সর্বশেষঃ

নানা সমস্যায় জর্জরিত লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

স্টাফ রিপোর্টার, লালমোহন ॥ ভোলার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে রয়েছে বহু সংকট। যার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসকের অভাব। এছাড়া এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনও দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে পড়ে আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার হলেও এখানে কখনো কখনো ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় শতাধিক। তবে গড়ে ভর্তি থাকেন ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী। প্রতিদিন লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ থেকে পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ রোগী সেবা নিচ্ছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা এসব রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। তবুও আন্তরিকতার সঙ্গেই তারা সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের চেষ্টা করছেন।
সূত্রে জানা গেছে, লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কনসালটেন্ট পদ রয়েছে ১০টি। যার মধ্যে ৮টিই শূন্য। বর্তমানে শিশু-নবজাতক ও অর্থোপেডিক্সের দুইজন কনসালটেন্ট রয়েছেন। নেই মেডিসিন, কার্ডিওলজি, চর্ম-যৌন, সার্জারি, গাইনী, অ্যানেসথেসিয়া, চক্ষু এবং ইএনটি কনসালটেন্ট। এছাড়া মেডিকেল অফিসারের ১৫টি পদের মধ্যে আছেন ৮ জন। ডেন্টাল সার্জনের পদটিও শূন্য লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এক্স-রে এবং আল্ট্রাসনোগ্রামের মেশিন থাকলেও তা বছরের পর বছর ধরে অচল হয়ে পড়ে আছে। যার মূল কারণ সনোলজিস্ট ও রেডিওলজিস্টের সংকট।

* কনসালটেন্ট পদ ১০টির মধ্যে ৮টিই শূন্য।
* অপারেশন থিয়েটার থাকলেও তা বন্ধ।
* এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন অচল।

৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সুসজ্জিত একটি অপারেশন থিয়েটার থাকলেও তা বন্ধ রয়েছে লোকবলের অভাবে। এছাড়া সিনিয়র স্টাফ নার্সের ৩০টি পদ থাকলেও এখানে কর্তব্যরত আছেন ২১ জন।
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা মো. ইমরান, জসিম উদ্দিন এবং তাসলিমা বেগম বলেন, এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। তবে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসব পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। যদি এখানে এসব পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতো তাহলে আমাদের অর্থ ব্যয়ও অনেক কম হতো। এখন বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে বাইরের বেসরকারি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসব পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে এবং আল্ট্রাসনোগ্রাম চালুর দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় মো. জহির, সিহাব উদ্দিন ও বিউটি আকতার জানান, লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারে তালা ঝুলছে। যার জন্য এখানে সব ধরনের অপারেশন বন্ধ। অথচ হাজার হাজার টাকা খরচ করে বাইরের বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় অপারেশনসহ প্রসূতিদের সিজার করাতে হচ্ছে। এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষই নিম্ন আয়ের। অতিরিক্ত অর্থ খরচ মানে রোগী ও তাদের স্বজনদের ধারদেনায় জড়িয়ে যাওয়া। এ জন্য শিগগিরই লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারটি চালুর দাবি জানাচ্ছি।
ইকবাল হোসেন এবং জাহানারা বেগম নামে আরো কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, অনেকেরই প্রায় সময় চোখ, নাক-কান-গলা, চর্ম-যৌন, হার্ট এবং দাঁতে সমস্যা দেখা দেয়। তবে এসব সমস্যা নিয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে সঠিক চিকিৎসা মিলছে না। কারণ এখানে এসব রোগের বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক নেই। যার জন্য দূর-দূরান্তে অথবা বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে গিয়ে এসব রোগের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। যা স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য খুবই কষ্টের। এ জন্য আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসব রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়নের অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. তৈয়বুর রহমান জানান, আমাদের অনেক সংকট রয়েছে তা সত্য। তবুও আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সামর্থ্য অনুযায়ী রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেসব সংকট রয়েছে তা সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বহুবার অবগত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে এসব সংকটের সমাধান হয়ে যাবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।