই শুনি। কোন অজানা শক্তি আমাকে স্নেহের  প্রবল আকর্ষণে চালিয়ে নিয়ে যায়।

(চলবে———)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।