ফসল রক্ষায় লালমোহনে এক পায়ের অতন্দ্র প্রহরী কাকতাড়ুয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোলার লালমোহন উপজেলায় কৃষকের ফসল রক্ষায় অতন্দ্রপ্রহরীর মতো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে কাকতাড়ুয়া। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এটি সনাতন পদ্ধতি। এই কাকতুড়া মূলত ক্ষেতের ফসল পাখি, ইঁদুর ও মানুষের কু-নজর থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পাখি ও ইঁদুর এই কাকতাড়ুয়াকে মানুষ ভেবে ভয়ে ক্ষেতের কাছে যায় না। সেই ভাবনা থেকেই নিজের ক্ষেতের ফসল রক্ষায় এমন কৌশল ব্যবহার করেছেন লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের চর ছকিনা এলাকার চাষি মো. বাবুল। তিনি তার গম ক্ষেতে দাঁড় করিয়েছেন কাকতাড়ুয়া। কেবল কৃষক বাবুলই নয়, উপজেলার অনেক কৃষক তাদের নানা ধরনের ফসলের ক্ষেতে ব্যবহার করছেন কাকতাড়ুয়া।
কৃষক বাবুল বলেন, এ বছর ৩২ শতাংশ জমিতে গম চাষ করেছি। এ ক্ষেতে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করে ইঁদুর ও পাখি। এসবের থেকে ফসল রক্ষা করতেই ক্ষেতে মূলত এই কাকতাড়ুয়া দাঁড় করিয়েছি। এতে করে ইঁদুর ও পাখির আক্রমণ থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা মেলে। তিনি আরো বলেন, ৩২ শতাংশ জমিতে গম চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকার মতো। ক্ষেতে ফলন অনেক ভালো রয়েছে। আশা করছি এই জমিতে অন্তত ১৬ মণ গম হবে। যা বাজারে প্রতি মণ ১৮শত থেকে দুই হাজার টাকা ধরে বিক্রি করতে পারবো। আবহাওয়া ঠিক থাকলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষেতের সব ফসল ঘরে তুলতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
জানা গেছে, আদিকাল কাল থেকে গ্রামাঞ্জলের কৃষকরা পাখি ও ইঁদুর এমনকি মানুষের কু-নজর থেকে রক্ষার কৌশল হিসেবে অদ্ভুত ও অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করে ক্ষেতের ফসল রক্ষার্থে মানুষের আকৃতি সদৃশ্য কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করছেন। যা দন্ডায়মান একটি খুঁটিতে দুই-তিন ফুট উপরে আড়াআড়ি আরেকটি খুঁটি বেঁধে তাতে খড় প্যাঁচিয়ে মোটাসোটা করেন। এরপর ওই অংশের ওপরে খড়কুটো দিয়ে মাথার মতো বস্তু বানানো হয়। যেখানে পুরনো ছেঁড়া জামা বা পাঞ্জাবি পরিয়ে দেওয়া হয়। যা দেখে ভয়ের সৃষ্টি হয়। এই কাকতাড়ুয়াকে ফসলি জমির মাঝখানে দন্ডায়মান রাখেন কৃষকরা। দূর থেকে দেখলে মনে হয় ফসলি ক্ষেতের মধ্যে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। এই কাকতাড়ুয়ার ফলে ক্ষেতে উপদ্রব কমে ইঁদুর ও পাখির।
চরছকিনা এলাকার জাহাঙ্গীর মাঝি, রতন মাঝি ও মো. জাফর নামে আরো কয়েকজন চাষি বলেন, কাকতাড়ুয়া মূলত পাখি ও ইঁদুরকে ভয় দেখানোর জন্যে জমিতে দাঁড় করানো হয়। এতে করে পাখি এবং ইঁদুর বুঝতে পারে মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। যার ফলে পাখি ও ইঁদুরের আক্রমণ থেকে ফসল কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব হয়। মূলত এই কাকতাড়ুয়া ইঁদুর ও পাখিদের জন্য একটি ভয়ের ফাঁদ।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র দাস জানান, উপজেলার বিভিন্ন কৃষক তাদের ফসল রক্ষায় কাকতাড়ুয়াকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবস্থা করছেন। কৃষকদের ধারণা তাদের ক্ষেতে কাকতাড়ুয়া দাঁড়ানো থাকলে ফসলের ক্ষতি হবে না। এমন বিশ্বাস থেকেই অনেক কৃষক তাদের ফসলি জমিতে কাকতাড়ুয়া স্থাপন করেন। তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।